নিজের মোবাইল নাম্বার দিয়ে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত প্রধান শিক্ষক
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, মোঃ আবদুল মান্নান, ২৬ জানুয়ারি, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মোবাইল নাম্বার কেটে নিজের নাম্বার দিয়ে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত করছেন এক প্রধান শিক্ষক। উপজেলার কাশিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল কাশেম এমন কর্মকান্ড করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি নাসরিন আক্তার নামের এক অভিভাবক উপজেলা শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দেয়ায় তোলপাড় শুরু হয়। এছাড়াও প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে অভিযোগটির অনুলিপি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক, কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রাথমিক মনিটরিং অফিসার, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকটও দেয়া হয়েছে।
অভিযোগে অভিভাবক নাসরিন আক্তার উল্লেখ করেন, তিনি কাশিনগর ইউনিয়নের বারইয়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর মেয়ে কাশিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। ২০১৯ সাল থেকে দীর্ঘ দুই বছর যাবৎ তাঁর মেয়ে উপবৃত্তি পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমের সাথে আলাপ করলে তালিকা দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। এভাবে কয়েকবার যোগাযোগ করেও সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায়নি। পরে পরিচালনা কমিটির ২-৩ জন সদস্যকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তাঁরাও বিষয়টি দেখবেন বলে সময় নেন। কমিটির সদস্যরা অদ্যাবধি সঠিক সমাধান দিতে পারেনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির সদস্যগণ বিস্তারিত পর্যালোচনা করে কিছু অনিয়ম দূর্নীতি খুঁজে পান। যা নাসরিন আক্তারকে সরাসরি বলেন।
কমিটির সদস্যগণ উপবৃত্তির তালিকা যাছাই বাছাই করে দেখেন যে প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল কাশেম অভিভাবক নাসরিন আক্তারের মোবাইল নাম্বারটি কেটে প্রধান শিক্ষকের নিজ মোবাইল নাম্বার লিখে দেন। প্রধান শিক্ষকের মোবাইল নাম্বারটি হলো: ০১৩১৮-৮১৬৬৫০। কমিটির সদস্যগণ আরও বলেন, প্রধান শিক্ষক প্রায় সময় এই নাম্বারে কথা বলতেন, বর্তমানে বন্ধ দেখা যায়। এভাবে আরও অনেকের নাম্বার কেটে নিজের মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে উপবৃত্তির টাকা ভোগ করছেন তিনি। ২০১৯ সনের দ্বিতীয় শ্রেনীর তালিকায় শিক্ষার্থীর নাম রহিমা, মাতা: হনুফা, মোবাইল নাম্বার দেখা যায় ০১৮১৮-৬৬৪২০১। উক্ত নাম্বারটিও প্রধান শিক্ষকের পরিবারের।
প্রধান শিক্ষক স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে কেউ মুখ খুলছে না। প্রধান শিক্ষকের পরিবারের ৮-১০টিরও অধিক সিম রয়েছে বলেও জানা যায়। উপবৃত্তির তালিকায় এ সকল সিমের নাম্বার ব্যবহার করে অনেক টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম তাঁর পছন্দ মতো কাজ করাতে না পারলে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে বিষোদাগার করেন বলেও অনেকে প্রতিবেদকের নিকট অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে কাশিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল কাশেম মঙ্গলবার দুপুরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার চাকরির বয়স শেষ পর্যায়ে। আমার বিরুদ্ধে কেউ কোথাও অভিযোগ করেনি। উপবৃত্তির তালিকায় আমার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটি কিভাবে বসানো হয়েছে, তা জানি না। তাছাড়া মোবাইল নাম্বারটিও দুই বছর যাবৎ বন্ধ রয়েছে’। এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাকিনা বেগম বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে’।