নোয়াখালী জরুরী বন্যা কার্যক্রম শেষ করেছে এমএসএফ
নোয়াখালী প্রতিনিধি, বিধান ভৌমিক, ২২ অক্টোবর ২০২৪ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : বাংলাদেশ ২২ অক্টোবর ২০২৪ নোয়াখালী কয়েক সপ্তাহের জরুরি বন্যা মোকাবেলা কার্যক্রম পরিচালনার পর, মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স/সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল (এমএসএফ) সংস্থাটির মাসব্যাপী কার্যক্রম বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করেছে। এমএসএফ ২০২৪ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর বন্যা দুর্গতদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে জরুরি কার্যক্রম চালু করে, যেখানে আকস্মিক বন্যার কারণে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, প্রয়োজনীয় পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করেছিল।
“ধ্বংসাত্মক বন্যার সময় রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বাড়িঘর পানির নিচে চলে গেছে এবং পানির প্রধান উৎসগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে পরিশোধিত এবং নিরাপদ পানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে,”, বলেন নোয়াখালীর মাইজদীর স্থানীয় বাসিন্দা জাবেদ। “আমার ঘর বন্যার পানির কবল থেকে বেঁচে যায়। তবে প্রধান সড়ক, ধানক্ষেত এবং পুকুর সহ সব ডুবে গেছে। আমি আর্থিকভাবে হাজার টাকার সম্পদ হারিয়েছি। শুধু আমি একা হারাই নি, গ্রামবাসীরাও বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে”। এই জরুরী পরিস্থিতিতে এমএসএফ দল স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, স্বেচ্ছাসেবক এবং অংশীদারদের সহযোগিতায়, ব্যাপকহারে পানি দূষণ এবং স্থানীয় অবকাঠামো ধ্বংসের কারণে সৃষ্ট জরুরি চিকিৎসা চাহিদা মেটানোর দিকে মনোনিবেশ করে।
“আমাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী দল দেখেছে নোয়াখালী সরকারি জেনারেল হাসপাতালে প্রকট পানিবাহিত ডায়রিয়া রোগীদের সংখ্যা বাড়তে। জরুরী কার্যক্রম শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে, স্বাস্থ্যসেবা দল হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি হওয়া রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিল। সেসময় হাসপাতালে বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা আকস্মিক ডায়রিয়ার রোগীর বৃদ্ধি সামলাতে পারেননি এবং আমরা চিন্তিত ছিলাম যে হাসপাতালের অভ্যন্তরে দূষণের কারণে এই পরিস্থিতি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য আরও ঝুঁকির কারণ হতে পারে”, বলেন এমএসএফ বাংলাদেশের ডেপুটি মেডিকেল কোঅর্ডিনেটর ডাঃ পঙ্কজ পাল।
এই উপচেপড়া পরিস্থিতি সামাল দিতে, এমএসএফ দল প্রয়োজন অনুসারে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্যে ট্রায়াজ সিস্টেম চালু করে ২৫০- শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী সরকারী জেনারেল হাসপাতালে। এছাড়াও প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ডায়রিয়া চিকিৎসা ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়। আমাদের জরুরী কার্যক্রমের শুরুতে, প্রতি সপ্তাহে ৫০০-এরও বেশি প্রকট পানিবাহিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য নোয়াখালি জেনারেল হাসপাতালে আসতে দেখেছি, কিন্তু আমাদের কার্যক্রমের শেষের দিকে সেই সংখ্যা সপ্তাহে ৩০০’র কাছাকাছি ছিল। আমরা যখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রকল্পটি হস্তান্তর করি, তখন আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে হাসপাতালে ট্রায়াজ সিস্টেম আমরা স্থাপন করেছিলাম, তা এই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করতে দীর্ঘমেয়াদী ভূমিকা রাখবে” বলেন এমএসএফ বাংলাদেশের জরুরি প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নিলাদ্রি চাকমা।
৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবরের মধ্যে, এমএসএফ দল মাইজদীর ২৫০-শয্যার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে প্রকট পানিবাহিত ডায়রিয়া জন্য ১,৯৪৬ জন রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে, যেখানে ৬৩% এরও অধিক শিশু এবং ৩৭% প্রাপ্তবয়স্ক ছিল। পুরো কার্যক্রম জুড়ে এমএসএফ কবিরহাট উপজেলার বিভিন্ন পরিবারকে ১০০০ অ-খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন, যার মধ্যে মশারি, হাইজিন পণ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়াও, এমএসএফ হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা পরিষেবা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে ২ জন স্বাস্থ্যবার্তা প্রদানকারী, ২ জন চিকিৎসক, ৬ জন নার্স এবং ২৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ করে। এছাড়াও, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হাসপাতালে ১৫৪টি হেলথ প্রোমোশন সেশন দেয়া হয়।
এমএসএফ-এর পানি ও স্যানিটেশন দল নোয়াখালী ও ফেনী জেলা জুড়ে ১৩০০ টিরও বেশি গভীর টিউবওয়েল জীবাণুমুক্ত করেছে এবং এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য ৪৫টি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল, যা বন্যার কবলে পড়া মানুষদের জন্য নিরাপদ এবং পরিষ্কার পানি নিশ্চিত করবে।