প্রয়োজন সাদা মনের মানুষ
সম্পাদকীয়, ২৫ শে মার্চ ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) :
——————————————————————–
এম নজরুল ইসলাম
———————-
অসহায় মানুষের প্রতি সমাজের সামর্থ্যবান ও বিত্তশালীদের সাহায্য ও সহানুভূতির হাত সমাপ্রসারিত করা প্রয়োজন। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্যে। নিঃস্বার্থভাবে বিপদগ্রস্ত ও ক্ষুধার্থ মানুষের সাহায্য ও সেবা করাই মানবধর্ম। এ মহৎ ও পূণ্যময় কাজই সর্বোত্তম ইবাদত। কিছু সাদা মনের মানুষ আছেন, যারা মানবসেবার কাজের মধ্যদিয়ে নেশার মত ছুটে বেড়ান অসহায় মানুষের খোঁজে। বিপদগ্রস্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আর্থিক সহযোগীতা, অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা সেবা দ্বায়িত্ব নেয়া, ছিন্নমূল পথশিশুদের বস্ত্র প্রদান, সু-শিক্ষার ব্যবস্থা, খাবার বিতরণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মীও প্রতিষ্ঠানে অনুদান, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান করে দেয়াসহ সবখানে সাদা মনের মানুষের আকাল আর আগেরমত নেই।
দীর্ঘদিন ধরেই হতাশাগ্রস্থ মানুষের পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগীতা করছেন, বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার হাটধুমা গ্রামের সাবেক পোষ্ট মাষ্টার আলহাজ্ব এসএম ইজ্জত উল্লাহ’র ছেলে এ্যাডভোকেট রাফী পান্না, কাহালু উপজেলার শিতলাই গ্রামের সাবেক প্রধান শিক্ষক মরহুম এ কে এম আমীর আলীর ছেলে অধ্যাপক এএনএম আহছানুল হক, নাটোরের বাগাতিপাড়ার খোরলাজ মহল্যার এ্যাডভোকেট সোহেল রানা, নন্দীগ্রাম কলেজপাড়ার আনোয়ার হোসেন রানা এলএলবি, পুরান বাজার হিন্দুপাড়ার কামরুজ্জামান কামরুল, নুন্দহ গামের মাওলানা ফজলে রাব্বী তোহা, পন্ডিত পুকুরের মজনুর রহমান মজুন, আইল পুনিয়ার নজিবুল্লাহ মজনু, বুড়ইলের আলহাজ্ব মোশারফ হোসেনসহ প্রায় অর্ধশতাধিক সাদা মনের মানুষ মানুষের সেবা করে চলেছেন।
মানুষের মন অস্বিত্বশীল হলেও তাকে দেখা বা স্পর্শ করা যায় না। মন যেহেতু চোখে দেখা যায় না, তাই মনের কোন রং আছে কিনা এখনো তা জানা যায়নি। কাজেই মনের রং আছে যেমন বলা যাবে না তেমনি নাইও বলা যাবে না। তবে মানুষের ধারণায় মনের দুটি রংয়ের অস্তিত্ব রয়েছে। আবার সেই একই ধারণায় মনের রং অনুযায়ী মানুষকে ‘সাদা মন ও কালো মন’ এই দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সাদা মনের বলতে ভালো মনকে ও কালো মনের বলতে খারাপ মনকে বুঝানো হয়ে আসছে। আমরা জানি সাদাকে শান্তি ও মঙ্গলের প্রতীক এবং কালোকে শোক আর অমঙ্গলের প্রতীক মনে করা হয়। সেই মনে করা হয় থেকেই সাদা মনের মানুষ কথাটার উৎপত্তি।
আত্মমর্যাদাগত দিক দিয়ে সকল মানুষেরই সাদা মনের মানুষ হওয়ার কথা। কোন মানুষের মন কালো বা কুৎসিত হলে সেটা তার মনুষ্যত্বের বিচ্যুতি। এ বিচ্যুতি মানুষের সহজাত নয়। মানুষের জন্য কালো মন একটি পদস্খলন। অবমাননার বিষয়। সাদা মনের মানুষ হওয়াই মানুষের জন্য স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত আচরণ। কারো মন কালো না হলেই তিনি সাদা মনের মানুষ, তা’ বলা যাবেনা। যার মনে কোন পাপ নেই, যিনি তার শ্রেষ্ঠ আত্মমর্যাদা সম্পর্কে অবগত, যিনি পরোপকারকে কর্তব্য মনে করেন, যিনি সত্যবাদি ও ন্যায়নিষ্ঠ, যিনি কুঠিলতা ও অহংকার থেকে মুক্ত, যিনি মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন , যার মনে অন্যের সর্বনাশের চিন্তা নেই, তিনিই সাদা মনের মানুষ। একজন সাদা মনের মানুষ সকল সৃষ্টিকুলের জন্যই নিরাপদ।
খুব কাছ থেকে দেখা সাদা মনের মানুষগুলো অসহায় মানুষের সেবা করতে যেভাবে সাহায্য ও সহানুভূতি দেখাচ্ছেন, এটা সত্যিই প্রসংশার দাবিদার।
একজন সাদা মনের মানুষ খোলামনে সবাইকে ভালোবেসে, সবার ভালোবাসায় ধন্য হন। অন্যের আনন্দে নিজে আনন্দিত হন, অন্যের ব্যথায় হন ব্যথিত। তাঁর মনের উদারতার পাত্র থাকে কানায় কানায় পূর্ণ। শুধু নিজের চিন্তা না করে এরা সকল মানুষের সুখের চিন্তা করেন। সকলের কল্যাণে তারা নিজেকে বিলিয়ে দেন। সব ভালো কাজ করেই আনন্দ পান। পাপকে ভয় পান। সাদা মনের মানুষগুলোই দেশের জন্য যুদ্ধ করে প্রাণ দেন। উদারতায় মানুষের মনে শান্তি আসে। পক্ষান্তরে সংকীর্ণতা মনের কষ্ট বাড়ায়। একজন সাদা মনের মানুষ নিজেকে সকল সংকীর্ণতা ও পঙ্কিলতার উর্ধ্বে রাখেন।
অনেক জাগতিক কষ্ট এদের কাছে কোন কষ্টই নয়। এদের অন্তর থাকে সদা দ্যুতিময়। এরা সবকিছুকেই সহজভাবে নিতে পারেন। সাদা মন সাহসের আধার। তাই একজন সাদা মনের মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে ছাড়া আর কাউকে ভয় পান না। অনায়াসে সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে পারেন। একজন সাদা মনের মানুষের কাছে সকল কিছুই পরিষ্কার। তাই এদের সারাক্ষণ টেনশনে থাকতে হয় না। তুচ্ছ কিছু নিয়ে অযথা বাড়াবাড়ি করেন না, অন্যের শান্তি ভঙ্গ করেন না। তারা সকলকে সম্মান করেই নিজেরা হন সম্মানিত। সাদা মনের মানুষগুলো আছেন বলেই এখনো মানব সভ্যতা টিকে আছে।
লেখক : সাংবাদিক ও সংগঠক।