শেষ হলো অমর একুশে গ্রন্থমেলা, মোট বিক্রি সাড়ে ৬৫ কোটি টাকা
ঢাকা, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : শেষ হলো মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭। সেই সঙ্গে ভাঙ্গলো লাখো-কোটি বাঙালির মিলনমেলা। বাংলা একাডেমি আয়োজিত এবারের গ্রন্থমেলায় মোট বই বিক্রি হয়েছে ৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার। মাসজুড়ে মেলায় মোট নতুন বই এসেছে ৩ হাজার ৬৪৬টি। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মোট ৮৬৭টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। আজ গ্রন্থমেলার সমাপনী দিনে নতুন বই এসেছে ১৮০টি।
সন্ধ্যায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ ইব্রাহীম হোসেন খান। সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
শুভেচ্ছা বক্তৃতা দেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গ্রন্থমেলা আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমরা আজ পৃথিবীর দীর্ঘতম গ্রন্থমেলার সমাপন ঘটাতে যাচ্ছি। এত দীর্ঘ গ্রন্থোৎসবের আয়োজন আমাদের জন্য বিপুল গৌরবের ব্যাপার। এই গ্রন্থমেলা কেবল বিকিকিনির মেলা নয় বরং চেতনার অভূতপূর্ব মিলনোৎসবও বটে।
মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান শান্তিপূর্ণভাবে গ্রন্থমেলা শেষ হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকায় এবারো নির্বিঘ্নে গ্রন্থমেলা শেষ করা গেছে। ধর্মীয় মৌলবাদীদের হুমকির কথা মাথায় রেখে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। তাই কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়াই সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭।
মাসব্যাপি মেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করে ড. জালাল আহমেদ বলেন, ২৮ দিনের মেলায় নতুন বই এসেছে ৩ হাজার ৬৪৬টি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মোট ৮৬৭টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন ৩৬৪৬টি বইয়ের মধ্যে ৮৫৮টি মানসম্পন্ন বই এবার মেলায় এসেছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি আশার কথা। এক বছরের গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে ৮৫৮টি মানসম্পন্ন বইয়ের প্রকাশ সহজ কথা নয়।
মেলার কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বলেন, ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্টল মালিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও আজকের সম্ভাব্য বিক্রি যুক্ত করে এবারের গ্রন্থমেলায় মোট বিক্রি হয়েছে ৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার বই।
তিনি বলেন, ২০১৬, ২০১৫ ও ২০১৪ সালের গ্রন্থমেলায় যথাক্রমে মোট বিক্রি হয়েছিল ৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২১ কোটি ৯৫ লাখ ও ১৬ কোটি টাকা। মেলার পরিসর ও প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় গতবারের তুলনায় এবার প্রায় ২৫ কোটি টাকার বই বেশি বিক্রি হয়েছে।
সদস্য সচিব বলেন, বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বইয়ের চাহিদা সব সময়ই থাকে। এবারও মেলায় বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়নসহ বিভিন্ন স্টল ও বিক্রয় কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ি ২৭শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমি মোট ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩০৬ টাকার বই বিক্রি করেছে।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ২৯ দিনব্যাপি পুরো মাসের তুলনায় এই বিক্রি প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা বেশি। তাই আজকের বিক্রি-সহ বাংলা একাডেমির মোট বিক্রি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবে। ধারণা করা হচ্ছে একাডেমির বিক্রিত বইয়ের পরিমাণ হবে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
সদস্য সচিব বলেন, ২০১৬, ২০১৫ ও ২০১৪ সালে বাংলা একাডেমি যথাক্রমে বই বিক্রি করেছে ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, ১ কোটি ৫৮ লাখ ৩৫ হাজার ২৫৮ টাকা ও ১ কোটি ১৮ লাখ ৯ হাজার ১৭৬ টাকা।
নীতিমালা ভঙ্গের জন্য ১৯টি স্টল চিহ্নিত করা হয়েছে উল্লেখ করে ড. জলাল বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলার নীতিমালা ও নিয়মাবলি লঙ্ঘন করায়, টাস্কফোর্সের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০টির বিরুদ্ধে নীতিমালার ৬.১ ধারা অর্থ্যাৎ বিদেশি বই বিক্রির এবং ৯টির বিরুদ্ধে নীতিমালার ১৩.১৩ ও ১৩.১৪ ধারা লঙ্ঘন অর্থাৎ পাইরেটেড বই বিক্রির অভিযোগ টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিদেশী বই বিক্রি করা প্রকাশনা সংস্থাগুলোর মধ্যে- নবদ্বীপ, আবিস্কার, কাগজ, জ্যো¯œা উল্লেখযোগ্য। পাইরেটেড বই বিক্রয়কারী প্রকাশনা সংস্থাগুলো হচ্ছে- হোলি প্রকাশন, রেজা প্রকাশন, শিশু সাহিত্য, বই পড়ি, রাতুল প্রকাশন, প্রিয় প্রকাশ, মেলা ইত্যাদি।
গ্রন্থমেলা ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধন প্রসঙ্গে সদস্য চিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পহেলা ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপি গ্রন্থমেলা ও অনুষ্ঠানমালার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এবারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে চীন, অস্ট্রিয়া, পুয়ের্তোরিকো, জার্মানি, ভারত প্রভৃতি দেশের কবি-সাহিত্যিকেরা বক্তব্য রাখেন। চারদিনের আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনে প্রথম দিনের উদ্বোধন অনুষ্ঠান ছাড়া আমন্ত্রিত বিদেশি ও দেশি অতিথি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে ১৬টি পর্বে বক্তব্য/প্রবন্ধ উপস্থাপন/আলোচনা/স্বরচিত কবিতা পাঠ ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, মেলাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন কেবল বিশ্ব পরিসরে আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে সহায়ক হয়নি, গ্রন্থমেলা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণেও সহায়তা করে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চায় অবদানের জন্য প্রবাসী বাঙালি লেখক শামীম আজাদ ও নাজমুন নেছা পিয়ারীকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ পুরস্কার-২০১৬ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হয়।
অমর একুশে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে ২০১৬ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য জার্নিম্যান বুকস্কে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০১৭ এ ভূষিত করা হয়েছে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য রফিকুন নবীর দেশসেরা জগৎসেরা শিল্পীকথা গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশন, পাভেল রহমানের সাংবাদিকতা আমার ক্যামেরায় গ্রন্থের জন্য মাওলা ব্রাদার্স, রনজিত কুমার ম-লের আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় গ্রন্থের জন্য পুথিনিলয়কে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৭, ২০১৬ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য চন্দ্রাবতী একাডেমিকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০১৭ এবং ২০১৭ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাতিঘর, সংবেদ ও পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড-কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৭ প্রদান করা হয়েছে।