পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২২ উদযাপন
নোয়াখালী প্রতিনিধি, বিধান ভৌমিক, ০১ মার্চ, ২০২২ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : নোয়াখালী জেলা পুলিশের উদ্যেগে নোয়াখালী জেলা পুলিশ লাইন্সে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’২২ উদ্যাপন করা হয়। গতকাল বুধবার অনুষ্ঠানের শুরুতে সকাল ১১.০০ টায় নোয়াখালী জেলা পুলিশ লাইন্সের একটি চৌকষ সুসজ্জিত দল কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদীতে সশস্ত্র সালাম প্রদান করা হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে নোয়াখালী জেলা পুলিশ ও পুলিশের অন্যান্য ইউনিট- পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, সিআইডি, ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, পিবিআই, র্যাব-১১, রেলওয়ে পুলিশ, নৌ-পুলিশসহ কর্তব্যরত অবস্থায় অত্র জেলার যে সকল পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন সে সকল পুলিশ সদস্যের পরিবারের সদস্যসহ প্রায় ২৫০ জনের উপস্থিতিতে নিহতদের স্মরনে নির্মিত বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়।
প্রথমে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, নোয়াখালী’র কমান্ড্যান্ট এস এম রোকন উদ্দিন, ডিআইজি, বাংলাদেশ পুলিশ পরে মোঃ শহীদুল ইসলাম পিপিএম, পুলিশ সুপার, নোয়াখালীসহ পুলিশ সুপার সিআইডি, কমান্ড্যান্ট, ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, পুলিশ সুপার, পিবিআই, র্যাব-১১, রেলওয়ে পুলিশ, নৌ-পুলিশ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করেন। এ সময় শহীদ পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
পরে পুলিশ লাইন্সে অবস্থিত শহীদ মনিরুল হক হলে পুলিশ সুপার নোয়াখালী মোঃ শহীদুল ইসলাম পিপিএম এর সভাপতিত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বেগমগঞ্জ সার্কেল, নোয়াখালী মোহাম্মদ নাজমুল হাসান রাজিব পিপিএম এর স ালনায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিটিসি, নোয়াখালী’র কমান্ড্যান্ট এস এম রোকন উদ্দিন, ডিআইজি, বাংলাদেশ পুলিশ, নোয়াখালী।
প্রথমেই নিহত শহীদ পুলিশ সদস্যদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) দীপক জ্যোতি খীসা। পরবর্তীতে নিহত নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম এর স্ত্রী পারভীন আক্তার, নিহত কনস্টেবল রুহুল আমিন এর স্ত্রী এবং নিহত কনস্টেবল আব্দুর সাত্তারের মেয়ে সানজিদা আক্তার স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য প্রদান করেন। তাদের বক্তব্যে নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরণে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে পালনের আয়োজন এবং তাদের খোঁজ খবর নেওয়ার বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও পুলিশ প্রধানসহ পুলিশ সুপার নোয়াখালী মহোদয়কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং তাদের সর্বদা খোঁজ খবর রাখার অনুরোধ করেন।
এছাড়াও সভায় সিআইডি এর বিশেষ পুলিশ সুপার, পিবিআই এর পুলিশ সুপার এবং ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান এর বক্তব্যে নিহত পুলিশ সদস্যদের দেশের প্রতি অবদানের কথা উল্লেখ করেন। প্রধান অতিথি পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের (ডিআইজি) মহোদয় তার বক্তব্য প্রদান কালে শহীদ পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ও তাদের সকল সুবিধা অসুবিধা দেখভাল করার জন্য পুলিশ সুপার, নোয়াখালী মহোদয়কে অনুরোধ করেন এবং পুলিশ সুপার মহোদয়কে সকল অবসর প্রাপ্ত পুলিশ সদস্যসহ সকল শহীদ পুলিশ সদস্যদের পরিবারের খোঁজখবর নেওয়ার আহবান জানান।
আলোচনা সভার সভাপতি পুলিশ সুপার নোয়াখালী মোঃ শহীদুল ইসলাম, পিপিএম তার বক্তব্যে বলেন, পুলিশ কে.জি স্কুলে নিহত পুলিশ সদস্যের সন্তানদের বিনা বেতনে পড়াশুনার ব্যবস্থা করবেন। ২০২০ সালের পূর্বে কর্তব্যরত অবস্থায় যে সকল পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন তাদের পরিবার যাতে আজীবন পারিবারিক রেশন পান সে জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এ বিষয়ে পত্র প্রেরণ করবেন।
জেলায় নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের যে কোন সমস্যা সমাধান করার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর, নোয়াখালীকে ফোকাল পয়েন্ট অফিসার হিসেবে নিযুক্ত করেন। এছাড়াও পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরীর ক্ষেত্রে নিহত পুলিশ সদস্যের সন্তানরা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে পুলিশ সুপার নোয়াখালী মহোদয় তার পরবর্তী ব্যবস্থা করবেন মর্মে জানান। অন্যান্য চাকুরীর ক্ষেত্রে নিহত পুলিশ সদস্যের সন্তানদের কোন সুপারিশ প্রয়োজন হলে পুলিশ সুপার, নোয়াখালী মহোদয় নিজেই সুপারিশ করবেন মর্মে জানান।
এই স্বাধীনতার মাসে ১৯৭১ সালে রাজারবাগে মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। পরবর্তীতে মাননীয় আইজিপি মহোদয়ের পক্ষ হতে করোনায় আক্তান্ত হয়ে নিহত পুলিশ সদস্যের জন্য সনদ, ক্রেস্ট, উপহার সামগ্রী ও আর্থিক অনুদান এবং নোয়াখালী জেলা পুলিশের পক্ষ হতে নিহত পুলিশ পরিবারের সদস্যদেরকে উপহার সামগ্রী প্রদান করেন এবং অনুষ্ঠান শেষে নিহত পুলিশ পরিবারের সদস্যদের সম্মানে এক মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করা হয়।