করোনা ভাইরাস; শিবচরে ৭৮ হাজার মানুষে দিন কাটছে প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে
মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি, আরিফুর রহমান, ২২ মার্চ ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : করোনা ভাইরাস সংক্রমন এড়াতে মাদারীপুরের শিবচরের চারটি এলাকার প্রায় ৭৮ হাজার মানুষ প্রশাসনের কড়া নজরদাড়িতে দিন অতিবাহিত করছেন। শিবচর পৌর বাজারসহ ঝূকিপূর্ন ২টি ওয়ার্ড ও ২টি ইউনিয়নের ২ গ্রামের চারটিস্থানে ২৫০ জন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
সার্বক্ষণিক মনিটারিং করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট। সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার জন্য জনগনকে আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। দফায় দফায় পরিদর্শনে আসছেন জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের চরম ঝুঁকিতে থাকা মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চারটি এলাকার প্রায় ৭৮ হাজার মানুষ আতঙ্কের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছেন। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘর থেকে বের হতে দেখা যাচ্ছে না। এলাকার রাস্তাগুলোতে প্রশাসন ও পুলিশের রয়েছে কড়া নজরদারি।
৪র্থ দিনের মতো বন্ধ রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান ছাড়াও বেশিরভাগ বাজার। শুধু ঐ চার এলাকায়ই নয় করোনা আতঙ্কে আশপাশের মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। চিহিৃত এলাকা ছাড়াও আশপাশের এলাকায় প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও জনপ্রতিনিধিরা টহল দিচ্ছেন। বাজারগুলোও স্বতস্ফুর্তভাবে জনশুন্য হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি শিবচর উপজেলায় ৬ শ ৮৪ প্রবাসী ইটালীসহ বিভিন্ন দেশ থেকে জেলায় সাড়ে ৩ হাজার প্রবাসী প্রবেশ করে। চার দিন ধরে উপজেলার সকল বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। জন সচেতনতা বাড়ায় জনশুন্য হয়ে পড়েছে বাজার ঘাট।
মাদারীপুরে করোনা ভাইরাসে মোট ২৯৮ জন কোয়ারেন্টিনে আছে। যার মধ্যে হোম কোয়ারেন্টিনে ২৯৫ জন এবং হাসপাতালের কোয়ারেন্টিনে আছে ৩ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে হোম কোয়ারেন্টিনে আছে ৫৫ জন। সদর হাসপাতালের আইসলেশনে আছে ৩ জন। এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিন থেকে রিলিজ পেয়েছেন ২৬১ জন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন অফিস।
এদিকে প্রবাসীদের আনাগোনা হওয়ায় মাদারীপুরে ফাস্টফুড ও চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট বন্ধ করেছে দিয়েছে মালিকপক্ষ। জেলার সকল বিনোদন কেন্দ্রগুলো এখন মানুষ শূণ্য হয়ে পড়েছে। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া শহরের কাউকে ঘর থেকে বের হতে দেখা যায়নি। রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় যানবাহনের সংখ্যাও অনেক কম। মানুষ চরম আতঙ্গের মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, শিবচরের ৪ টি এলাকা সংলগ্ন মোট প্রায় ৭৮ হাজার মানুষকে আমরা নজরদাড়িতে রেখেছি। এ এলাকাগুলোর মানুষদের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা কারো বাজার লাগলে আমরা তাদের সহায়তা করবো। শুকনো খাবার দেয়া হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, ভাইরাসটি থেকে মুক্ত থাকতে জনগনকে সতর্কতা মেনে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চলার জন্য অনুরোধ করছি।
এদিকে, দেশের মধ্যে করোনা ভাইরাসের আশঙ্কায় মাদারীপুর জেলা ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে গত শনিবার (২১ মার্চ) বিকেলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. শফিকুল ইসলাম।
মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, চীন, ইতালি, স্পেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রবাসী সবচেয়ে বেশি রয়েছে মাদারীপুরে। এসব প্রবাসীরা ইতোমধ্যে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। এজন্য মাদারীপুর জেলাকে ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে শিবচর উপজেলা প্রথম তালিকায় রয়েছে। শিবচরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে প্রবেশ ও বাহিরের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
অনির্দিষ্টকালের জন্য শিবচর পৌরসভার ২টি ওয়ার্ড, পাঁচ্চর ইউনিয়নের একটি গ্রাম, দক্ষিণ বহেরাতলা ইউনিয়নের একটি গ্রামে বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ দোকানপাট। শুধুমাত্র নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান ও ওষুদের দোকান রাখা হয়েছে খোলা । ওই ৪টি এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে প্রায় ৩শ’ পুলিশ। সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রেখেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্দেশ অমান্য করলে নেয়া হচ্ছে আইনানুক ব্যবস্থা। এছাড়া পুরো উপজেলা জুড়ে গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) আব্দুল হান্নান জানান, জনগণ গুজবে কান না দিয়ে এ বিষয়ে সচেতন হলে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সম্ভব হবে। এই ভাইরাস প্রতিরোধে প্রত্যেকটি এলাকায় পুলিশের আলাদা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া এই করোনা ছড়াতে পারে এর আশঙ্কায় মাদারীপুরে ফাস্টফুড ও চাইনিজ রেস্টেুরেন্ট বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, আপাতত শিবচরের ৪টি এলাকা লোকজনের সমাগম কম ঘটে এজন্য এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুরো জেলায় করোনা ঠেকাতে সরকারের সকল বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারী সার্বক্ষনিক কাজ করে যাচ্ছেন।
এদিকে, মাদারীপুরে শহরে রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদেরকে নিয়ে নবগঠিত হলো ‘মাদারীপুর চাইনিজ এন্ড ফাষ্ট ফুড এসোসিয়েশন’ নামে নতুন সংগঠন। শুক্রবার (২০ মার্চ) রাতে শহরের লেকেরপাড় অবস্থিত লেকভিউ রেষ্টুরেন্ট এন্ড পার্টি সেন্টারে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সকলের সম্মতিক্রমে এই নতুন সংগঠনের নামকরণ করা হয় ‘মাদারীপুর চাইনিজ এন্ড ফাষ্ট ফুড এসোসিয়েশন’।
সভায় লেকের আশপাশের রেষ্টুরেন্ট করোনা ভাইরাসের প্রভাব ও ভোক্তা সাধারণের নিরাপত্তার কারণে আগামী ২১ মার্চ থেকে সাময়িক সময়ের জন্য রেষ্টুরেন্ট বন্ধ ঘোষণা করেন সংগঠনের নেতারা। এসময় লেকভিউ রেষ্টুরেন্ট এন্ড পার্টি সেন্টারের কর্ণধার আতাউর রহমান রুবেল খানকে সভাপতি ও স্টার হাউজের কর্ণধার রাসেদ মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক এবং ভোজন বিলাসের কর্ণধার সাইফুর রহমানকে সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফুড ব্যাংক রেষ্টুরেন্টের কর্ণধার শরিফুল ইসলাম মাসুদকে কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত করা হয়।
এদিকে মাদারীপুরের সীমানাবর্তী বরিশালের বিভিন্ন এলাকা আটকিয়ে দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। যাতে করে মাদারীপুরের কেউ বরিশালে প্রবেশ করতে না পারে। করোনা ঝুঁকি এড়াতে এই উদ্যোগ। মাদারীপুর জেলা করোনা ভাইরাসের সবচে’ বেশি ঝুঁকিতে এমন খবরে এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ, তা না হলে আপনি, আমি, আপনারা কিংবা আমরা কেউ এখন আর নিরাপদ নয়। সারা দেশে ছড়িয়ে পরতে কয়েকদিন সময় লাগবে মাত্র।