চৌদ্দগ্রামে অপরাধ কান্ডে বাধা দেয়ায় কুপিয়ে হত্যা; আহত ৭, গ্রেফতার ৪
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, মোঃ আবদুল মান্নান, ১১ মে ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে বাধা দেয়ায় ক্ষীপ্ত হয়ে হামলা চালিয়ে আমজাদ হোসেন শিপন (৩৪) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। নিহত শিপন পেশায় একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক। সে উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের বসকরা গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে। সন্ত্রাসীরা শিপনের পরিবারের আরও ছয় সদস্যকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে। পুলিশ এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে শাহ আলম, শাকিল, দিদারুল আলম ও শাকিব নামে ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় নিহতের মা মনোয়ারা বেগম বাদি হয়ে ১০ জনের উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৬ জনের নামে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
নিহত শিপনের মা মনোয়ারা বেগমের দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করা হয়, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিপক্ষের লোকজন বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছে। শিপন ও তার পিতা আমির হোসেন তাদের বাধা দিলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বিষয়টি গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে ক্ষীপ্ত হয়ে তারা শিপন ও আমির হোসেনকে হত্যার জন্য খুঁজতে থাকে। এ পর্যায়ে রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আমির হোসেন, তার ছেলে শিপন ও আবু বক্কর মেশিনের সাহায্যে ধান নেওয়ার সময় ১৫-১৬ জনের ধারালো অস্ত্র নিয়ে তিনজনের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তাদের চিৎকার শুনে বাড়ির লোকজন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা নারী-পুরুষ সকলকে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে। হামলায় শিপনসহ ৭ জন আহত হন।
খবর পেয়ে আশ-পাশের লোকজন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার শেষে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আমজাদ হোসেন শিপনকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাৎক্ষণিক পুলিশ লাশটি উদ্ধার ও ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করে। সোমবার লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ পাঠানো হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মামলার আসামী ও আটককৃতরা চার বছর আগে কৃষি জমিতে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে একই গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে সোহাগকে মারধর করে গুরুতর আহত করে। কিছুদিন পর সোহাগ মারা যায় বলে অভিযোগ করেছেন তার মা পারুল বেগম। স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, ওই গ্রামের আবুল কালাম নামের এক ব্যক্তি হুন্ডি ব্যবসার আড়ালে বখাটেদের দিয়ে এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি চালিয়ে আসছে। তার নেতৃত্বে বখাটেদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
সোমবার সরেজমিন গেলে নিহত আমজাদ হোসেন শিপনের ভাই আবু বক্কর অভিযোগ করে বলেন, সন্ত্রাসী চক্রের বিরুদ্ধে স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহেল মজুমদারের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করলে তিনি আমাদের কাছে দেড় লাখ দাবি করেন। এরমধ্যে আমরা ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করে। বাকি টাকা পরিশোধ না করায় মেম্বার সোহেল মজুমদার তাদের কোন বিচার করেনি। ইউপি সদস্যদের সামনেই সন্ত্রাসীরা আমার ভাই আমজাদ হোসেন শিপনকে কুপিয়ে হত্যা করে। তিনি একবারও সন্ত্রাসীদের বাধা দেননি।
এ বিষয়ে কনকাপৈত ইউপি সদস্য সোহেল মজুমদার বলেন, ‘দেড় মাস আগে একটি দোকান ভাংচুরের ঘটনা মিমাংশা চেষ্টা করেছি। কেউ ঘটনাটি মিমাংশায় রাজি হয়নি। তাই টাকা দাবির অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কুচক্রী মহলের প্রলোভনে পড়ে শিপনের পরিবার টাকা দাবির মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি’।