ফরিদগঞ্জে সন্ত্রাসীদের গুলি বর্ষণ, বসত ঘরে আগুন, ভাংচুর, গরু লুট, আহত-৬
ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি, কামরুজ্জামান, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : চাঁদপুর জেলার প্রত্তন্ত অঞ্চল রামপুর, বিশকাটালী সন্তোষপুর। আজ থেকে প্রায় দুই যুগ আগে এ এলাকায় পুলিশি কার্যক্রম চালানো খুব ভয়াবহ ছিল। দির্ঘ কয়েক বৎসর মোটামুটি স্বাভাবিক থাকার পর রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেশ কিছু সন্ত্রাসী রামপুর এলাকাটি মাদক এবং সন্ত্রাসের রাজ্য হিসাবে গড়ে তুলছে। যার সর্বশেষ পরিনতি ১০, ১১ ও ১২ নং ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা সন্তোষপুরে গুলি বর্ষন, অস্ত্রের মহড়া, অগ্নিসংযোগ করে বসত ঘর পুড়ে দেওয়া, বসতঘর ভাংচুর, প্রকাশ্যে গরু ছিনতাই।
জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা জায়গা সংক্রান্ত বিরোধে গুলি করে হত্যার চেষ্টা, একটি বসত ঘর আগুনে পুড়িয়ে ভস্মিভুত, বাড়ীর আরো ১২টি বসত ঘর ভেঙ্গে তচনছ এবং যাবার সময় ওই বাড়ির দুটি গোয়ালঘর থেকে ৭টি গরু প্রকাশ্যে নিয়ে গেছে। এই সময় সন্ত্রাসীদের বাঁধা দিতে গিয়ে এক সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা তার পরিবারের ৩ সদস্যসহ ৬ জন গুরুতর আহত হয়।
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারী) বিকালে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের ১১নং চরদু:খিয়া পুর্ব ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামের বেপারী বাড়িতে বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এ তান্ডব ও নৃশংস এই ঘটনা ঘটে। সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও কাউকে আটক করতে পারে নি।
সরেজমিন ঘটনাস্থলে গেলে বেপারী বাড়ীতে উপস্থিত আশ পাশের আনুমানিক প্রায় দুই শতাধিক লোক উপস্থিত থেকে পুলিশ ও সাংবাদিকদের নিকট ঘটনার বর্ননা দেয়। লোকজন জানায়, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ একই বাড়ির প্রবাসী লোকমান হোসেনের নিকট থেকে জমি ক্রয় করে তাতে লোকমানের পরিবারকে অস্থায়ীভাবে থাকতে দেয়। কিন্তু লোকমানের পরিবার বিক্রি করা জমি বুঝিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানালে তা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিরোধ নিরসণে স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে একাধিক শালিশী বৈঠক হলেও তা নিষ্পত্তি হয় নি। সর্বশেষ গত ২২ ফেব্রুয়ারী সোববার লোকমানের পক্ষে অস্ত্রধারী একদল ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হঠাৎ করেই ওই বাড়িতে হামলা করে।
ব্যাকং কর্মকর্তা নুরু মোহাম্মদ এর মেয়ে শাহানাজ আক্তার লিজা জানান, যুবলীগ নেতা এমরান হোসেন ভূইয়ার নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক সন্ত্রাসী তাদের বাড়িতে হামলা করে। এমরান আমার ভাই গিয়াস উদ্দিনকে মারতে গুলি করে কিন্তু আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী আমার ভাই রক্ষা পায়। আমার বাবার বসত ঘরটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। তাদের বাঁধা দিতে গেলে বাবা ও তিন ভাই গিয়াস উদ্দিন (৩৫), প্রতিবন্ধী জুয়েল (২০) এবং সিহাব (২৪) কে কুপিয়ে আহত করে।
এছাড়াও বাড়ির শাহজাহান মাষ্টার, মোক্তার আহমেদ, তোফায়েল, আলী হোসেন, আলমগীর, অলিউল্যা, মো: সেলিম, তাজুল ইসলাম, নেছার আহাম্মদ, হুমায়ুন ও জহিরেরসহ ১২টি বসত ঘর কুপিয়ে ও ভেঙ্গে তচনছ করে ফেলে। নুর মোহাম্মদের গোয়াল ঘর থেকে ৬টি গরু এবং ওই বাড়ির নেছার আহাম্মদের ১টি গরু ৬দিনের বাছুর রেখে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। হামলা চলাকালে শাহজাহান মাষ্টার (৫২) এমরান ভূঁইয়া নামে আরো দুইজন আহত হয়।
স্থানীয় লোকজন জানায়, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ এর কাছে এলাকার মানুষের ৫শতাধিক জমির দলির গচ্ছিত ছিল। তার ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ফলে সমস্ত দলির পুড়ে গেছে। নগদ প্রায় ৫লক্ষ টাকাসহ অন্তত ১০ লক্ষাধিক টাকার সম্পদ ভষ্মীভূত হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা জানায়, ঘটনার ব্যাপারে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে গুলি বর্ষণ ও সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে তান্ডব চালানোর ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাও. ইকরাম হোসেন হামিদ জানান, এটি কোন মতেই মেনে নেয়া যায় না। হামলা ও লুটতরাজ কারীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এমরান হোসেন এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে, একাধিকবার জেলও খেটেছে।
এব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসেন জানান, ঘটনা শুনে ফোর্স নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছি। তবে কাউকে আটক করতে পারি নি।