পাঁচবিবির ডলির বিবাহ ফাঁদে আর কত যুবক ফাঁসবে
পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি, আল জাবির, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে যোগসাজোসি ভাবে দিন মজুরের ছেলেকে ফাঁসিয়ে ১০ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে নিকাহ্নামা করার ঘটনা ঘটিয়েছেন উপজেলা তথ্য কেন্দ্রের সহকারি উপজেলার আটাপুর ইউনিয়নের মাঝিনা আয়মাপাড়া গ্রামের আবুল হোসেন আজাম্মেল এর প্রথম কন্যা লায়লা আরজুমান ডলি। যোগসাজোসি নিকাহ্নামাতে ফাঁসিয়ে দেওয়া ভুক্তভুগি দিন মজুরের ছেলে রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাট গ্রামের শেখ পাড়ার দিন মজুর ইসমাইল শেখের পুত্র এজাজুল শেখ সাংবাদিকদের নিকট লিখিত অভিযোগ করে বলেন, আমাদের এলাকার ধান কাটা শ্রমিক এ এলাকায় কাজ করতে আসলে ডলির বাবা মা শ্রমিকদের নিকট বলে আমার মেয়েকে বিয়ে দিব। একটি শিক্ষিত বর তোমাদের এলাকায় থাকলে খুঁজে দিও।
এভাবেই মোবাইল নাম্বার বিনিময় হয়। এরপর থেকে মেয়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা হত। মেয়ে পক্ষের লোকজন আমার বাড়ি দেখেও এসেছে। মোবাইলে যোগাযোগের এক পর্যায়ে আমাকে ডলি পৌর পার্কের সামনে আসতে বলে। আমি পৌর পার্কের সামনে আসলে বিভিন্ন ভাবে ফুসলিয়ে তাঁর আয়মাপাড়া বাবার বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে খাবার খাওয়ানোর পর জোর করে দুধ পান করাই। দুধ পান করার পর থেকেই আমি বোধ শক্তি হারিয়ে ফেলি। ২ দিন পর স্বাভাবিক হলে জানতে পারি আমাকে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের আটাপাড়া শাখায় নিয়ে গিয়ে কাবিননামায় স্বাক্ষর ও টিপ নেওয়া হয়েছে। এই কথা জানতে পেরে আমি নানা কৌশলে মেয়ের বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হই।
পরে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় নিকাহ্নামার নকল উঠাইয়ে জানতে পারি ১০ লক্ষ টাকা দেন মোহর ধার্য্য করে আমাকে ডলির সঙ্গে আমার বিবাহ রেজিষ্ট্রি করা হয়েছে। আমার বাবা একজন দিন মজুর। আমি একটি কোম্পানিতে সামান্য বেতনে চাকুরি করি। এই মহিলার চক্রান্ত থেকে বের হতে না পারলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন রাস্তা খোলা নেই। এজাজুলের এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য স্বর-জমিনে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বাগজানা ইউনিয়েনের কাজীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে রহস্যজনকভাবে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের আটাপাড়া শাখার ইনচার্জকে কাজীর অফিসে উপস্থিত পাওয়া যায়।
ছেলের পরিবার ও আপনজন বা ছেলে পক্ষের কোন স্বাক্ষী যেখানে উপস্থিত নেই সেখানে কিভাবে ১০ লক্ষ টাকার মহোরানা ধার্য্য করে নিকাহ্নামা হয়। এর বাস্তবতা জানতে চাইলে ইউনিয়নের কাজী আঃ রব এর সহকারি মাহ্মুদুর রহমান বলেন, মেয়ে পক্ষের তথ্যের ভিত্তিতে এভাবে নিকাহ্নামা লেখা হয়েছে। পরবর্তীতে বুঝতে পারি কাজটি করা আমার ভুল হয়েছে। ছেলেকে হয়রানি না করে সমস্যাটি মিটিয়ে ফেলার জন্য মেয়েকে বারবার বলা হয়েছে। এ ঘটনার অনুসন্ধানে গিয়ে আরও জানা যায়, লায়লা আরজুমান ডলি ২০১৪ সালে দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলার বাংলা হিলি বাজারের বাসিন্দা সার্ভেয়ার গিয়াস উদ্দিনের পুত্র ছাতনী চারমাথা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল হালিম বাবু মাষ্টারের সঙ্গে তার সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার পরেও ছেলের সন্তানের খোরপোশ হিসেবে নিয়মিত টাকা আদায় করছেন।
এর পরেও রাত-বিরাতে মোবাইলে ফোন করে ও বাবু মাষ্টার এর ২য় স্ত্রীর বাবার বাড়ি আলীহাট সহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বাবু মাষ্টার সম্পর্কে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়ায়। এ বিষয়ে বাবু মাষ্টার গত বছর ১৯ আগস্ট পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এই ডলিই গত বছর পাঁচবিবি পৌরসভার মালঞ্চা মাতাইশ মঞ্জিল গ্রামের আনসার চৌধুরীর পুত্র রিফাত চৌ: কে বিয়ের দেখাদেখির কথা বলে মোবাইলে ছবি উঠিয়ে রিফাতের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করে। এরপর ২০ বিঘার পুকুর লিখে দিয়ে তাকে বিবাহের দাবি করে। রিফাতের মা জানান এই মেয়ের চক্রান্তে পরে এবং ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিটাতে গিয়ে আমাদের ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে।
ডলির গ্রামের বাড়ি মাঝিনা বাজারে গেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মুন্টু মেম্বার সহ এলাকাবাসী জানান গত বছর ডলি তার ছোট বোন জীবনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী এর বিষয়ে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে লোহার পুকুর এলাকার হতদরিদ্র আব্দুল হাকিমের ছেলে রাজুর ভ্যান তাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ১৫ দিন আটকে রাখে এবং থানায় অভিযোগ দিয়ে দফায় দফায় দেন দরবার করে রাজুর পরিবারের নিকট থেকে ১ লক্ষ টাকা আদায় করে। স্থানীয় বজলু ঘটকের নিকট থেকে জানা যায় এতো কিছুর পরেও এই ডলি আবারও বিভিন্ন ছেলেকে বিবাহ করার জন্য নিয়মিত তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে লায়লা আরজুমান ডলির সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন এজাজুল স্বেচ্ছায় কাবিননামায় স্বাক্ষর করেছে। তবে এজাজুলের বাড়িতে তিনি ১ দিনের জন্যেও যাননি। মালঞ্চার রিফাত চৌধুরীর পরিবারই তাঁর সঙ্গে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিল। এ সময় এজাজুলের সঙ্গে বিবাহ থাকার পরেও ঘটকের কাছে বর খুঁজতে কথা বলছেন কেন? ও রিফাতের বিষয়ে অভিযোগ করলেন কেন? জিজ্ঞাসা করলে তিনি প্রসঙ্গে এড়িয়ে যান।