কুমিল্লায় ট্রাক চাপায় প্রাণ হারিয়েছে সিএনজির ৫ যাত্রী
কুমিল্লা প্রতিনিধি, আবদুল মান্নান, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : কুমিল্লা সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের ময়নামতি এলাকায় ট্রাক চাপায় প্রাণ হারিয়েছে সিএনজির ৫ যাত্রী। গুরুতর আহত হয়েছে আরো ২ জন। দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাকটির রেজিষ্ট্রেশন ছিলো না বলে জানিয়েছে বিআরটিএ কর্মকর্তারা। আর কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে সিএনজিটি যাত্রী নামানোর জন্য রাস্তার উপর থামানোর জন্য ধীর গতির ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে কুমিল্লার ময়নামতি হাইওয়ে ক্রসিং থানায় গিয়ে দেখা গেছে, লাশ ঘরের সামনে রাখা সাদা ব্যাগে আবদ্ধ ৪টি লাশ। লাশঘরের ভেতরে পরে আছে আরো একটি। লাশগুলোকে ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড়। ভোর বেলা কুমিল্লা সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তাদের সবাই। পাশেই চলছিলো স্বজনদের আহাজারি।
পুলিশ ও নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার আনুমানিক ভোর ৬টায় কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে বুড়িচং উপজেলার কংশনগর থেকে ৫ জন যাত্রী এবং চালকসহ মোট ৬ জন নিয়ে সিএনজি অটোরিকশাটি ময়নামতি সেনানিবাস এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দিকে আসছিলো।
এসময় ময়নামতি এলাকার তুতবাগানের সামনে সিএনজিটিকে পেছন থেকে চাপা দেয় একটি বালুবাহী ড্রাম ট্রাক। ট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলেই সিএনজি অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত হয়। গুরুতর আহত হয় সিএনজিতে থাকা এক যাত্রী ও ড্রাম ট্রাকের চালক। তাৎক্ষনিক ভাবে আহতদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে নিহতদের মরদেহ এবং দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনগুলোকে উদ্ধার করে ময়নামতি হাইওয়ে ক্রসিং থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। নিহতদের মধ্যে জুলহাস, জহিরুল, জালাল ও সাইফুল বুড়িচং এর কংশনগর সাধকপুর এলাকার বাসিন্দা এবং নিহত আলমগীরের বাড়ি দেবিদ্বারে।
স্বজনরা জানান, নিহতদের সবাই নিজ নিজ পেশাগত কাজে ভোর বেলা সিএনজি অটোরিকশায় করে রওনা হয়েছিলো। ময়নামতি তুতবাগান এলাকায় ভোর ৬ টা ১০ মিনিটে দুর্ঘটনায় তারা প্রাণ হারান। পরে পুলিশ তাদের খবর দিলে তারা মরদেহ নিতে ময়নামতি হাইওয়ে ক্রসিং থানায় আসেন। পুলিশের পক্ষ থেকে মরদেহগুলোর ময়নাতদন্তের কথা জনানো হলেও নিহতদরে পরিবারের পক্ষ থেকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ নিয়ে যাবার দাবি জানানো হয়।
দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহন পর্যবেক্ষণে থানায় এসে প্রত্যক্ষণদর্শী ও স্থানীয়দের বরাত দিয়ে বিআরটিএ পরিদর্শক সাইফুল কবির জানান, কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে মহাসড়কের উপর দাড়িয়ে সিএনজি যাত্রী নামানোর কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এ ছাড়া প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটির নাম্বার পেন্টইট নাই, রেজিষ্ট্রেশন নাই। তবে ট্রাকটির রেজিষ্ট্রেন বা নাম্বার প্লেইট নম্বর কেন নেই কিংবা চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কি না সে বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচলকারী একাধিক যাত্রী জানান, এই সড়কে ছোঠ ছোট যানবাহনের আধিক্য বেশি। কম দূরত্বের পথে গণ পরিবহনের সংকট থাকায় যাত্রীদের বাধ্য হয়ে সিএনজি অটোরিকশা ও লেগুণার মত ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন ব্যবহার করতে হয়। তবে এ পথে সিএনজিগুলো অনিয়ন্ত্রিভ ভাবে চলাচলের কারণে এর আগেও একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে মাটি বা বালুবাহী ট্রাকগুলোও এই সড়ক ধরে দ্রুত গতিতে চলাচল করে। যে কারনে অধিকাংশ সময় গতির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই দুর্ঘটনায় পতিত হয় এসব ট্রাক। দুর্ঘটনা রোধে এই সড়কে প্রশাসনের আরো কড়া নজরদারি প্রয়োজন।
ময়নামতি হাইওয়ে ত্রসিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর জানান, আঞ্চলিক মহাসড়কে সিএনজি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রশাসনের চোঁখ ফাকি দিয়ে চলাচল করে সিএনজি। তবে দুর্ঘটনার সঠিক কারন তদন্ত করে চিহ্নিত করা হবে। দুর্ঘটনায় নিহদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও সিএনজি অটোরিকশাটি জব্দ করা হয়েছে।