কালকিনিতে নির্বাচনী সহিংসতায় ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ, আহত ১০
মাদারীপুর প্রতিনিধি, আরিফুর রহমান, ১৬ এপ্রিল, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : মাদারীপুরের কালকিনি পৌর নির্বাচেন নৌকা প্রতিকের প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ায় অভিযোগ নির্বাচনে পরাজিত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মসিউর রহমানের সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে সরকার দলীয় বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ সময় অর্ধশত বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত হয়েছেন নারীসহ অন্তত ১০ জন। বৃহস্পতিবার রাতে কালকিনি পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বিভাগদী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ, স্থানীয় ও ক্ষতিগ্রস্থ সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মশিউর রহমান সবুজের পরাজিত হবার পর আওয়ামী লীগ মনোনীত বিজয়ী প্রার্থী এসএম হানিফের সমর্থকদের হামলার ভয়ে এলাকা ছাড়েন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর সমর্থক সাইদুল হাওলাদার নামে এক ব্যক্তি ঢাকা থেকে নিজ এলাকা বিভাগদীতে আসেন।
রাতে এশার নামাজ আদায় করতে মসজিদে গেলে সেখানে সাইদুলের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী নৌকার সমর্থক আউয়াল সরদারের কথা কাটাকাটি হয়।একপর্যায় দুজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে আউয়াল সরদারের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিভাগদী এলাকায় সাইদুলের বাড়িঘরসহ হাওলাদার বাড়ির অর্ধশত বসতঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ সময় হামলাকারীদের বাঁধা দিতে গেলে আহত হয় নারীসহ অন্তত ১০ জন। পরে খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ক্ষতিগ্রস্ত সরোয়ার হাওলাদার বলেন, আমরা কেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর নারিকেল গাছ মার্কায় ভোট দিলাম এডাই আমাগো অপরাধ। আমি বয়স্ক মানুষ। হামলাকারীগো কইলাম এমন কইরেন না। কিন্তু তারা থামলো না। ভাঙচুর করে চইলা গেলো।’
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত নারগিস বেগম বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে নিয়ে ঘরে ঘুমানো ছিলাম। লোকমান সরদার, আওয়াল সরদার, দেলোয়ার বেপারীসহ ২০-৩০ জন লোক ঘরে এসে আমাদের সব ভেঙ্গে চুরে তছনছ করে ফেলে। ঘরের আলমারি ভেঙ্গে টাকা পয়সা সোনাদান যা ছিল সব লুট নিয়ে গেছে। পরে ওরা ঘরে আগুন ধরিয়ে দিতে গেলে হাত-পা জড়িয়ে ধরি।’
পরাজিত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মসিউর রহমান বলেন, ‘বিভাগদী এলাকায় যারা হামলা ও ভাঙচুরের শিকার হয়েছে তারা হয়তো আমাকে ভালোবেসে ভোট দিয়েছে। কারণ আমি নিজে আওয়ামী লীগ করি তারাও সবাই আওয়ামী লীগ করে। যারা হামলাকারী তারাও তো আওয়ামী লীগ করে। আর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তো জয়ী হয়েছে। এরপরেও কেন এমন হামলা ঘটনা ঘটবে? বর্তমান মেয়র, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যারা আছেন তারা বিষয়টি নজরে নিলে এমন সহিংসতা ঘটতো না।’
কালকিনি পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র এসএম হানিফ বলেন, ‘হামলার ঘটনা আমি শুনেছি। ওই এলাকায় কেন এমন হামলা হচ্ছে বুঝতেছি না। হয়তো ওই এলাকার মানুষের মধ্যে অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বের কারণে হতে পারে। তবে অনেকেই বিষয়টি নির্বাচনের পরবর্তী সহিংসতার দিকে চাপাচ্ছে। আমি এখন নির্বাচিত মেয়র। ওই এলাকায় কেন এমন হচ্ছে বিষয়টি আমিও দেখবো। ওই এলাকায় আমি নিজেও যাবো।’
জানতে চাইলে কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইশতিয়াক আশফাক রাসেল বলেন, ‘পুলিশ খবর শুনেই ঘটনাস্থলে যায়। পরিস্থিতি এখন শান্ত। হামলার ঘটনা কিছু ঘরবাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তরা এখনো থানায় কোন অভিযোগ দেয়নি। তা ছাড়া যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা এলাকায় নেই। তাদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে।’