কুমিল্লার দেবিদ্বারে গোমতী নদীর ২০ টি পয়েন্টে অবৈধ ভাবে বালু ও মাটি উত্তোলনের কারণে ভূমিধসের আশঙ্কাঃ প্রশাসন নিরব  

কুমিল্লা (দেবিদ্বার) প্রতিনিধি, জি.এম মাকছুদুর রহমান, 0৪ মার্চ, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম  নিউজ ২৪) : কুমিল্লা জেলাজুড়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের উৎসব চলছে। অবাধে, প্রতিদিন শতশত ট্রাকে করে এই বালু ও মাটি পরিবহন করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। জেলার গোমতী নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলনে নদী এলাকার আবাদি জমি দেবে গিয়ে ভূমিধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বালু উত্তোলনের নিয়ন্ত্রণ নিতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার। মাঝে দুই একবার প্রশাসন থেকে বালু উত্তোলন রোধে অভিযান পরিচালনা করলেও নতুন করে আবার বালু উত্তোলন শুরু করে।

জানা যায়, কুমিল্লা জেলা শহরের মধ্যে দিয়ে দেবিদ্বারে বয়ে যাওয়া গোমতী নদীকে গিরে প্রায় ২০ টি পয়েন্টে অবাধে বালু ও মাটি উত্তোলন চলছে। এরমধ্যে দেবিদ্বারে প্রায় পাঁচটি পয়েন্টে কালিকাপুর থেকে বড় আলমপুর পর্যন্ত বালু ব্যবসায়িরা ব্যপরোয়া হয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। অবাধে মাটি উত্তোলনের ফলে নদী এলাকার আবাদী জমি দেবে যেতে শুরু করেছে। দেবিদ্বার উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া গোমতী নদীতে বেশ কয়েকটি স্থানে ভূমি ও বালু দস্যুরা প্রভাব খাটিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এসব পয়েন্ট থেকে দিনে ও রাতে শতাধিক শ্রমিককে কাজে লাগিয়ে ট্রাকে ট্রাকে বালু ও মাটি উত্তোলন করছে ভূমি দস্যূরা।


দেবিদ্বার গোমতী চর এলাকায় ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে বালু ও মাটি তোলা হচ্ছে। ওই এলাকার কৃষকরা জানান, আবাদী জমির ধার ঘেঁষে বালু ও মাটি তোলার কারনে বর্ষার সময় ফসলী জমি ভেঙ্গে যায়। বালু তোলার ফলে দিন দিন আবাদী জমি গ্রাস করে ফেলছে নদী। গোমতী নদীর উপর দিয়ে নির্মিত ব্রীজও হুমকীর মুখে রয়েছে। কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার মাঝ দিয়ে গোমতী নদী বহমান। পাশাপাশি ফসলি জমি, স্কুল, কলেজ মাদ্রাসা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো রয়েছে গোমতী বাঁধের পাশে। এই এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন চলছে অবাধে।

গত বছর ভারতের পানি ও টানা বৃষ্টির কারনে গোমতীর চরে থাকা পরিবারের বসতভিটা ভাঙনের শিকার হয়। বাস্তুভিটা হারা হয়ে অনেক পরিবার অন্যত্র আশ্রয়ও নিয়েছিলেন। দেবিদ্বার জাফরগঞ্জ থেকে বড় আলমপুর পর্যন্ত গোমতী নদীর জেগে ওঠা চর কেঁটে সাবার করে দিচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু চক্র। ফলে বর্ষাকালে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত্ত গোমতী বাঁধটি নদী ভাঙ্গণের হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

নদীর বুকের কাছে দেবিদ্বার উপজেলার বহু সরকারী বেসরকারী স্থাপনা গোমতী নদী ভাঙ্গনের হুমকির মুখে পড়ায় গত জাতীয় পার্টি এরশাদ সরকার আমলে এ,বি,এম গোলাম মোস্তফা মন্ত্রী থাকাকালীন শত কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর দুই পাশে গোমতীর বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে করে দেবিদ্বার উপজেলার সকল ইউনিয়ন, বর্তমান পৌর শহর সহ বহু সরকারী বেসরকারী স্থাপনা গুলো গোমতী নদীর ভাঙ্গণ থেকে রক্ষা পায়। নির্মাণের পর গোমতী নদীর মাঝে প্রতিবছরে চর জেগে উঠতে শুরু করে।

একটি অসাধু চক্র জেগে উঠা ওই চর থেকে অবৈধ ভাবে বালু ও মাটি উত্তোলণ করে আসছে সবসময়। ফলে গোমতী বাঁধের অতি নিকটে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব গর্তের ফলে গত বর্ষাকালে গোমতী নদীর ডান তীরে বড় আলমপুর সহ প্রায় পাঁচটি পয়েন্টে ভাঙ্গণের আশংকা দেখা দিয়েছিলো। মাঝে মাঝে প্রশাসন থেকে বালু উত্তোলন রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বালু উত্তোলন কিছুদিনের জন্য বন্ধ থাকলেও আবার বালু উত্তেলনের প্রস্তুতি নিয়ে অবাধে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যায়।

সম্প্রতি কুমিল্লা জেলা প্রশাসন থেকে কয়েকদফা অভিযান চালিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন রোধ করে। এরপর প্রশাসনকে ম্যানেজ করে আবারো শুরু করে বালু ভূমি দস্যু ব্যবসায়ীরা। কোথাও কোথাও রাতের বেলা মেশিন বসিয়ে নদীতে বিপুল পরিমানে বালু উত্তোলন করে সকালের মধ্যে সরবরাহ করছে। বালু উত্তোলনের কিছু ঘটনা সাধারণ মানুষের আড়ালেই থাকছে। বালু উত্তোলনের এক দুইজন মালিকের অনুমতি থাকলেও দেবিদ্বারের এক শ্রেনীর অসাধু চক্র বালু উত্তোলন করছে উৎসব আকারে।

দেবিদ্বারে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে কয়েকটি সন্ত্রাসী ঘটনাও ঘটেছে এবং ইট বাটার প্রায় সব মাটিই ট্রাক্টর যোগে গোমতীর চর থেকেই সংগ্রহ করছে। যার ফলে এই মৌষমে অতি মাত্রায় মাটির লোড ট্রাক্টর বাঁধের উপর দিয়ে চলাচলের কারনে বাঁধের রাস্তার পিচ উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে যার কারনে সি,এন,জি ও অটো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পরেছে।যার কারনে সাধারন জনগন প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *