শ্রীপুরে কারখানা বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ

গাজীপুর (শ্রীপুর) প্রতিনিধি, ইসমাইল হোসেন, ২৮ জুলাই, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) :  গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকায় কেওয়া পূর্ব খন্ড গ্রামের ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায় গ্যালী ইন্ডাষ্ট্রিয়াল কোম্পানী লিমিটেড নামের ব্যাটারী তৈরী কারখানা বন্ধের দাবিতে শনিবার (২৮জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় কেওয়া পূর্ব খন্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে করেছে এলাকাবাসী। আগামী শনিবারের মধ্যে কারখানার কার্যক্রম বন্ধ না করা হলে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হবে বলে মানববন্ধন ঘোষণা দেয়া হয়।

কেওয়া পূর্ব খন্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালণা পর্ষদের সভাপতি শ্রীপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর রমিজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ভবানীপুর মুক্তিযোদ্ধা কলেজের সহকারী অধ্যাপক এমদাদুল হকের পরিচালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বিদ্যালয়ের জমিদাতা পক্ষে কফিল উদ্দিন সরকার, এলাকাবাসীর পক্ষে সিরাজুল ইসলাম, অভিভাবকবৃন্দের পক্ষে রাশিদা আকতার, ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে তাইয়্যেবা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন শ্রীপুর গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র আনোয়ার হোসেন, কেওয়া পূর্ব খন্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ইয়াসমিন আক্তার রুমা, সহকারী শিক্ষক খলিলুর রহমান, নদী পরিব্রাজক দলের পক্ষে আজহারুল ইসলাম, রায়হানুল ইসলামসহ এলাকার কয়েকশ সাধারণ জনগণ।

এলাকাবাসীরা জানান, স্থানীয় বরুণ বাবু ও মৃত আবুল হোসেনের মাসুদুর রহমান, মহসিন ও মজিবরের কাছ থেকে প্রায় ১৬বিঘা জমি মাসিক ভাড়ায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে ২০১৬ সাল থেকে পুরাতন ব্যাটারী ভেঙ্গে নতুন ব্যাটারী তৈরী করে আসছে। এতে পুরাতন ব্যাটারীর সীসা গলিয়ে নতুন ব্যাটারীর তৈরীর সময় তা পুড়ানো হয়।

সীসা পুড়ানোর সময় সৃষ্ট ঝাঁঝালো গন্ধ ধোঁয়ায় চোখ ও মুখমন্ডল জ্বালা পোড়া করে। নির্গত বিষাক্ত লেড অক্সাইড গ্যাসে অসুস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থী, মরছে গবাদিপশু, নষ্ট হচ্ছে সবজি, ফল, গাছপালাসহ কৃষকের ধান ক্ষেত।

প্রতিবাদ সমাবেশে সিরাজুল ইসলাম বলেন, কারখানার আশপাশের ঘাস খেয়ে এপর্যন্ত তাঁর তিনটি নিয়ে গরু মারা গিয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাননি তিনি।

কেওয়া গ্রামের শামসুদ্দিন জানান, তিনি এবছর সাত বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছিলেন। কারখানার বিষাক্ত অপরিশোধিত বর্জ্য ধান ক্ষেতে গিয়ে তাঁর পুরো সাত বিঘা জমির ধান গাছই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

এলাকাবাসীর পক্ষে রাশিদা আকতার জানান, তার মেয়ে কেওয়া পূর্ব খন্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। গত বুধবার (২৪জুলাই) বিদ্যালয় থেকে ফিরে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে, এক পর্যায়ে সে জ্ঞান হারিয়ে যায়। পরে তাকে চিকিৎসা দিলেও তার পেট ব্যাথা কমেনি।

কারখানার শ্রমিক রিপন মিয়া জানান, রিপা নামের কারখানার এক শ্রমিক শ্বাসকষ্ট ও পেটের ব্যাথায় অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছে। অপর শ্রমিক মাহমুদা আক্তারের বুকে দুধ খেয়ে তার দেড় বছরের শিশুও মারা গিয়েছে।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এব্যাপারে গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুস ছালামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *