ফরিদগঞ্জে হর হামেশাই চলছে সরকারী গাছ আত্মসাৎ
ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি, কামরুজ্জামান, ১৯ জুন, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : জেলার, ফরিদগঞ্জে নিজ মালিকানা দাবী করে সরকারী গাছ কর্তনের অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ১৯ জুন শনিবার উপজেলার ১০নং গোবিন্দপুর ইউনিয়নের নলডুগি গ্রামে।
শনিবার দুপরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর (দক্ষিন) ইউনিয়নের আইলের রাস্তা-রামপুর সড়কের নলডুগী মিজি বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার পূর্ব পাশ থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই সরকারী কাছ কাটা হচ্ছে। ইতিমধ্যে একটি কেটে নিয়ে গেছে অন্যগুলি কাটা হচ্ছে। ২টি রেইন ট্রী ও ১টি মেহগনি গাছ কাটাচ্ছেন আবুল বাসার নামের এক ব্যক্তি।
গত ৯ মার্চ ২০২১ইং আবুল বাসার নিজ মালিকানা সম্পত্তিতে গাছগুলি দাবী করে ঐ সম্পতিতে তিনটি গাছ কর্তণে আবেদন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর। আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা বন কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিলে, একটি চক্র কারিশমা তৈরি করে ১২ হাজার ২ শত ৬৭টি টাকা ব্যাংকে চালান ফরমের মাধ্যমে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি না নিয়ে গাছ কাটার উৎসব চলছে। গাছ কাটার স্থলে গ্রাম পুলিশের সদস্য ছলেমান মিয়াকে উপস্থিত থেকে সহযোগিতা করতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে আবেদনকারী আবুল বাসার জানায়, আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করে এবং উপজেলা বন কর্মতার কাছে থেকে অনুমতি নিয়ে ব্যাঙ্কে নির্দিষ্ট টাকা জমা দিয়ে গাছ কাটছি এতে অপরাধ কি? ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় জনৈক ভদ্রলোক এই প্রতিনিধিকে প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে বলেন, আমার জানামতে গাছ কাটার অনুমতি প্রশাসন এখনও দেয়নি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে মাত্র। তবে, বিষয়টি সমঝোতার জন্য এ ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখান উপস্থিত সাংবাদিকদের।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত গ্রাম পুলিশ সদস্য ছলেমান জানান, গাছ টেন্ডার নিয়েছে হোসেন মিয়া আর বিক্রি করেছে আবুল বাসারের নিকট। আপনি কি করছেন একানে জানতে চাইলে, জবাবে জানান দায়িত্ব পালন করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা বন কর্মকর্তা মো: কাউছার মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দরখাস্তের আলোকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দহোদয় আমাকে বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। যেহেতু স্থানীয় সরকারের রাস্তার গাছ সে জন্য আমি আবার দরখাস্তটি স্থানীয় এলজিআরডি অফিসে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রতিবেদনসহ দিয়ে আসি। টেন্ডার হয়েছে কি না আমি জানি না। টেন্ডার কমিটিতে আপনার কোন ভূমিকা আছে কি না জানতে চাইলে বলেন, আমি কমিটির সদস্য সবকিছু সম্পাদনের পর আমার স্বাক্ষর নিলেও চলবে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের ফোনে বলেন, আপনারা অযথা সময় নষ্ট না করে চুপচাপ তেলের পয়সা নিয়ে চলে আসুন।
উপজেলা প্রকৌশল অফিসের (এলজিআরডি) অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আইয়ুব খান এ বিষয়ে বলেন, আমি সন্ধ্যায় ইউএনও মহোদয়ের কাছ থেকে বিষয়টি অবগত হয়েছি। তাৎক্ষনিক আমাদের অফিসের জহিরকে ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বন কর্মকর্তা আমাদেরকে কোন চিঠি বা দরখাস্ত দেয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তাছাড়াও টেন্ডার হলে অফিস বন্ধের দিন কেন গাছ কাটছে, খোলার দিন কাটলে কি সমস্যা হতো।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আ: হান্নান জানান, আমি স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন প্রতিনিধিত্ব করছি। আমার জানার কথা থাকলেও আমাকে কেউ এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। আমি ঢাকা হতে বাড়ী ফেরার পথে আছি। শুনেছি আমার গ্রাম পুলিশের দফাদার ছলেমানও সেখানে উপস্থিত ছিল। বাড়ী ফেরার আগে বা অফিস খোলার আগে কিছুই বলতে পারছি না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি জানান, আমি বিষটি জেনে বন কর্মকর্তা, প্রকৌশল অফিস এবং সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে খোঁজ নিতে বলেছি। অনিয়ম হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম রোমান বলেন, টেন্ডার হলে আমি অবশ্যই জানতাম। তা ছাড়াও আমি বৃক্ষ নিধনের বিরুদ্ধে। আমাদের সরকার যেখানে প্রতি বছরই বৃক্ষ রোপন করে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন, সেখানে অকারণে গাছ কাটার পক্ষে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ রইলো।
উল্লেখ্য, উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বন কর্মকর্তা মো: কাউছার আহম্মেদের যোগসাজশে সরকারী গাছ কাটা ও অর্থ আত্মসাতের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। বহুবার এ নিয়ে উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভা আইন শৃঙ্খলা সভায় আলোচনা এবং ক্ষোভ প্রকাশও হয়েছে।