নরসিংদীতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগঠক শহীদ বাবলু’র ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী

নরসিংদী প্রতিনিধি, কে. এইচ. নজরুল ইসলাম, ০৮ মার্চ, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগঠক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠণ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের তৎকালীন কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নরসিংদী’র কৃতি সন্তান শহীদ মাহবুবুল হক বাবলু’র ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ব-বিদ্যালয়ের অসম সাহসিকতা, মেধাবী আর বীরত্ব গাঁথায় দেশের ছাত্র রাজনীতিতে যার নাম চির অম্লান সেই ছাত্রনেতার স্মরণে “শহীদ মাহবুবুল হক বাবলু স্মৃতি সংসদ” মনোহরদী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের হরিনারায়ণপুর সমাধী স্থল ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে বিগত সময়ের ন্যায় এবারো দিন-ব্যাপী স্মরণ-সভা, দোয়া, মিলাদ-মাহফিলসহ ব্যাপক গণভোজের আয়োজন করেছে।

৭১’র রণাঙ্গনের মৃত্যুঞ্জয়ী যোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম’র প্রাণপ্রিয় ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসেবে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ঢাকা বিশ্ব-বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রনেতা মাহবুবুল হক বাবলু’র শাহাদাৎ বার্ষিকী নিজ গ্রাম মনোহরদীর হরিনারায়ণপুরে আয়োজিত স্মরণ সভা ও গণভোজ দেশের সর্বস্তরের জনগনের অংশগ্রহণে পালিত হয়ে আসছে।

উল্লেখ্য যে, ৯০ দশকের পূর্ববর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ব-বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র নেতা শহীদ মাহবুবুল হক বাবলুসহ তার ছোট ভাই সানাউল হক নীরু’র দেশপ্রেম, মেধা-মননে, সৃজনশীলতা, অসীম সাহসিকতা, সততা আর পরিশ্রমে সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়েছিল। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এই দুই সহোদর ছাত্রনেতার নেতৃত্বে সহযোদ্ধাদের আমরণ অনশন, স্লোগান মুখর রাজপথ কাঁপানো মিছিল এবং বারুদের আগুনে জ্বলে ওঠে কেঁপেছে ঢাকা বিশ্ব-বিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাস। নীরু-বাবলু’র নেতৃত্বে সেদিন কেঁপেছিল স্বৈরাচারের মসনদ, প্রতিপক্ষের হৃদ-স্পদন. সামরিক বাহিনীর গোলা-বারুদ। ভবিষ্যত ছাত্র নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত এই দুই সহোদর ছাত্রনেতা নৈতিকতার দিক থেকে ছিলেন আপোষহীন।

দেশপ্রেমিক গণতন্ত্রকামী স্বৈরাচারী শাসকের ভীত কাঁপানো দুই সহোদর ছাত্রনেতা কখনো সামরিক জান্তার বন্দুকের নলের সম্মুখে. কখনো জেলখানায় থেকেছেন দিনের পর দিন। নীতি-আদর্শে আপোষহীণ মেধাবী ছাত্রনেতা শহীদ বাবলু’কে দমাতে না পেরে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রে সেদিন নির্মমভাবে প্রাণ হারাতে হয়েছে তাকে। তৎকালীন ছাত্র নেতৃত্বের দৃষ্টান্তকারী মেধাবী ছাত্রনেতা নীরু-বাবলু। যাদের নামের উপর সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীসহ তরুণ প্রজন্মের অন্যতম আলোচিত শ্লোগান ছিল “উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরু, সবায় বলে নীরু-নীরু”, “ জিয়ার সৈনিক বাবলু ভাই , আমরা তোমায় ভুলি নাই ”।

১৯৯০ সালে দীর্ঘ ৩৬ বছর কারাভোগকারী দক্ষিণ আফ্রিকার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বর্ণবাদী নেলসন ম্যান্ডেলা’র মুক্তিকালীন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে একনাগারে দীর্ঘ ৩৭ মাস কারাভোগ শেষে শহীদ বাবলু’র ছোট ভাই সানাউল হক নীরু মুক্তি লাভ করে ছাত্র নেতৃত্বে এক দৃষ্টান্ত সৃস্টি করেছেন। স্বৈরাচারী শাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র রাজনীতির নেলসন ম্যান্ডেলা খ্যাত সানাউল হক নীরু-বাবলু জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল রাজনীতির ৮০’র দশকের এক কিংবদন্তী। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিতে যারা ইতিহাস গড়েছেন তাদের মাঝে নীরু-বাবলু অন্যতম।

১৯৮২ সালের ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশের তেজোদীপ্ত ও আপোসহীন ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসের অন্যতম নেতা, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তী ছাত্রনেতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের মেধাবী ছাত্র শহীদ মাহবুবুল হক বাবলু একই ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের মেধাবী ছাত্রী লুৎফুন নাহার নাজু’কে ভালবেসে বিয়ে করেন। ১৯৮৭ সালের ১০ মার্চের ধর্মঘট বানচাল করতে তৎকালীন স্বৈরাচারী শাসক এরশাদের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা ও তার সৃষ্ট নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ থেকে ফিরে আসা ছাত্র নামধারী বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট ৯ মার্চ মহসিন হলে প্রবেশ করে অতি নিকট থেকে গুলি করে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করেছিল। ছাত্রনেতা শহীদ মাহবুবুল হক বাবলু নিহতকালীন তার সহ-ধর্মিণী লুৎফুন নাহার নাজু অন্তু:স্বত্ত্বা ছিলেন। ১৯৮৭ সালের ১৫ অক্টোবর নাজু’র ঔরশে নাহিন হক নামে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। ভাগ্যের লিখন, না যায় খন্ডন, এমনই খন্ডনে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ব-বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র নেতা শহীদ মাহবুবুল হক বাবলু’র শেষ প্রদীপটুকুও নিভে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *