কুমিল্লায় র‌্যাবের অভিযানে ৯ আন্ত:জেলা ডাকাত গ্রেপ্তার

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, আব্দুল মান্নান, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে র‌্যাব পরিচয়ে বিকাশের ২৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় আন্তঃজেলা ডাকাতদলের নেতাসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তথ্যটি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-১১ সিপিসি-২ কুমিল্লার উপ-পরিচালক মাহমুদুল হাসান। এ সময় ডাকাতদলের কাছ থেকে র‌্যাবের পোশাক-স্টিকার ও ডাকাতিকাজে ব্যবহৃত ওয়াকিটকিসহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের উপ-পরিচালক মাহমুদুল হাসান জানান, গত ২৭ অক্টোবর বিকেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম চৌদ্দগ্রাম এলাকায় র‌্যাব পরিচয়ে বিকাশের কর্মচারীর গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় ডাকাত দল বিকাশ কর্মচারীদ্বয়ের নিকট থেকে ২৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন ম্যানেজার বাদী হয়ে চৌদ্দগ্রাম থানায় অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জনকে আসামি করে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন।

র‌্যাবের উপ-পরিচালক মাহমুদুল হাসান আরও জানান, ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি ও ছায়াতদন্ত শুরু করে র‌্যাব। পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ডাকাত দলের সদস্যরা জেলার চান্দিনা থানা এলাকায় পুণরায় ডাকাতির পরিকল্পনা করছে। এ প্রেক্ষিতে ডাকাত দলকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে র‌্যাব-১১ র্কর্তৃক গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। পরবর্তীতে সোমবার রাতে চান্দিনা থানাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপর জনৈক ২ জন ব্যক্তি ডাকাতির শিকার হয়েছে এবং ডাকাত দল ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করেছে মর্মে স্থানীয় সোর্স তথ্য প্রদান করে।

এরই সূত্র ধরে ডাকাত চক্রকে হাতে নাতে গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‌্যাব-১১ এর একটি অভিযানিক দল তৎক্ষনাত দাউদকান্দি থানাধীন দাউদকান্দি টোল প্লাজা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনার সাথে জড়িত আসামী গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার বজ্রাকুঞ্চিবাড়ি এলাকার কাছু শেখের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩২), একই থানার উত্তর শ্রীপুর গ্রামের নাসির আলীর ছেলে সাজু মিয়া (৩৩), কালিরখামার গ্রামের গয়সাল ব্যাপারীর ছেলে মোঃ সাজু (৪৪), মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানার ইমামপুর গ্রামের রবিউল আওয়ালের ছেলে মোঃ রিয়াদ (১৯), একই গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে মোঃ সজিব (৩৫), ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার থানারকান্দি গ্রামের তপদর হোসেনের ছেলে মোঃ রবিউল (২৬), মাদারিপুর জেলার শিবচর গ্রামের টিংরামারী গ্রামের আলী আকবরের ছেলে মোঃ মানিক (৪০), নারায়নগঞ্জের বন্দর থানার দক্ষিণ কুলচরিত্র গ্রামের আবুল কালামের ছেলে রিপন সর্দার (২৯) ও পটুয়াখালীর গলাচিপার চরবিশ্বাস গ্রামের আবদুল হক হাওলাদারের ছেলে রিপন হাওলাদার(৪৫)।

র‌্যাবের এ উপ-পরিচালক আরও জানান, এ সময় ডাকাতদল থেকে নগদ ৩৫ হাজার ৩৫৮ টাকা, ৩ টি র‌্যাব জ্যাকেট, ১ টি নকল পিস্তল, ১ টি পিস্তল কভার, ১ টি স্বর্ণের চেইন, ২ টি আংটি, ১ টি ইলেকট্রিক শকার, ২ টি ওয়াকিটকি, ৭ টি মোবাইল, ২ টি র‌্যাব মনোগ্রামযুক্ত স্টিকার, ১ টি লাঠি, ৩ টি টর্চলাইট, ১ টি ওয়ারলেস টকিং টুল, ১ টি হ্যান্ডকাফ, ৮ টি মানিব্যাগ, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১ টি নোহা প্রাইভেটকার ও ১ টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা ডাকাতির সাথে তাদের সম্পৃক্ততার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ একটি আন্তঃ জেলা ডাকাত চক্র এবং চক্রের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত মোঃ সাইফুল ইসলাম। এই চক্রে ১০-১২ জন সদস্য রয়েছে। গ্রেফতারকৃত ডাকাত দলের নেতা সাইফুল এর নেতৃত্বে তারা প্রায় ১/২ বছর যাবৎ কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাব পরিচয়ে ডাকাতি করে আসছিল বলে তারা জানায়।

গ্রেফতারকৃতরা আরোও জানায়, গত ২৭ অক্টোবর বিকালে ডাকাতির উদ্দেশ্যে চৌদ্দগ্রাম থানাধীন কালী কৃষ্ণনগর এলাকায় চট্টগ্রাম-ঢাকাগামী রাস্তার উপর তাদেরকে বহনকৃত মাইক্রোবাস নিয়ে অবস্থান করছিল। এসময় বিকাশের দুই কর্মচারী তাদের সাথে থাকা টাকা নিয়ে কান্দিরপাড় অফিসে পৌঁছানোর জন্য প্রাইভেটকার যোগে ওই একই রাস্তা ব্যবহার করে কুমিল্লা শহরের দিকে আসছিল। একটি মোটরসাইকেল যোগে তাদের ২ জন সদস্য পূর্ব থেকেই বিকাশের প্রতিনিধিদেরকে অনুসরণ করে ভূক্তভোগীদের অবস্থানের তথ্য ডাকাত দলের নেতাকে সরবরাহ করে যাচ্ছিলো। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ডাকাত নেতা সাইফুলের নির্দেশে গ্রেফতারকৃত আসামীরা হাইয়েস গাড়ি ব্যবহার করে বিকাশ কর্মচারীদের প্রাইভেটকারকে অনুসরণ করতে থাকে এবং সুযোগ বুঝে বিকাশ কর্মচারীদের পথরোধ করে।

এসময় ডাকাত দলের ৩-৪ জন সদস্য তাদের গাড়ি থেকে নেমে বিকাশ কর্মচারীদের নিকট হতে টাকা ভর্তি ব্যাগটি জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয় এবং বিকাশ কর্মচারীদেরকে জিম্মি করে তাদের গাড়িতে তুলে নেয়। পরবর্তীতে বিকাশের কর্মচারীদেরকে গাড়ির ভেতরে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে একসময় তাদের হাত-পা বেধে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানা এলাকায় ফেলে চলে যায়। উপ-পরিচালক আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতদেরকে চৌদ্দগ্রাম থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *