বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলে : প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নির্বাচন নিয়ে নোংড়া খেলা খেলে। তারা ক্ষমতায় গেলে মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলে এবং দেশকে পিছিয়ে দেয়। মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলাটা বিএনপি’র চরিত্র। কারণ একটাই ওরা গণমানুষের দল নয়, ওরা মানুষকে পরোয়া করেনা।’ ক্ষমতা ওদের কাছে ভোগের বস্তু লুটের সুযোগ, লুটের মাল। আর বাংলাদেশের মানুষতো তাদের কাছে কিছুই না। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ দুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে কথা বলে। ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তো কথা হয়নি। জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে কেউ তো সে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। ৩০০ সিটের নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ৩০টা সিট পেয়েছে। জাতীয় পার্টি পেয়েছিল ২৭টা সিট। জাতীয় পার্টি আর কয়েকটা সিট পেলে খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা হতে পারতেন না। যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে, তখন দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়। আওয়ামী লীগই দেশের মানুষকে কিছু দিতে পারে। বিএনপিসহ যারাই আগে ক্ষমতায় ছিল, দেশের মানুষকে কিছুই দিতে পারেনি। ২১ বছর এ দেশের মানুষ নির্যাতিত, শোষিত ও বঞ্চিত হয়েছে।

তিনি বলেন, সাংবাদিকরা ভুলে গেছেন, ২০০১ সালে দক্ষিণাঞ্চলে কোনো সাংবাদিক ঢুকতেই পারতেন না। সে অঞ্চলে তান্ডব চালিয়েছিল। গৌরনদী থেকে ২৫ হাজার মানুষ এসে কোটালিপাড়ায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় ৭১’ এর মতো। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তারের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল সম্মেলন সঞ্চালনা করেন ও সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন। পরে তিনি বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও প্রত্যক্ষ করেন।

কাউন্সিলে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাসহ সকল শহীদ, মুক্তিযুদ্ধ এবং সকল গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ২০০২ সালের ৬ জুলাই গঠিত হয় যুব মহিলা লীগ এবং নাজমা আক্তার ও অপু উকিল নেতৃত্বে আসেন। ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ যুব মহিলা লীগের সর্বশেষ সম্মেলনেও পুণরায় নাজমা আক্তার ও অপু উকিলই নেতৃত্বে আসেন।

শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন করলেও দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো প্রহসনমূলক সে নির্বাচন বর্জন করেছিল। জনগণ শুধু নির্বাচন বর্জনই করেনি, এমন গণঅভ্যুত্থান করেছিল যে, খালেদা জিয়া মাত্র দেড় মাসের মধ্যে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি দেশের অসংখ্য মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে, সে কারণে দেশের মানুষ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। খালেদা জিয়া তার গুলশানের অফিসে বসে অবরোধ ডাকলো আর তার আন্দোলন মানে মানুষ পুড়িয়ে মারা।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে সাক্ষরতার হার বাড়ে আর বিএনপি আসলে কমে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া উর্দু আর অংক এই সাবজেক্টে ছাড়া সব বিষয়ে ফেল করেছিলো। উর্দু তার প্রিয় সাবেজক্ট কারণ পাকিস্তান আর অংকে পাস করেছে কারণ টাকা গোনা। জিয়াউর রহমান ইন্টার পাস আর তারেক যে কি পাস কে জানে। আওয়ামী লীগ স্বাক্ষরতার হার বাড়িয়েছিলো, অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা কমিয়ে দেয়। কারণ তারা তো পড়াশোনা করেনি, তাহলে অন্যরা করবে কেন, এই হচ্ছে তাদের মনোভাব। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে জনগণের নয়, বিএনপির উন্নয়ন হয়। হাওয়া ভবন নির্মাণ করে খাওয়া শুরু করে।

ব্যাংকে টাকা নেই বলে যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে বাসায় এনে টাকা রেখেছে। এতে চোরের সুযোগ করে দিয়েছে। যারা গুজব ছড়াচ্ছে এরা চোরের এজেন্ট। তাই গুজবে কান না দিবেন না, দেশের কল্যাণে যে কাজ করে যাচ্ছি সেজন্য সমর্থন চাই। ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার সঙ্গে ’৭১ এর ঘটনার তিনি কোন পার্থক্য দেখতে পান না। কেননা মায়ের সামনে মেয়েকে, আর মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণ করেছে। ’৭৫ থেকে ‘৯৬ পর্যন্ত আর ২০০১ থেকে ২০০৮-এই ২৯ বছর বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে, তাদের ভাগ্যোন্নয়ন হয় তখনই যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।

তিনি বলেন, তারা অনেক অত্যাচার করেছে, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবার অস্ত্রের ঝনঝনানি। এদের দু:শাসন ছিল চরম পর্যায়ে। আমরা  আওয়ামী লীগ অফিসে পর্যন্ত যেতে পারতাম না। কোন রাজনীতি করার সুযোগ ছিলনা। যুব মহিলা লীগ করার পর এই সকল বাধা অতিক্রম করে আমার এই মেয়েরাই রাস্তায় নেমে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। আমি আমার যুব মহিলা লীগের প্রতিটি কর্মীকে অভিনন্দন জানাই, কেননা ঐ সময়ে এই অত্যাচারের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এই মেয়েদেরকে ওরা ছাড়েনি, একদিকে পুলিশ বাহিনী আর একদিকে ছাত্রদল ও বিএনপি’র গুন্ডাবাহিনী অকথ্য নির্যাতন করেছে আমাদের এই মেয়েদের ওপর যা ভাষায় বর্ণনা করা যায়না।

শেখ হাসিনা বলেন, অনেক মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হয়েছে সে অন্ত:স্বত্তাই হোক অথবা সদ্য প্রসূতিই হোক কেউই তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। রাস্তায় ফেলে কাপড় ছিঁড়ে চুল টেনে মেরে তারা যে অত্যাচার করেছে তার কিছুই আমরা তাদের ওপর করিনি। আমরা প্রতিশোধ নিতে যাইনি। আমরা দেশের উন্নয়নের দিকে মনযোগ দিয়েছি। ‘কাজেই বিএনপি মানেই হচ্ছে অত্যাচার-নির্যাতন আর দেশে দু:শাসন, লুটপাট, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই এটাই। নারী নীতিমালাতো বিসর্জন দিলোই নারীর অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নিল। এমনকি এই শামসুন্নাহার হলে ছাত্রদল এবং পুলিশ গিয়ে মেয়েদের ওপর অত্যাচার করেছে। ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মারামারিতে বুয়েটে সনি নামের মেয়েটা মারা গেল। তাদের হাতে যেভাবে আমাদের নেতা-কর্মী বা সাধারণ মানুষ নির্যাতিত, এরপর শোষণ নির্যাতন এবং মানি লন্ডারিং এছাড়া দেশকে তারা কি দিতে পেরেছে, কিছুই দিতে পারেনি, বলেন তিনি।

তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ধরে রেখে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশে কোনো মানুষ কর্মহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। দেশের মানুষের যাতে কোনো কষ্ট না হয় সেভাবেই কাজ করা হচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিনা পয়সায় আমরা ভ্যাকসিন দিয়েছি। কেউ গৃহহীন থাকবে না।  ৩৫ লাখ মানুষকে ভূমিসহ ঘর দিয়েছি। কমিউনিটি ক্লিনিক খালেদা জিয়া বন্ধ করে দিয়েছিল, সেটি চালু করে ৩০ প্রকার ওষুধ ফ্রি দিচ্ছি। গ্রামের মানুষ নিজে হেটে এসে স্বাস্থ্য সেবা নিতে পারে। নারীর ক্ষমতায়নে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। নারীদের সুরক্ষিত রাখতে একাধিক আইন আমরা করে দিয়েছি। ৯৬ সালের আগে মেয়েদের এতো জাগরণ ছিলো না। আজকে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের জয়গান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নারী জাগরণ ঘটিয়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, ‘২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তৃণমূল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় আনা হবে, সেভাবে কাজ চলছে। তারুণ্যের শক্তি দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। দক্ষিণ অঞ্চল এক সময় অবহেলিত ছিল, এখন আর নেই। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসা শুরু করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণ করা হচ্ছে। আমাদের কেউ আটকে রাখতে পারবে না, ইনশাল্লাহ।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *