জয়পুরহাটে ট্রেনের ধাক্কায় বাসের ১২জন যাত্রী নিহত
পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি, আল জাবির, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : জয়পুরহাটের পুরানাপৈল রেলগেটে বাস-ট্রেন সংঘর্ষে বাসের ১২ যাত্রী নিহত হয়েছেন। আজ সকাল আনুমানিক ৬:৩০ ঘটিকায় এই ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি রাজশাহীতে যাচ্ছিল। হিলি থেকে ছেড়ে আসা বাসটি ১৬ জন যাত্রী নিয়ে জয়পুরহাটে যাওয়ার পথে পুরানাপৈল রেলগেটে উঠে পড়ে। এতে ট্রেনটি ওই বাসকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই ১০ জনের মৃত্যু হয়।
নিহত ব্যাক্তিদের লাশ জয়পরহাটের আধুনিক হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে আহত ০৫ জন কে উন্নত চিকিৎসার জন্যা বগুড়া প্রেরন করা হলে বগুড়ায় আরো ০২ জন মারা য়ান, জয়পুরহাট সদরের পুরানাপৈল রেলক্রসিংয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার সময় ক্রসিংটির গেট খোলা ছিল কিন্তু সংশ্লিষ্ট গেটম্যান ছিলেন না বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ঘটনার পর থেকে উত্তরাঞ্চলের ট্রেন চলাচল ৮ঘন্টা বন্ধ ছিল । তবে দুপুরের দিকে রেলওয়ের উদ্ধার কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে দুমরেমুচরে যাওয়া বাস ও লাইচ্যুত ট্রেনটি সড়ালে দুপুর ২টা ৪৮ মিনিট থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে জানান, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের পরিবহন কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন।
ট্রেনের সাথে বাসের সংর্ঘষের ঘটনায় নিহত ও আহতদের উদ্ধার করেছে স্থানীয় জনতাসহ জয়পুরহাট ও পাঁচবিবি ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের সদস্যরা ও পুলিশ সদস্যরা। হতাহতদের উদ্ধার করে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে পাঠিয়েছেন তারা। তবে আহতদের অবস্থা আংশঙ্খাজনক হওয়ায় তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে তাদের মধ্যে ২জন মারা গেছে। বাকি ৩ জনের অবস্থাও ভাল না বলে জানা গেছে। ওই ঘটনায় নিহত ও আহতরা সবাই বাসযাত্রী।
ঘটনার পরপরই স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের রেল কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাৎক্ষনিক রেল বিভাগ পশ্চিমাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনকে প্রধান করে ৪ সদস্যর একটি তদন্ত টিম গঠন করেছেন। তদন্ত টিম ইতমধ্যে তাদের তদন্ত কাজ সরজমিনে এসে শুরু করেছেন। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজা হাসানকে প্রধান করে তিন সদস্যর একটি তদন্ত টিমও গঠন করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন, সদর উপজেলার হিচমী গ্রামের মানিকের ছেলে রমজান, পাঁচবিবি উপজেলার আটুল গ্রামের আলতাফ হোসেনের দুই ছেলে সরোয়ার হোসেন বাবু ও আরিফুর রহমান রাব্বি, আক্কেলপুর উপজেলার চকবিলা গ্রামের দুদু কাজীর ছেলে সাজু মিয়া, নওগাঁর রানী নগর উপজেলার বিজয়কান্দি গ্রামের গোরা মিয়ার ছেলে বাবু মিয়া, সদর উপজেলার কুঠিবাড়ী ব্রিজ এলাকার শরীফুলের ছেলে আব্দুল লতিফ, ক্ষেতলাল উপজেলার ইটাখোলা বাজারের মংলার ছেলে সুমন, পাঁচবিবি উপজেলার আটাপাড়া গ্রামের মোশারফের ছেলে মঞ্জুরুল ইসলাম, সদরের চিত্রাপাড়া মহল্লার নিশি মন্ডলের ছেলে রেজাউল করিম, সিরাজগঞ্জের শাহিকুলা গ্রামের সমতুল্যার ছেলে সাইফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল জেলার ভূয়াপুর উপজেলার মাটিকাটা গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে জুলহাস উদ্দিন এবং পাঁচবিবি উপজেলার পাঠাবোকা জিয়াপুর গ্রামের বিরাজ উদ্দিনের ছেলে জিয়াউর রহমান।
আর আহতরা হলেন, পাঁচবিবি উপজেলার মালঞ্চচাপা গ্রামের মোফাজ্জলের ছেলে ফারুক হোসেন, সদর উপজেলার হারাইল গ্রামের বাস চালক মামুনুর রশিদ ছাড়াও অজ্ঞাত ২ জন। নিহতদের লাশ পরিবাবের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান জেলা আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডা. রাশেদ মোবারক। এদিকে নিহত ও আহত পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা এবং জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমানের পক্ষ থেকে দাফন কার্য সমাপ্ত ও আহতদের চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার করে টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জয়পুরহাট থেকে ছেড়ে আসা বাঁধন নামের একটি যাত্রীবাহি বাস (বগুড়া জ-১১-০০০৮) শনিবার সকালে ২৩ জন যাত্রী নিয়ে হিলি স্থল বন্দরের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল রেলগেট অতিক্রম করার সময় ওই বাসটিকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেন সজোরে ধাক্কা দেয়। ট্রেনটি রেল লাইন ধরে ছেঁচরিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দক্ষিন দিকে যাত্রীবাহী বাসটিকে নিয়ে যায়। যতক্ষণে ট্রেনের ইঞ্জিন বগি লাইনচুত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ওই ট্রেন যাত্রীবাহি বাসকে ছেঁচরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন বলে জানান তারা।
এ সময় ১০ জন যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন আর আহত হয়েছেন আরো ৬ জন। হাসপাতলে নেওয়ার পর আহতদের মধ্যে আরও ২ জন নিহত হন। এ নিয়ে ওই ঘটনায় ১২ জনের প্রাণহানি ঘটে। খবর পেয়ে স্থানীয় জনতা, জয়পুরহাট ও পাঁচবিবি ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের সদস্যরা হতাহতদের উদ্ধার করে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। তবে আহতদের অবস্থা আশংঙ্খাজনক হওয়ায় চিকিৎসকরা তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
পুরানাপৈল রেলগেটে অবস্থিত হোটেল মালিক প্রত্যক্ষদর্শী রেজাউল করিম বলেন, সকালে আমি হোটেলের ক্যাশে বসে আছি, খুব কুয়াশা, ২/৩ জন লোক নাস্তা করছে, এমন সময় গেটে বিটক শব্দ হয়। বাহিরে গিয়ে দেখি গেটের পূর্ব ও পশ্চিম পার্শ্বে অনেক লোকজনের রক্ত মাখা দেহ পরে আছে। আর উত্তরদিক থেকে আসা ট্রেনটি একটি বাস নিয়ে দক্ষিণদিকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় হুরমুর শব্দের সাথে লোকজনের চিৎকারের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এমন দৃশ্য কখনও দেখিনি। ওই সময় মনে হয়েছে আজ বোদহয় কিয়ামত শুরু হয়েছে। তবে ওই সময় গেটম্যান গেটে ছিলনা।
জয়পুরহাট ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম ও জয়পুরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর জাহান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আহতদের উদ্ধার করে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেও ২ জন মারা যায়। পরে আহত ৪ জনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা তাদের বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য এড. সামছুল আলম দুদু এমপি ঘটনাস্থ পরিদর্শনপূর্বক বলেন, যার দোষেই এই দূর্ঘটনা ঘটুকনা কেন তাকে ছাড় দেওয়া হবেনা। এতবড় দূর্ঘটনার দায় কেউ এড়াতে পারেনা। এ সময় তিনি নিহত ও আহতদের প্রত্যক পরিবারকে অনুদান দেওয়ার ঘোষনা দেন।
পুলিশ সুপার সালাম কবির বলেন, গেটম্যানের ঘুমের কারনে আজ এতবড় দূর্ঘটনা। তার ঘুমের জন্যই মুলত ১২ জনকে প্রাণ দিতে হল। সে কোন ভাবেই এর দায় এড়াতে পারবেনা। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি আরও বলেন, গেটম্যান ওই ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে।
জেলা প্রশাসক শরিফুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজা হাসানকে প্রধান করে তিন সদস্যর একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তারা আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করবেন। দুষি ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে কারও পার পাওয়ার সুযোগ নেই।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা ও তদন্ত টিমের প্রধান নাসির উদ্দিন সরজমিনে ঘটনাস্থলে এসে সাংবাদিকদের জানান, জরুরিভাবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু গেটম্যান নয়, যেই এই দূর্ঘটনার সাথে জড়িত তার বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ পার পাবেনা। ১২ জন মানুষের মৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত। তদন্ত করে আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করতে হবে। এদিকে অনেক ভোগান্তির পর বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল কলায় যাত্রীদের মধ্যে সস্তি ফিরে এসেছে।