আক্ষেপ নয়, পেছনে তাকানো নয়, সময় এসেছে এগিয়ে যাওয়ার, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ
ঢাকা, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : বুদ্ধিজীবী হত্যাকারিদের দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত বিচারের রায় কার্যকর করার দাবীসহ নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে আজ জাতি একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছে। দিবসটি উপলক্ষে ভোর থেকেই মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং বায়েরবাজার বদ্ধভূমি এলাকায় জনতার ঢল নামে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদদের স্মরণ করতে আসা সাধারণ মানুষ স্বপ্ন দেখছেন একটি আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। ফুল দিতে আসা অনেকে বলেন, বাংলাদেশ যে পথে হাটছে সময়ের ব্যবধানে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। দীর্ঘদিন রাজনৈতিক রাষ্ট্রীয় বাধা ছিল। এখন সে বাধা দূর হয়েছে। দেশের প্রতি ত্যাগের মাধ্যমেই বড় হওয়া যায়, এটাই বুদ্ধিজীবীরা শিখিয়ে গেছেন। বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে এসে শহীদ পরিবারের সন্তানরা বলেন, এবার আর আক্ষেপ নয়, পেছনে তাকানো নয়, এখন সময় এসেছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার।
দিবসটি উপলক্ষে সকালে কালো পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করণ, শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জলন, শোক র্যালি, শ্রদ্ধা নিবেদন, চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে চুড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা পরিকল্পিতভাবে দেশের কৃতী সন্তানদের হত্যা করে। তার পর থেকে দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। সকাল ৭ টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। শহীদদের সম্মানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করেন।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক ও এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপুমণি ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও একেএম এনামুল হক শামীম, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আসীম কুমার উকিল, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া শহীদ বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
এছাড়াও একে একে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানায় কেন্দ্রীয় ১৪ দল, শহীদ পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা, জাতীয় পার্টি, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি, দলের সভাপতি রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, দলের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), আহবায়ক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে সকাল ৮ টা ৫০ মিনিটে ধানমন্ডিস্থ ৩২ নম্বর ভবনের সামনে রক্ষিত জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতকৃতিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ্য থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রায়ের বাজারের বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে সকালে মানুষের ঢল নামে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দালাল রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস সদস্যরা যেখানে জাতির মেধাবী সন্তানদের হত্যা করে ফেলে রেখেছিল। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০ টায় বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ সাহানে কুরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।