রোহিঙ্গা ইস্যুতে চাকমা সার্কেল চিফের উদ্বেগ্ন

ঢাকা, ০১ অক্টোবর, ২০১৭, (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের প্রতি সরকারের বৈষম্যমূলক, হিংসাত্মক ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। আজ রোববার দুপুরে রাঙামাটি শহরের চাকমা রাজবাড়িতে তাঁর নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি।

দেবাশীষ রায় জানান, রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে কয়েক লাখ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী, পুরুষ ও শিশুর মর্মান্তিক অবস্থায় আগমনে চাকমা সার্কেলের অধিবাসীরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ‘মৌলিকভাবে আমরা বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের সঙ্গে সহমত পোষণ করি। এই শরণার্থীদের যথা শিগগির সম্ভব তাঁদের নিজ নিজ গ্রামে, সম্মানজনকভাবে, নিরাপদে ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান সাপেক্ষে প্রত্যাবর্তনের উদ্দেশে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

চাকমা সার্কেল চিফ বলেন, ‘তবে যত দিন পর্যন্ত তা সম্ভব না হয়, তাঁদের বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে যথাযথ আশ্রয় প্রদান করা বাংলাদেশ সরকারের এবং দেশের মানুষের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার, সংশ্লিষ্ট জাতিসংঘের সংস্থা ও বেসরকারি সংগঠনের কাছে পর্যাপ্ত আর্থিক ও অন্যভাবে যথাযথ সহায়তা প্রদানের জন্য দেশের নাগরিক ও আন্তর্জাতিক মহলকে আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরে রাখাইন রাজ্যের শরণার্থীদের প্রতি তাঁদের স্বদেশে অত্যাচার ও বাংলাদেশে তাঁদের আগমনকে ঘিরে নানা প্রচার, অপপ্রচার, গুজব এবং সীমিত পর্যায়ের হিংসাত্মক ঘটনা বা সে রকম ঘটনার উসকানির কথা আমরা জানতে পেরেছি। চট্টগ্রাম, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে কর্মরত বা বসবাসরত পার্বত্য চট্টগ্রামের একাধিক পাহাড়ি ব্যক্তি তাঁদের জাতিগত বা ধর্মগত পরিচয়ের কারণে কটাক্ষ উক্তি, হুমকি এবং হিংসাত্মক ও অন্যভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের শিকার হয়েছেন মর্মে আমরা জেনেছি, এটা সংশয়ের বিষয় এবং আমরা এ ব্যাপারে তীব্র নিন্দা জানাই।’

দেবাশীষ আরো বলেন, ‘যেহেতু বার্মার সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং শরণার্থীদের সিংহভাগ মুসলিম ধর্মাবলম্বী, বিষয়টাকে অহেতুকভাবে ধর্মগত সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব হিসেবে কোনো কোনো মহল থেকে অপব্যাখ্যা প্রদান করা হচ্ছে। এসবের অসংযত বহিঃপ্রকাশের ফলে সাম্প্রদায়িকতা বেড়ে যাচ্ছে এবং অহেতুকভাবে দেশের বৌদ্ধদের রাখাইন রাজ্যের মুসলমানদের নিপীড়নের জন্য দায়ী করা হচ্ছে। তবে বাস্তবে দেখা যায় যে, মিয়ানমার সরকারের হাতে, বিশেষ করে সামরিক শাসনামলে, নিপীড়নের শিকার হয়েছে শুধু অবৌদ্ধ সম্প্রদায় নয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সংখ্যাগুরু বার্মার সম্প্রদায় এবং শ্যান, রাখাইন, মোন, ক্যারেনসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নরনারী ও অগণিত ক্ষেত্রে অত্যাচার ও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।’

দেবাশীষ রায় আরো বলেন, ‘মানবাধিকারের দৃষ্টিতে, আন্তঃরাষ্ট্রীয় শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে, এবং বাণিজ্যের কারণে সীমান্তের উভয় দিকে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠীগুলোর সৎভাব বজায় রাখা অপরিহার্য। একই কারণে বাংলাদেশে বসবাসরত নাগরিকদের, বাঙালি, পাহাড়ি ও অন্যান্য আদিবাসী, মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্ম বা আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যেও সৎভাব বজায় রাখতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের সজাগ থাকতে হবে যাতে রোহিঙ্গাদের কোনো অংশের কোনো রকমের সশস্ত্র ও অন্যান্য হিংসাত্মক কার্যকলাপ বাংলাদেশে বা বার্মার মাটিতে সংঘটিত না হয়।’

চাকমা সার্কেল চিফের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাঙামাটির পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছেন, রাঙামাটিতে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেনি, একজন রোহিঙ্গা রাঙামাটিতে আসার খবর পেয়ে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে আবার কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। রোহিঙ্গারা যেন রাঙামাটিতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য শহরের ছয়টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। কোনো রোহিঙ্গা প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য পুলিশও সতর্ক আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *