প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, ছাপানো ও বিতরণের মধ্যে প্রায় ৪০টি ধাপ আছে, প্রতি ধাপেই ফাঁস হবার ঝুঁকি থাকে, মূলহোতা কোচিং বাণিজ্য
ঢাকা, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : প্রশ্ন ফাঁস কি ভাবে হচ্ছে, কোথায় থেকে হচ্ছে? নির্বাহী পরিচালক ড.ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, কিছু দিন আগে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে একটি গবেষণা করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টি আই বি। এর এ গবেষণা থেকে তাদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে প্রশ্নফাঁসের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কোচিং বাণিজ্য। একটি কোচিং সেন্টরের কর্মকর্তা বলেন, এর জন্য কোচিং সেন্টারগুলোকে ঢালাওভাবে দায়ী করা ঠিক নয়। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, ছাপানো এবং বিতরণ তিনটি পর্বের মধ্যে প্রায় ৪০ ধাপ রয়েছে। প্রতি ধাপেই ফাঁস হবার ঝুঁকি থাকে।
ড.ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, কোচিং বাণিজ্য হচ্ছে প্রশ্নপত্র ফাসের কেন্দ্রবিন্দুতে। “কোচিং বাণিজ্যের সাথে শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং পাবলিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি স্টেকহোল্ডার বা অংশীদাররা জড়িত, এর একটা সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে গেছে। প্রায় সব পাবলিক পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এমনকি চাকুরীতে নিয়োগ পরীক্ষারও প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। ঢাকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে এক বৈঠকে দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে, প্রশ্ন ফাঁসের সাথে অসাধু কর্মকর্তা ও শিক্ষকরাই জড়িত, বৈঠকে প্রশ্ন ফাঁসের জন্য শিক্ষকদের দায়ীও করেছেন শিক্ষামন্ত্রী খোদ নিজেই। কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য ২০১২ সালে একটি নীতিমালা হয়েছিল।
এতে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। একের পর এক প্রশ্ন ফাঁস হলেও এর প্রতিকারে সরকারের কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নেই। প্রশ্ন ফাঁস করার শাস্তি আগে ছিল ১০ বছরের কারাদন্ড, কিন্তু ১৯৯২ সালে এটা কমিয়ে ৪ বছর করা হয়। এতে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো যে অপরাধটা তত গুরুতর নয়। তাও আবার কখনো কারো শাস্তি হয় নি।
সরকার কেন এ নিয়ে কিছু করতে পারছে না? এর জবাবে তিনি বলেন, সরকার এটা স্বীকার করতে চায় না। মন্ত্রীরা পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছেন যে প্রশ্ন ফাঁসের কথা অস্বীকার করেছেন এমনও হয়েছে। কোচিং সেন্টার একটি লাভজনক ব্যবসা। এর প্রভাবে ছাত্রছাত্রী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও জড়িয়ে যাচ্ছেন। যদি প্রতিবেশির সন্তান ফাস হওয়া প্রশ্ন পেয়ে যায়, তাহলে তারা পাবেন না কেন? এ প্রতিযোগিতায় তারা জড়িত হয়ে পড়ছেন, তাদের কোন উপায় নেই।
তিনি বলেন, সরকারি একটা অনুসন্ধানের রিপোর্টও প্রকাশ করে নি। কেন হয়নি? সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত বলেই কি প্রকাশ হয় নি? এই প্রশ্নগুলো উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত এসমস্যার সমাধান হবে না। প্রশ্নপত্র তৈরি, ছাপানো ও বিতরণের পুরো পদ্ধতিতে যে ছিদ্রগুলো আছে তা বন্ধ করতে হবে, দোষীদের শাস্তি হতে হবে।