চৌদ্দগ্রামে এক পরিবারের বিরুদ্ধে ১২টি মাদক মামলা

***মুখ খুললেই নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ***

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, মোঃ আবদুল মান্নান, ১৭ আগস্ট ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামে এক পরিবারের ৬ জনের বিরুদ্ধে ১২টি মাদকের মামলা রয়েছে। ওই পরিবারের একজনের বিরুদ্ধেই রয়েছে ৬টি মামলা। সীমান্তবর্তী ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের এলাকা হওয়ায় সহজেই তারা মাদক গুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একাধিকবার অভিযান চালিয়ে এদেরকে গ্রেফতার ও মাদক উদ্ধার করলেও থেমে নেই তাদের মাদক পাচারের কার্যক্রম।

পরিবারের সদস্যরা হলো; উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের আমানগন্ডা শালুকিয়া গ্রামের মাসুদ রানা ওরফে গোলাম রসুল, তার ভাই রুপ হোসেন ওরফে রুক মিয়া, অপর ভাই ওয়াসিম, রসুল মিয়ার ছেলে রিয়াজ হোসেন রিয়াদ, ভাগিনা সাদ্দাম হোসেন। এ পরিবারের সহজে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। মুখ খুললেই ওই ব্যক্তিদের উপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। এমনকি ঘটে হত্যাকান্ডের মতো জঘন্য ঘটনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্শ্ববর্তী লোকজন জানান, গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে আমানগন্ডা শালুকিয়া গ্রামের মৃত জুলফু মিয়ার ছেলে রুক মিয়া এলাকায় মাদক ব্যবসা করে আসছিল। কয়েক বার তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করলেও জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আমানগন্ডা শালুকিয়া গ্রামটি ভারতীয় সীমান্তবর্তী হওয়ায় তারা নির্বিঘ্নে ভারত থেকে মাদক পাচার করে এনে মহাসড়ক দিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে পাচার করে।

তাঁর অনুসারী হিসেবে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন তার ছোট ভাই গোলাম রসুল, ওয়াসিম, ভাতিজা রিয়া হোসেন ও ভাগিনা সাদ্দাম হোসেন। মাদক পাচার করে বর্তমানে তারা বিপুল পরিমাণ সহায় সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এ পরিবারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে পর পর কয়েকবার আটকের তারা মাদক পাচার ও ব্যবসার কৌশল পাল্টায়।

রুক মিয়া গং ভারত সীমান্ত ঘেষে থাকা মানুষের জমি ড্রেজার দিয়ে কেটে মাছের ঘের তৈরি করে। ঘেরে উৎপাদনকৃত মাছের ব্যবসার আড়াইলে গত কয়েক বছর ধরে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সীমান্ত এলাকায় থাকা রুক মিয়ার মাদকের আখড়ায় ২০১৬ সালে ৩১ জুলাই খুন হন জাহাঙ্গীর হোসেন নামের এক শ্রমিক।

গোলাম রসুলদের পরিবারের নির্যাতনের শিকার মোঃ সামছু জানান, ওই পরিবারের সকল সদস্যই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। আমি সচেতন লোক হিসেবে এর প্রতিবাদ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সহযোগিতা করে একাধিকবার অভিযানে তাদের বেশ কিছু মাদকদ্রব্য আটক করলে ক্ষীপ্ত হয়ে গোলাম রসুলের ছেলে রিয়াজ হোসেন রিয়াদের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর আমাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে।

এ ঘটনায় আমি চৌদ্দগ্রাম থানায় ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করি। পরবর্তীতে পিবিআই তাদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করে। গোলাম রসুলের ছেলে রিয়াদের হেলমেট বাহিনী একটি সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে বলে সামছু দাবি করেন। এরপরও তারা এখনও মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সামছুর মতো এভাবে গোলাম রসুলের পরিবারের নির্যাতনের শিকার হয়েছে অনেকে। যারা ভয়ে মুখ খুলছেন না বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।

কুমিল্লা গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই রোববার রাত ১২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৭৪ কেজি গাঁজাসহ মো. মাসুদ রানা প্রকাশ গোলাম রসুলকে নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে। তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা পুলিশ বাদি হয়ে মাদক আইনে একটি মামলা করে।

চৌদ্দগ্রাম থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ আগস্ট সকালে গোলাম রসুলের পুত্র রিয়াজ হোসেন রিয়াদের ঘর থেকে ৫০ কেজি ভারতীয় গাঁজা উদ্ধার করেছে পুলিশ। চৌদ্দগ্রাম থানার সেকেন্ড অফিসার উপ-পরিদর্শক মনির হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৯ আগস্ট রিয়াজ হোসেন রিয়াদের এক ছালা ঘর থেকে প্যাকেটভর্তি ৫০ কেজি ভারতীয় গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গোলাম রসুলের ছেলে রিয়াজ হোসেনকে প্রধান আসামী করে মাদক আইনে মামলা দায়েরের পর থেকে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত পরিবারের অন্য সদস্যরা গা ডাকা দিয়েছে।

চৌদ্দগ্রাম থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে রুক মিয়ার বিরুদ্ধে ৬টি, গোলাম রসুলের বিরুদ্ধে ১টি, ওয়াসিমের বিরুদ্ধে ১টি, গোলাম রসুলের ছেলে রিয়াজ হোসেনের বিরুদ্ধে ২টি ও তাদের ভাগিনা সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে ৩টিসহ ১২টি মাদক মামলা রয়েছে।

কুমিল্লা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সত্যজিৎ বড়ুয়া বলেন, কুমিল্লা পুলিশ সুপারের নির্দেশে আমরা মাদক ব্যবসায়ীদের আটক এবং মাদক নির্মূলের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, আইজি মহোদয় ও কুমিল্লা পুলিশ সুপার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে রয়েছে। স্যারদের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা চৌদ্দগ্রামে মাদক ব্যবসায়ীদের আটক ও মাদক উদ্ধারের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল। মাদক ব্যবসার যারাই জড়িত থাকবে-তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *