চৌদ্দগ্রামে গৃহবধূ হত্যা, স্বামী-শ্বশুরের নামে মামলা
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, আব্দুল মান্নান, ২৩ এপ্রিল, ২০২২ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : চৌদ্দগ্রামে নুসরাত জাহান মীম(২১) নামের এক গৃহবধুকে হত্যার মরদেহ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা করেছে প্রচারের অভিযোগে ওই গৃহবধুর মা স্বামী, শ্বশুরসহ চারজনের বিরুদ্ধে কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছে গৃহবধুর মা জাহান আরা।
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসির দাবি, সুরতহাল রিপোর্ট অনুযায়ী গৃহবধু আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের রামপুর গ্রামে। নুসরাতের বাবার বাড়ি একই উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের বাতিসা গ্রামে। তবে নুসরাতের বাবা মহসিন চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, মেয়ের শ্বশুর মরদেহ উদ্ধারের পরে আমার থেকে কৌশলে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করে ফেলে।
আদালতে দায়েরকৃত নুসরাতের মা জাহান আরা মামলায় উল্লেখ করেন, ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি নুসরাত জাহান মীমকে রামপুর গ্রামের মোহাম্মদ উল্লাহ ভূঁইয়া রিয়াদের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় নুসরাতের পরিবার স্বামীর পক্ষকে স্বর্ণালঙ্কার, ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রসহ প্রায় চার লাখ টাকার জিনিসপত্র দেয়। বিয়ের পর নুসরাত কিছুদিন সুখে শান্তিতে স্বামীর সংসার করতে পারলেও ছয় মাস পরেই যৌতুকের দাবিসহ নানা কারণে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে স্বামী রিয়াদ।
এক পর্যায়ে গত ১৬ এপ্রিল শনিবার দুপুরে সুযোগ বুঝে স্বামী রিয়াদসহ তার পরিবারের লোকজন নুসরাতকে মারধরসহ শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। নির্যাতনে নুসরাতের গলা, হাতের তালুসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। নির্যাতনের অতিমাত্রায় অবস্থা বেগতিক দেখে নুসরাতকে তারা পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে শোয়ার ঘরে সিলিং ফ্যানের সাথে মরদেহ ঝুলিয়ে রাখে বলে তিনি মামলায় উল্লেখ করেন।
পরে নুসরাতের স্বামী রিয়াদ তার শ্বশুর মহসিন চৌধুরীকে মুঠোফোন কলে জানায় নুসরাতের শারীরিক অবস্থা ভালো না, তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে হবে। খবর পেয়ে নুসরাতের বাবা-মা সেখানে ছুটে গিয়ে নুসরাতের মরদেহ সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে থাকতে দেখেন। পরে নুসরাতের শ্বশুর শহিদ উল্লাহ্ সু-কৌশলে তার বাবার কাছ থেকে দু’টি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর পর লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে নুসরাতের মা জাহান আরা বলেন, ‘আমার মেয়েকে তারা যৌতুকের টাকার জন্য পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমাদের কাছ থেকে দু’টি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে তারা লাশের ময়নাতদন্ত না করিয়ে দাফন করে দেয়। লাশের ময়নাতদন্ত ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই’।
মামলার প্রধান আসামী ও নিহত নুসরাতের স্বামী মোহাম্মদ উল্লাহ্ ভূঁইয়া রিয়াদ বলেন, ‘নুসরাতের মানসিক সমস্যা ছিল। এ কারণেই সে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। তার পরিবারের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতেই লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে’।
এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। সুরতহাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলেই প্রতীয়মান হয়। উভয়পক্ষের সম্মতিতে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে’।