চৌদ্দগ্রামের সেই আলোচিত ‘আগ্নেয়াস্ত্র’ থানায় জমা দিলেন জুয়েলের স্ত্রী
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, আবদুল মান্নান, ১৬ জুলাই, ২০২২ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে মনিরুজ্জামান জুয়েলের হাতে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রটির ছবি ভাইরাল হওয়ার পর তার স্ত্রী ফারজানা হক শুক্রবার রাতে চৌদ্দগ্রাম থানায় জমা দিয়েছেন।
শনিবার দুপুরে তথ্যটি নিশ্চিত করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, মনিরুজ্জামান জুয়েলের হাতে থাকা অস্ত্রটির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে তাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারপর আমরা তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে অস্ত্রটি থানায় জমা দিতে নির্দেশ প্রদান করার পর তার স্ত্রী ফারজানা হক শুক্রবার রাতে থানায় এসে ছাড়পত্র নিয়ে ৮৬ রাউন্ড গুলিসহ জার্মানের তৈরি ২.২ বোরের অস্ত্রটি থানায় জমা দেয়।
যেহেতু অস্ত্রটি মনিরুজ্জামান জুয়েলের লাইসেন্স করা, সেহেতু আমরা তার পরিবারকে নির্দেশ প্রদান করি-অস্ত্রটি থানায় জমা দিতে।
কেন অস্ত্রটি থানায় জমা দিতে বলা হলো-এ প্রশ্নের জবাবে ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, যে কোন বৈধ অস্ত্রধারীর অস্ত্র বেআইনী ভাবে প্রদর্শন করা হয়, বিষয়টি থানা প্রশাসন অবগত হইলে আমরা সে অস্ত্রটি থানায় জমা নিতে পারি। মনিরুজ্জামান জুয়েলের অস্ত্রটি ইতো মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া জন মনে ভয়ভীতি ও প্রশ্নের সৃষ্টি হওয়ায় অস্ত্রটি জমা নেওয়া হয়েছে।
অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হবে কি না জানতে চাওয়া হলে ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, আপাতত অস্ত্রটি জমা নিয়েছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জুলাই বৃহস্পতিবার উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা শাহজালাল মজুমদারের গাড়িতে হামলা-ভাংচুরের পর থেকে শাহাজালালের ফেসবুক আইডি থেকে মনিরুজ্জামান জুয়েলের হাতে অত্যাধুনিক একটি আগ্নেয়াস্ত্রের ছবি ভাইরাল হয়। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরে আসলে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ শুক্রবার রাতে অস্ত্রটি থানায় জমা নেয়। তবে মনিরুজ্জামান জুয়েলের সন্ধানে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা জানিয়েছেন, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে, অচিরেই সে ধরা পড়বে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চৌদ্দগ্রামের উপজেলার নালঘর এলাকায় জুয়েল পারিবারিক বিরোধের জের ধরে তার সংগীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে শাহজালাল মজুমদারের গাড়িতে হামলা চালান। এ সময় শাহজালাল মজুমদার গাড়ি থেকে নেমে অন্যত্র অশ্রয় নেয়। তাকে না পেয়ে সন্ত্রাসীরা তাকে বহনকারী গাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাদন করে।
শাহজালাল মজুমদার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা যুবলীগের আহব্বায়ক এবং শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এ ঘটনার পর মনিরুজ্জামান জুয়েলের অস্ত্র হাতে তিন বছর আগের পুরনো একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ছবিতে দেখা যায়, তিনি এক হাতে অস্ত্র নিয়ে হাসিমুখে, অন্যহাতে সিগারেট টানছেন। ছবিটি চৌদ্দগ্রামের একটি হোটেলের পাশ থেকে তোলা। অনেকে ওই পুরনো ছবিকে বর্তমান ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন। এ ছবি নিয়ে ভিন্ন মতের সৃষ্টি হয়েছে।
জুয়েলের লোকজন বলছে, তার এ অস্ত্র লাইসেন্স করা। আবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলছেন, লাইসেন্স করা অস্ত্র হলেও প্রকাশে প্রদর্শনের কোনো অধিকার তার নেই। সূত্রে আরো জানা গেছে, হামলাকারী ও হামলার শিকার যুবলীগ নেতা আপন চাচাতো জেঠাতো ভাই।
দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিল। সেই বিরোধের অংশ হিসেবে এ হামলার ঘটনা। এক সময় শাহজালালের সঙ্গে জুয়েলের সুসম্পর্ক ছিল। একটি সভায় শাহজালালের পাশে দাঁড়িয়ে মনিরুজ্জামান জুয়েলকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। সেই পুরনো ছবিও এখন ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে।