কান্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য করে খালেদা জিয়া প্রমাণ করেছে, সেতু নির্মাণের ক্ষমতা তার নেই : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ঢাকা, ৪ জানুয়ারি, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : পদ্মা সেতু নিয়ে কান্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য করে বেগম জিয়া প্রমাণ করেছেন এই সেতু নির্মাণের কোন ক্ষমতা তার নেই বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন। ছাত্রলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা এদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গণভবনে যান। তিনি বলেন, সরকারে এসেছি নিজের ভাগ্য গড়তে নয়, জনগণের ভাগ্য গড়তে। আজকে যখন আমরা নিজেদের অর্থে পদ্মাসেতু করি তখন আপনারা শুনেছেন যে খালেদা জিয়া বক্তৃতা দিচ্ছে- ‘ঐ পদ্মা সেতু জোড়াতালি দিয়ে করা হয়েছে, কেউ পদ্মা সেতুতে উঠবেন না।
তিনি বিএনপি নেত্রীর বিদ্রুপের উত্তরে বলেন, হ্যাঁ একদিকে ঠিক, সেতু তৈরীর জন্য প্রথমে এক একটা পার্ট তৈরী করে এবং সেটা পরে বসায়। যার এইটুকু জ্ঞান নেই একটা জিনিস তৈরী করতে হলে কিভাবে কোন পদ্ধতিতে করা হয়, যার মাখায় ঐটুকু ঘিলু নেই, তিনি কি করে এটি বুঝবেন। তার মাথায় শুধু ঘিলু আছে চুরি করার, টাকা বানানোর আর এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার, মানুষ পোড়ানোর, মানুষ হত্যার।
একদিন আগে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বক্তৃতায় বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘ঐ পদ্মা সেতু জোড়াতালি দিয়ে করা হয়েছে, কেউ পদ্মা সেতুতে উঠবেন না। গণভবনের সবুজ ঘাসের লনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সংগঠনের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিন যত এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের বহি:বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতাায় টিকতে হলে ততই প্রগতির পথে যেতে হবে। প্রগতির পথে না গেলে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে না চললে আমরা দেশকে সেভাবে উন্নত করতে পারবো না। যারা দেশের ক্ষতি করতে পারে কিন্তুু, কোন কল্যাণ করতে পারে না, তারা দেশ ও জাতিকে কি বা দিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে খালেদা জিয়ার দুই ছেলে এবং বেগম জিয়ার নিজের ঘুষ দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এবং বিদেশ থেকে পাচার করা টাকা উদ্ধারের বিষয়ে নানা তথ্য দেন। এ সময় রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুন্ঠনের দায়ে তাদের কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতু নিয়ে যখন বিশ্ব ব্যাংক আমাদের ওপর দোষারোপ করলো- আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম। কারণ চ্যালেঞ্জ দেয়ার মত সৎ সাহস ছিল বলেই দিতে পেরেছি। আর ঐ একটি ঘটনায় অর্থাৎ চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যখন নিজেদের অর্থে পদ্মাসেতু তৈরীর উদ্যোগ নিলাম তখন আন্তর্জাতিক বিশ্ব বুঝে নিয়েছে এই বাংলাদেশ বিজয়ী জাতি। আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধর মধ্যদিয়ে বিজয় অর্জন করেছি। কারো কাছে মাথা নত করে আমরা চলি না। আমরা মাথা উঁচু করেই চলবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এর পর থেকে ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে। জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ একরকম নিষিদ্ধ ছিল। এই ভাষণ বাজাতে যেয়ে আমার ছাত্রলীগের নেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ভিপি চুন্নুকে জীবন দিতে হয়েছিল। খালেদা জিয়ার নির্দেশে তাকে গুলি করে হত্যা করে ছাত্রদলের ক্যাডাররা। এরকম আমাদের আরো বহু নেতা-কর্মী জীবন দিয়েছে। ঐ শহীদ মিনারে সোহরাবকে হত্যা করেছে। আমাদের নেতা (বর্তমান ত্রাণ মন্ত্রী) মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বুকে চুরি মেরেছিল। তারা আসলে কখনোই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে মেনে নিতে পারে নি।
তিনি যুক্তি উপস্থাপন করেন, তারা যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতাতেই বিশ্বাস রাখতো তাহলে কখনও ৭ মার্চের ভাষণকে নিষিদ্ধ করতো না। আর আজকে সেই ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে আড়াই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ব্রিটিশ লেখক জ্যাকব এফ ফিল্ডের ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্যা বিচেস-দ্যা স্পিচেস দ্যাট ইনস্পায়রড হিস্ট্রী’ শীর্ষক বইতেও জাতির পিতার ভাষণকে সর্বাগ্রে স্থান দেয়ার কথা উল্লেখ করেন।
সেখানে আরো ৪১টি ভাষণ রয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন অ্যালেকজান্ডার দ্যা গ্রেট, জুলিয়াস সিজার, অলিভার ক্রমওয়েল, জর্জ ওয়াশিনটন, নেপোলিয়ান বোনাপার্ড, জোসেফ গ্যারিবল্ডি, আব্রাহাম লিংকন, ভ্লাদিমির লেনিন, উইনস্টন চার্চিল, উড্রো উইলসন, ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট, চালর্স দ্যা গল, মাওসেতুং, হোচিমীন-তাদের ভাষণের সঙ্গে এক নম্বরে আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব প্রামাণ্য দলিলে স্থান পাওয়ায় এই একটি মাত্র ভাষণ আজকে সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। অথচ এই ভাষণকেই প্রজন্মের পর প্রজন্মকে শুনতে দেয়া হয়নি। তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা বিশ্বব্যাপী যে স্বীকৃতি পেয়েছি তাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের আমি বলবো- মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে। তিনি বক্তৃতাকালে বেগম জিয়ার ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার নম্বরপত্রের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, বেগম জিয়ার মত খালি অংক আর উর্দ্দুতে পাশ করলে চলবে না। সকল বিষয়েই উত্তীর্ণ হতে হবে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, আমাদের সংস্কৃতি, সাহিত্য সবকিছুই পড়তে হবে। তিনি নিজেও বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী ছিলেন বলে এ সময় উল্লেখ করেন। সব সময় মনে রাখতে হবে যে, দেশকে আগামীতে নেতৃত্ব দিতে হলে শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা ছাড়া কখনো নিজেকেও গড়ে তোলা যাবে না। দেশকেও এগিয়ে নেয়া যাবে না। কাজেই ছাত্রলীগের যে মূলনীতি (শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি) সেই নীতি ধরেই এগুতে হবে। শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকের এটা খেয়াল রাখতে হবে যার যার নিজের বাড়িতে গেলে আশপাশে কেউ যদি নিরক্ষর থাকে তাহলে তাকে অক্ষর জ্ঞান দিতে হবে। সেইসাথে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার প্রতি উৎসাহিত করতে হবে। ছাত্রলীগের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মীদের কাছে এটাই থাকবে এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমার অনুরোধ। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৪১ সালে আমরা উন্নত সমুৃদ্ধ দেশ হিসেবে জাাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলবো। আর ছাত্রলীগই হবে তার অগ্রসেনানী । বাঙালির স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও প্রাচীন ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্ম হয়।