প্রতিবছরই মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে! ঝিনাইদহের মেডিকেল ছাত্রের ১১বার এক বিষয়ে ফেল, অতঃপর আত্মহত্যা!

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি, মোঃ জাহিদুর রহমান তারিক, ০৭ এপ্রিল, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : মেহেদী হাসান ফারুক ৪ এপ্রিল রাতে তার নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ শহরে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি গত ৫ বছর যাবত ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ার কারণে হতাশায় ভুগছিলেন। তার শুধু মেডিসিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাকি ছিল। তাদের ধারণা তিনি হতাশার কারণেই আত্মহত্যা করেছেন।

চিকিৎসকদের ফেসবুক পেজ প্লাটফর্মের অ্যাডমিন ডা. মারুফুর রহমান অপু লিখেছেন, ছেলেটি সম্ভবত আমার ব্যাচমেট বা এক বছরের জুনিয়র ছিল। সবকিছু ঠিক থাকলে সম্ভবত ২০১২ বা ১৩ সালের দিকে এমবিবিএস পাস করে তার ডাক্তার হওয়ার কথা। এখন ২০১৮ সাল, ছেলেটি বিগত ৫ বছরে শেষ বর্ষের তিনটি সাবজেক্টের দুইটিতে পাস করলেও একটি সাবজেক্টে (মেডিসিন) ১১ বার পরীক্ষা দিয়েও পাস করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে।

আমি এটাকে আত্মহত্যা বলতে রাজি নই। এটি হত্যাকান্ড। একটি ছেলে তার এমবিবিএস কারিকুলামের সব পরীক্ষায় পাস করবে কিন্তু একটি সাবজেক্টে ১১ বার পরীক্ষা দিয়ে ৫ বছরেও পাস করবে না এমনটি হওয়া সম্ভব নয়। আর যদি হয়েই থাকে তাহলে তাকে পড়ানোর দায়িত্ব যেসব শিক্ষকদের তাদের দায়ভার নেই কেন?

ডা. মারুফুর রহমান অপু বলেন, প্রতিবছরই মেডিক্যাল কলেজের কোনও না কোনও শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী আক্ষেপ করে বলেন, ‘একজন ছাত্র ১১ বার একটি বিষয়ে ফেল করলো! কেন করলো? ফেল করার কারণ কি সেই ছাত্রকে বলা হয়েছিল কি?

১১ বার একজন ছাত্র যদি একটি বিষয়ে ফেল করে এবং ইতোমধ্যে অন্য বিষয়ে পাস করে থাকে তবে যারা পরীক্ষা নিয়েছেন তাদের এবং যারা এই পরীক্ষা ব্যবস্থপনায় জড়িত তাদের কি একবারও পরীক্ষা চলমান সময়ে জবাব দিহিতায় আনা হয়েছিল কি? আমরা যারা শিক্ষক-পরীক্ষক, তারা কি জবাবদিহিতার উর্ধ্বে? চলমান পরীক্ষা পদ্ধতি কি যথার্থ?

‘অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমার মতে কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হবে বিষয়টির সার্বিক ভাবে তদন্ত করা। সংশ্লিষ্ট মেডিকেলের ছাত্র ছাত্রীদের আনুষ্ঠানিক ভাবে কলেজের অধ্যক্ষ, ডিন-মেডিসিন ফ্যাকাল্টি, বিএমডিসি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ উপস্থাপন করা উচিত হবে।

‘মেডিকেল অফিসার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান লিখেছেন, এ রকম অনেক উদাহরণ আছে। যেখানে ফেলের পেছনে অন্যের হাত থাকে। দিনাজপুর মেডিকেলের (বর্তমান নাম এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ) একজন ছাত্র ৫বছরে এনাটমি পাস করতে পারেনি। তার বন্ধুরা এখন ইন্টার্নশিপ করছে।

শেষ পর্যন্ত সেই ছেলে পাবনা মেডিকেলে নিজেকে শিফট করেছে। আশা করা যায় এবার সে এনাটমি পাস করবে! এ ব্যাপারে কুমেক উপাধ্যক্ষ ডা. জাহাঙ্গীর আলম ভুইয়া মোবাইলে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। জেনে আপনাদের জানাবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *