ফরিদগঞ্জে উম্মুক্ত জলাশয়ের দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত প্রায়
ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি, কামরুজ্জামান, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : চাঁদপুরের মেঘনা নদীর সাথে সম্পর্কীত শাখা নদী ফরিদগঞ্জের ডাকাতিয়া ও বিভিন্ন খাল-বিলে এখন আর দেশীয় প্রজাতির মাছ খুব একটা পাওয়া যায় না। সার বছরই বিভিন্ন ধরনের বাঁধ তেলী করে বা জাল দিয়ে মাছ শিকারের ফলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস হয়ে স্থানীয় বাজারগুলোতে মাছের আকাল দেখা দিচ্ছে। মুলতঃ বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে ছোট ছোট মাছের পোনাগুলি ধরার কারনেই মাছ বাড়তে পারে না এবং বংশ বিস্তার করতে পারে না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বর্ষার এই মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন খালে, বিলে মাছ শূন্য প্রায়। ফলে বাজারে মিলছে না বোয়াল, মাগুর, শিং, কই, ট্যাংরা, শোল, টাকি, পুঁটি, গজার, চাপিলা, খৈলশা, পাবদা, আইড়, চিংড়ি, মলা, বাইন, বেলেসহ কোন ধরনের মাছ। বিলুপ্তির পথে এসব প্রজাতির মাছ। উম্মোক্ত জলাশয়ের মিঠা পানির উল্লেখিত মাছ গুলি এখন উপজেলা বাসীর নিকট শুধুই আকাঙ্খা মাত্র।
স্থানীয় একাধিক জেলে ও সাধারন মানুস জানান, নিষিদ্ধ জালের অবাধ ব্যবহার এবং কৃষি জমিতে সার, কীটনাশকের অতি মাত্রায় ব্যবহারে ফলে মাছ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। এ ছাড়াও প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মা মাছের পোনা নিধন হচ্ছে বেশি।তারা আরো বলেন, শুষ্ক মৌসুমেও মাছ ধরার প্রবণতা বেড়ে যায়। বিশেষ করে খার এবয় বিলগুলি সেচে সমস্ত পাছের পোনা ও রেনু নষ্ট করার ফলে মাছের উৎপাদন কমছে। আরো একটি বিশেষ কারন হলো, আবাদী জমি বা বিল ভরাট করে বসতি স্থাপনের কারনে উম্মোক্ত জলাশয় কমছে, এত মাছের বিচরন ক্ষেত্রও কমছে। এরকম বিবিধ কারনে মাছের প্রজনন বেড়ে উঠা এবং উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।
সরে জমিনে ঘুরে দেখা যায়, বেশীর ভাগ নদী ও খালে প্রচুর পরিমানে বেয়াল জাল পাতা রয়েছে। যা বছরের পর বছর একই অবস্থানে রয়েছে। বর্ষা কিংবা শুষ্ক কোন মৌসুমেই সরানো হয় না এমন কি পানি থেকে তা তুলৌ রাখা হয় না, যাতে মাছেরা অবাধে চলাচল করতে পারে। বেয়াল মালিকরা দিনে এক বা একাধিকবার তা উঠিয়ে তা থেকে সকল ধরনের মাছগুলি মংগ্রহ করে নেন। যা মিঠা পানির মাছ বেড়ে উঠা বা প্রজননের একটি বড় অন্তরায়।
হাট-বাজারগুলোতে চাষকৃত কার্প জাতীয় রুই, কাতলা, পাঙাশ, আফ্রিকান মাগুর, হাইব্রিড শিং, মাগুর, থাই পঁটি, কই, ও তেলাপিয়াসহ নানা ধরনের মাছ বিক্রি হচ্ছে। ভাগ্যক্রমে উম্মোক্ত জলাশয়ের কিছু মাছ বাজারে পাওয়া গেলৌ চড়া দাম দিয়ে কিনতে হয়। প্রতি কেজি ট্যাংরা, পুঁটিসহ অন্যান্য মাছ ৪০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
দু একবার হলেও প্রশাষন কর্তৃক বেয়াল দিয়ে বা সবসময় বেয়াল জাল খালে পেতে না রাখার জন্য জাল মালিকদের নিষেধ অথবা জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু এতেও বিপত্তি বেয়াল মালিকদের, অনেকেরই আকুতি, আমরা একমাত্র পেশা হিসেবে মাছ ধরাকে বেছে নিয়েছি কিন্তু আমাদের জন্য বিকল্প কোন সংস্থান না করে বাধা বা জরিমানা করলে আমাদের সংসার চলবে কেমনে?
ফরিদগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা আকতার রুমা বলেন, ইতিমধ্যে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। মৎস্য প্রজননেন জন্য ক্ষতিকারক বেয়াল (ভেসাল) জালসহ নিষিদ্ধ জালের বিষয়ে দ্রæত সময়ের মধ্যে ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অর্থনৈতিক মৎস্য সম্পদ রক্ষারস্বার্থে সরকারের নির্দেশ বাস্তবায়নে আমাদের যা করা প্রয়োজন তাই করবো।