নগরীতে গাঁজাসহ মাদক সম্রাজ্ঞী কমেলা গ্রেফতার, স্বস্তি ফিরেছে এলাকাবাসীর
রাজশাহী প্রতিনিধি, নুরে ইসলাম, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : মিলন রাজশাহী মহানগরীর ছোট বনগ্রাম বারো রাস্তার মোড় এলাকার একাধিক মাদক মামলার আসামী, মাদক সম্রাজ্ঞী কমেলা ওরফে কনা (৫০)কে ৪০ পুরিয়া গাঁজাসহ আটক করেছে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া কমেলা ছোট বনগ্রাম বারো রাস্তার মোড় এলাকার মৃত আমির আলীর মেয়ে ও ১ম স্বামী-রশিদ,২য় নুরুর স্ত্রী।
গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার, সোহরোয়ার্দী হোসেন এর নেতৃত্বে অফিসার ইনচার্জ আমান উল্লাহ, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জনাব নিত্যপদ দাস, এস,আই গোলাম মোস্তফা,এ,এস,আই নাজমুল হক, এ,এস,আই বুলবুল আহম্মেদ এবং নারী কনস্টবল সহ গত রবিবার সকালে তার বাড়িতে অভিযান চালানো হলে এসময় তার বাড়ি থেকে ৪০ পুরিয়া (৫০০) গ্রাম গাঁজাসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে মাদক সম্রাজ্ঞী কমেলা ওরফে কনাকে গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
এলাকাবাসীরা জানান, কমেলার পরিবার দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় মাদকের রমরমা ব্যবসা করে আসছিলো। এই পরিবার প্রতিদিন প্রায় এক লক্ষ টাকার বিভিন্ন মাদক দ্রব্য বিক্রয় করতো। পুলিশ প্রশাসন ও এলাকার গন্যমান্য কর্তা ব্যক্তিরা এই মাদক ব্যবসায়ী কমেলার পরিবারের কাছ থেকে প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা মাসোহারা হিসাবে নিতো। যার কারণে সে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দিনের পর দিন দিনের আলোয় ও রাতের আঁধারে প্রকাশ্যে তার পরিবার নিজ বাসাতেই মাদকের রমরমা ব্যবসা করতো।
এলাকাবাসীরা আরো জানান, এই পরিবারের কাছে প্রতিদিন মাদকদ্রব্য নিতে বিভিন্ন এলাকার মাদকসেবীরা আসতো। যার কারণে এলাকায় বিভিন্ন সময় ছোট-খাটো চুরি-ছিনতাই লেগেই থাকতো। এলাকার মেয়েরা ঠিকমতো স্কুল-কলেজে যেতে পারতো না। বাড়ির মহিলারা বাহিরে এসে পরিবারের কাজ-কর্ম করতে পারতো না এই সব খারাপ ও অচেনা মানুষের আনাগোনার কারণে।
স্থানীয়রা যতবার এই পরিবারকে এই কাজের জন্য বাধা দিতে গেছে তত বারই এই পরিবার বলতো তোরা আমাদের কী করবী? পুলিশকে বলে কি করবী? এই কী পুলিশকে আমাদের একটু বেশি টাকা দিতে হবে। এলাকার মাস্তানরা আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। তাই কমেলাকে আটক করায় এলাকার মানুষের মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। অন্তত তারা কিছুদিন আরামে থাকতে পারবেন। তাই এলাকাবাসীরা সরকারের কাছে এই চিহ্নিত কুখ্যাত মাদক সম্রাজ্ঞীর দীর্ঘ শাস্তি কামনা করেন।
এই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার এর বিষয়ে থানার একাধিক পুলিশ সদস্যরা বলেন, এই সেই মাদক ব্যবসায়ী, যাকে ধরতে গেলেই পুলিশের নামে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল হয়। আর এই ভয়ে কোন পুলিশ তার বাড়ীর আশেপাশে যেতে সাহস পাই না। শুধু একজন অফিসারই সাহস পাই, সে হল একজন দক্ষ, মেধাবী, পরিশ্রমী অফিসার, যার কথা শুনলে মাদক ব্যবসায়ী ভয়ে ঐ এলাকা ছেড়ে দেই। সেই অফিসারের নাম হল এস,আই গোলাম মোস্তফা। স্যারের জন্য শুভ কামনা রইল এবং স্যারের সাথে থাকা এএসআই বুলবুল ও নাজমুলের জন্য শুভ কামনা করেন তারা।
পুলিশের নামে মিথ্যা অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, ছোট বনগ্রাম বারো রাস্তার মোড় এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী কমেলার বড়িতে বড় মাদকের চালানের লেনদেন হচ্ছে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত৪/৫ মাস আগে এসআই গোলাম মোস্তফা,এ.এস.আই নাজমুল হক, এ.এস.আই বুলবুল আহম্মেদসহ সংগৃহ ফোর্স তার বাড়িতে অভিযান চালালে পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে তারা পালিয়ে যান ।
এসময় এসআই গোলাম মোস্তফা,এ.এস.আই নাজমুল হক, এ.এস.আই বুলবুল মাদক সম্রাজ্ঞী কমেলার বাড়ি তল্লাশি করে কিছু না পেয়ে ফিরে আসেন। পরের দিন তাদের নামে এই মাদক সম্রাজ্ঞী কমেলা ওরফে কনা রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার বরাবর তার নাতনির শ্লীলতাহানি ও তাকে অস্ত্র দেখিয়ে অর্থ লুটের অভিযোগ দেন ।
এ অভিযোগের ভিত্বিতে মহা পুলিশ পরিদর্শক আইজিপি কমপ্লেইন সেল এর মাধ্যমে তাদেও বিরুদ্ধে তদন্তও হয়েছে । আর এই ভয়ে শুধু বোয়ালিয়া থানা পুলিই নয় কোন পুলিশ তার বাড়ীর আশেপাশে যেতে সাহস পেত না।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আমান উল্লাহ জানান, মাদক নির্মুলে পুলিশের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরন করা হচ্ছে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মাহবুবুর রহমান পিপিএম স্যারের পরামর্শে গতিশীল নেতৃত্ব ও দূরদর্শীতাকে কাজে লাগিয়ে এলাকার সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় বোয়ালিয়া মডেল থানাকে মাদক মুক্ত থানায় রূপান্তরের চেষ্টা করেছি, আমার সফলতা ও ব্যর্থতার স্বাক্ষ্য এ এলাকার জনগণই বহন করবে ।
মাদকের সাথে জড়িত কেউই পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পাবে না। বোয়ালিয়া থানা এলাকাকে মাদক মুক্ত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে বলে জানান তিনি।