বগুড়ায় দুটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভোগান্তিতে পাঁচ লাখ মানুষ

বগুড়া প্রতিনিধি, এম নজরুল ইসলাম, ১২ এপ্রিল, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবলের তীব্র সংকট নিয়ে কোনোমতে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। এতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। নানা সমস্যায় জর্জরিত বগুড়ার দুটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দুই উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ।

জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট, এক্স-রে ও এনালাইজার মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। হাসপাতালের কার্যকাল থেকে আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন নেই। আর এতেই চলে প্রতিদিনই ভোগান্তি।

শাজাহানপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্স নেই। অচল হয়ে আছে অপারেশন থিয়েটার। চিকিৎসক সংকট ও এ্যানেস্থেশিয়া মেশিন না থাকায় বেড়েছে ভোগান্তি। বিষয়গুলো একাধিকবার উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা সত্ত্বেও সুফল মেলেনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা ও চিকিৎসক না পেয়ে শহরের বড় হাসপাতাল এবং স্থানীয় ক্লিনিকগুলোতে ছুটছেন সাধারণ রোগীরা। চিকিৎসা নিতে গিয়ে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে ও প্রাপ্ততথ্যে জানা গেছে, নন্দীগ্রাম ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থান সদর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দুরে বিজরুল বাজারে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুইজন মেডিকেল অফিসার উচ্চতর শিক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে দুটি ডাক্তারের পদ শূন্য রয়েছে।

দীর্ঘ সময় ধরে দুইজন মেডিকেল অফিসার না থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যবহত হচ্ছে। তবে সদর সাব-সেন্টার ও ২০ শয্যা হাসপাতাল থেকে দুই মেডিকেল অফিসারকে নিয়ে এসে বিকেলে ও রাতে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। এরই পাশাপাশি হাসপাতাল শুরু থেকেই আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন নেই।

এক বছর ধরে এক্স-রে মেশিন অচল ও দুই বছর ধরে এনালাইজার মেশিন নষ্ট হয়ে রয়েছে। এই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আন্ত:বিভাগ ও বর্হি বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ রোগী আসেন। তাদের মধ্যে অন্তত প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন এক্সরে রোগী, ৩০ জন আলট্রাসনোগ্রাফির জন্য রোগী ও ৪০ জন রোগীকে এনালাইজারের করার জন্য চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

কিন্তু মেশিনগুলো নষ্ট থাকায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সেবা নিতে আসা রোগীরা চরম দূর্ভোগে পড়ছেন। যে কারণে হাসপাতালে কোন জটিল রোগী আসলেই বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অথবা অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে ডাক্তার সংকট ও মেশিনগুলো নষ্ট থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই।

নিজেই রোগী দেখছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. তোফাজ্জল হোসেন মন্ডল।
কয়েকজন রোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে নিয়মিত ডাক্তার সংকট, পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে আছে। ভাল সেবা পাচ্ছেন না কেউই। ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নন্দীগ্রাম উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষ।

এদিকে, শাজাহানপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্স, এ্যানেস্থেশিয়া মেশিন না থাকা এবং মেডিসিন সার্জারি, এ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের কনসালটেন্টসহ বেশকয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে জনবল না থাকায় পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এই উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ।

হাসপাতালে প্রতি কর্মদিবসে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার প্রায় ২০০ জন রোগী বহির্বিভাগে ও ৫০ জন রোগী আন্ত:বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। ড্রাইভার থাকলেই অ্যাম্বুলেন্স নেই। মুমুর্ষ রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্রে স্থানান্তরেরও সুযোগ পাচ্ছে না।

শাজাহানপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. মোতাবর হোসেন জানান, ড্রাইভার থাকলেই এখন পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ মেলেনি। সমস্যাগুলো প্রত্যেক মাসে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *