চৌদ্দগ্রাম গণপিটুনিতে যুবককের মৃত্যু
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, আবদুল মন্নান, ০২ জুন, ২০২৪ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম মহিন উদ্দিন ওরফে গাউয়া (২৮) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১ জুন) ভোরে উপজেলার চাঁপাচৌ ঈদগাহ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মহিন উদ্দিন উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের খাটরা গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে। শনিবর বিকেলে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ত্রিনাথ সাহা। হত্যাকারে শিকার মহিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ একাধিক মামলার রয়েছে জানিয়ে পুলিশ বলছে, চুরি করতে গিয়ে ধরা খাওয়ার পর গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়েছে।
অপরদিকে মহিন উদ্দিনের স্ত্রী আকলিমা আক্তার লিমা দাবি করেন, পূর্ব বিরোধের জের ধরে তার স্বামীকে পরিকল্পিত ভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহিন উদ্দিন ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি ও ইভটিজিংসহ একাধিক মামলার আসামি। সাম্প্রতিক সময়ে সে কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে আসে। শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের চাঁপাচৌ গ্রামে সরোয়ার আলম নামের এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে একটি মোটর সাইকেল চুরি করে অন্যত্র লুকিয়ে রাখে।
আবারও সে ওই বাড়িতে গিয়ে তাদের একটি সিএনজি অটোরিকশা চুরি করার সময় সরোয়ারের পরিবারের সদস্যরা টের পেয়ে চোর বলে শোর চিৎকার করে। এ সময় আশ-পাশের লোকজন মহিন উদ্দিনকে ধাওয়া করে একই এলাকার ধনড়া ঈদগাহ নামক স্থানে আটক করে গণপিটুনি দেয়। গণপিটুনিতে মারাত্মক আহত হলে মহিন উদ্দিনের ছোট বোন সালমা আক্তার ও তার স্বামী নাঈম খবর পেয়ে খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার শেষে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চৌদ্দগ্রামের কনকাপৈত পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক মফিজুর রহমান বলেন, ‘মহিন উদ্দিন একজন চিহ্নিত চোর। শনিবার রাতে একটি মোটর সাইকেল চুরি করে লুকিয়ে রাখারপর ভোরে ওই এলাকায় আবারও চুরি করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে। আমরা জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে উত্তেজিত জনতা তাকে গণপিটুনি দেয়। গণপিটুনিতে আহত হওয়ার পর স্বজনরা খবর পেয়ে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়’।
নিহতের স্ত্রী আকলিমা আক্তার লিমা বলেন, ‘আমার স্বামী এক সময় খারাপ পথে চলাচল করতো। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের একটি সন্তান দুনিয়াতে আসার সংবাদ পেয়ে সে সকল অপকর্ম ছেড়ে দিয়ে ভালো হয়ে যায়। সে চৌদ্দগ্রামের বিভিন্ন সড়কে সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকে। অনাগত সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমরা খাটরা গ্রাম থেকে এসে চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার ট্রেনিং সেন্টার নামক স্থানে ভাড়া বাসায় থাকি।
আকলিমা আক্তার লিমা আরও বলেন, আমার স্বামী মহিন উদ্দিন ‘শুক্রবার সন্ধ্যায় তার মায়ের জন্য বাজার নিয়ে মোটর সাইকেল যোগে খাটরা গ্রামে যায়। সেখান থেকে বোনের বাড়ি পাশ্ববর্তী দশবাহা গ্রামে যাওয়ার কথা বলে বের হয়। তারপর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বেজে উঠলেও কেউ রিসিভ করেনি। শনিবার ভোরে আমার বোন সালমা আক্তারের মাধ্যমে জানতে পারি, তাকে পিটুনি দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে। এক পর্যায়ে আমরা ধনড়া ঈদগাহ গিয়ে দেখি, মহিন উদ্দিন মাটিতে পড়ে আছে। তাকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। আকলিমা আক্তারের দাবি, ‘কতিপয় ব্যক্তি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে’।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ মোঃ আসিফ ইকবাল বলেন, ‘পিটুনিতে আহত মহিন উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে তার স্বজনরা হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তাকে আমাদের কোন চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজন হয়নি’।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ত্রিনাথ সাহা বলেন, ‘মহিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ একাধিক মামলা রয়েছে। স্থানীয়দের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি শুক্রবার রাতে চুরি করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক হয়ে গণপিটুনিতে সে আহত হয়। তাঁর স্বজনরা উদ্ধার শেষে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।’