অবশেষে মুজিব বায়োপিকের জন্য সিনেমাপ্রেমীদের অপেক্ষার অবসান
ফিল্ম অ্যাক্টিভিস্ট ও চলচ্চিত্র বিষয়ক বাংলাদেশী টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক সামি আল মেহেদী, বলেন, ‘ফিল্মটি নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা পাহাড়ের চেয়েও বড়। চলচ্চিত্রটি একটি রাজনৈতিক আইকনকে চিত্রিত করেছে যার ব্যক্তিত্ব, দর্শন ও সত্তা আমাদের জাতীয় আশা এবং আকাক্সক্ষার সাথে জড়িত। আশা করি, প্রতিভাবান চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল শিল্পীদের কাছ থেকে সেরা কাজটি পেয়েছেন।’ একজন বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা খুবই কঠিন। কেননা এতে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতাকে অবশ্যই ভিন্ন মাত্রা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভাবতে হয়। চলচ্চিত্রের সমস্ত বিষয়বস্তু সব মহলে গ্রহণযোগ্য করার জন্য একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা এবং প্রকৃত সময়, ইতিহাস ও সংলাপ চিত্রিত করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। ‘চলচ্চিত্রটির প্রাথমিক ট্রেলারটি ২০২২ সালের মে মাসে প্রকাশ করা হয়। এটিকে আরও নির্ভুল ও নিখুঁত করতে চূড়ান্ত স্পর্শ দেওয়ার আগে অনেক সংশোধন করা হয়েছে। তাই, ছবিটি নিয়ে আমরা অনেক আশাবাদী।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএফপির শিক্ষক খন্দকার রুবায়ত মুরসালিন বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একে অপরের সাথে জড়িত বর্ণনা করে বলেন, এই বার্তাটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হবে। ‘অবশ্যই মুজিবের বায়োপিক একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে থাকবে এবং এটি বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আদর্শকে জনগণের কাছে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে অনেকাংশে অবদান রাখবে।’ ঢাকা ইউনিভার্সিটি কালচারাল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অনিক ধর বলেন, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ওপর অনেক চলচ্চিত্র নির্মিত হলেও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো চলচ্চিত্র নির্মিত হয়নি। বাংলাদেশের স্থপতির ওপর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুজিব-একটি জাতির রূপকার’ মহান নেতার ওপর সেরা কাজ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ‘আমরা আশাবাদী যে অভিনেতা, পরিচালক, সঙ্গীত পরিচালক, সিনেমাটোগ্রাফার এবং কোরিওগ্রাফার থেকে শুরু করে সকল শিল্পী বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কাজ এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক বিবরণ চিত্রিত করার জন্য তাদের সেরাটা দিয়েছেন।’
যুব নেতা ও সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর সমন্বয়কারী তন্ময় আহমেদ বলেন, ‘বায়োপিকটি দেশের বাস্তব ইতিহাসের প্রতিফলন এবং এটি বঙ্গবন্ধুকে হেয় করার জন্য স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সমস্ত অপপ্রচারের অবসান ঘটাবে।’ বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে বায়োপিকটির প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ আগারগাঁওয়ে এটি দেখেছেন। প্রিমিয়ার শো দেখার আগে শেখ হাসিনা বলেছেন, বহু প্রতীক্ষিত এ বায়োপিকটির মাধ্যমে জাতি অনেক অজানা তথ্য ও ইতিহাসের নতুন অধ্যায় সম্পর্কে জানবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর তার নাম মুছে ফেলার বহু চেষ্টা করা হয়েছিল। ‘ইতিহাস কথা বলে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু, এটা প্রমাণিত যে, ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না।’ বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ‘মুজিব-মেকিং অব নেশন’- বায়োপিকটি ২৭ অক্টোবর ভারত জুড়ে মুক্তি পাবে। এরই মধ্যে দুটি দেশেই ছবিটি সেন্সর বোর্ড থেকে সেন্সর সার্টিফিকেট পেয়েছে। ২০২২ সালের ১৯ মে ফ্রান্সে ৭৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসবকালে ছবিটির প্রাথমিক ট্রেলার মুক্তি পায়।
বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গত ১ অক্টোবর মুজিব বায়োপিকের চূড়ান্ত ট্রেলার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এছাড়া, গত ১৪ সেপ্টেম্বর কানাডায় ৪৮তম টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে চলচ্চিত্রটির প্রথম প্রদর্শনী হয়। বায়োপিকটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের শিল্পী আরিফিন শুভ এবং বঙ্গবন্ধু পত্নী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। আর শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া। জনপ্রিয় অভিনেতা তৌকীর আহমেদ, চঞ্চল চৌধুরী, প্রার্থনা দীঘি ও অন্যরা বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ছবিটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন প্রখ্যাত ভারতীয় সঙ্গীত পরিচালক শান্তনু মৈত্র এবং বাংলাদেশ থেকে বাংলা সংলাপ লিখেছেন সাধনা আহমেদ, গিয়াস উদ্দিন সেলিম, শিহাব শাহীন ও আনাম বিশ্বাস। ছবিটির শুটিং ভারতের মুম্বাইতে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় এবং শেষ হয় একই বছরের ডিসেম্বর।