রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাস সুচির

চট্টগ্রাম, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি সব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। যদিও বর্তমান পরিস্থিতি সুচির নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবুও সংকট নিরসনের লক্ষ্যে পর্দার আড়ালে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সুচির সদিচ্ছার কারণে ব্রিটিশ সরকার আশা করে, রোহিঙ্গা সংকটের সুরাহা হবে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় সফররত দুই ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে এই আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

এই দুই প্রতিমন্ত্রী হলেন – ব্রিটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ দফতরের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলসংক্রান্ত প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যালিস্টার বার্ড।

মার্ক ফিল্ড বাংলাদেশ সফরে আসার আগে মিয়ানমার সফর করেন। সেখানে তিনি অং সান সুচির সঙ্গে সাক্ষাৎ ও রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করেছেন।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে ব্রিটিশ এই দুই প্রতিমন্ত্রী বুধবার ২৪ ঘণ্টার জন্য বাংলাদেশ সফরে আসেন। তারা ঢাকায় দুর্যোগ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

মার্ক ফিল্ড বলেন, মিয়ানমার সফরকালে আমি স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। বর্তমান পরিস্থিতির ওপর সুচির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সাংবিধানিকভাবে সামরিক বাহিনী সেখানে অনেক ক্ষমতাধর। তবে সুচি চান, রোহিঙ্গারা বার্মায় ফিরে যাক। এটা ঠিক, রোহিঙ্গাদের বার্মায় ফিরে যাওয়াই মূল ইস্যু। সুচি যুক্তরাজ্যের দীর্ঘদিনের বন্ধু। তিনি গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনি গণতন্ত্রের বিকাশ চান। তার প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রয়োজন। তিনি আমার চোখে চোখ রেখে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের তিনি ফিরিয়ে নেবেন। তার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিপুল সমর্থন আছে।

মিয়ানমারে সুচির ক্ষমতা না থাকায় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তার আশ্বাসের ওপর আস্থা রাখা যায় কিনা- জানতে চাইলে মার্ক ফিল্ড বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, তাই সুচির পাশে আছি। বিপুল জনসমর্থন তিনি পেয়েছেন, তবুও দেশটির মধ্যে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদের বিকাশ রয়েছে। সংবিধানে সামরিক বাহিনীর প্রচুর ক্ষমতা।

ব্রিটিশ এই প্রতিমন্ত্রী বর্তমান সংকট নিরসনে যুক্তরাজ্য সরকারের তিন দফার উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সরকারকে দমন-পীড়ন বন্ধ করতে হবে। রাখাইন রাজ্যে সাহায্য কর্মীদের প্রবেশে অনুমতি দিতে হবে। কফি আনান কমিশনের রিপোর্টের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে। যুক্তরাজ্য সরকারের এ তিন দফা মিয়ানমারকে মানতে হবে।’

ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সার্বজনীন সিদ্ধান্তের পথে অগ্রসর হচ্ছে। এক সময় রোহিঙ্গা সংকটটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ইস্যু ছিল। এখন এটা একটা বৈশ্বিক সংকট। তাই বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সংকটের সমাধান করতে হবে।

মার্ক ফিল্ড বলেছেন, রাখাইন রাজ্যের মানুষকে নিরাপদে রাখার মৌলিক চাহিদা পূরণে মিয়ানমার ব্যর্থ হয়েছে। আমরাই যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সংকটকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নিয়ে গেছি। এখন নিরাপত্তা পরিষদে মুক্ত আলোচনা হচ্ছে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীকে দেয়া প্রশিক্ষণ স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্য। এর মাধ্যমে আমরা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে স্পষ্ট সংকেত দিয়েছি, নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইনে যা করছে তা আমাদের কাছে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের ভ‚য়সী প্রশংসা করে ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে সদিচ্ছা দেখিয়েছে। এজন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ। বাংলাদেশ তাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে। আমরা বাংলাদেশের পাশে আছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের পাশে আছে।

মার্ক ফিল্ড বলেন, কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। এই রিপোর্টের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিস্তৃত সমর্থন আছে। আশা করি, মিয়ানমারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসন করবে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সব ধরনের ক‚টনৈতিক উপায় অবলম্বন করব। জাতিসংঘের মাধ্যমে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাখাইনে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে এটা গণহত্যা কিনা- সেটি আইনগত প্রশ্ন। আমি একজন রাজনীতিবিদ হওয়ায় আইনি প্রশ্নের জবাব আমার কাছে নেই।

কৌশলগত স্বার্থের কারণে চীন ও রাশিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো শক্ত পদক্ষেপ নিলে ভেটো দেবে কিনা- জানতে চাইলে ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে হবে। চীন ও রাশিয়ার সম্ভাব্য ভেটো প্রয়োগের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমরা পর্যায়ক্রমে অগ্রসর হচ্ছি। কূটনৈতিক উদ্যোগের জন্য পর্দার আড়ালে অনেক কাজ হচ্ছে। কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নে কারো কোনো আপত্তি নেই।

ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যালিস্টার বার্ড বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ব্রিটিশ সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। অভাবনীয় সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই পরিস্থিতিতে তাদের আশ্রয় দেয়ার বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। সংকট নিরসনে শক্তিশালী ক‚টনৈতিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই সংকটের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমাধান অবশ্যই বের করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *