পরিবেশ বাঁচাতে সরকারের উন্নয়ন চিন্তার পরিবর্তন জরুরি

ঢাকা, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট সম্পূর্ণ মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ রাখাইন রাজ্যকে বিদেশী কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করতে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারের দমন-পীড়নের শিকার। তবে উন্নয়নের নামে বাংলাদেশ সরকার যেসব পরিবেশ বিধ্বংসী প্রকল্প হাতে নিয়েছে, ভবিষ্যতে তা রোহিঙ্গা সংকটকেও ছড়িয়ে যাবে। তাই মানুষ ও পরিবেশ বাঁচাতে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে।

গতকাল রাজধানীতে সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড) কর্তৃক আয়োজিত ‘মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়: পাহাড়, উপকূল, রোহিঙ্গা সংকট ও বনাঞ্চল প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। আরো উপস্থিত ছিলেন সেডের পরিচালক ফিলিপ গাইন ও বিশপ থিওটোনিয়াস গোমেজ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ এবং তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. শহিদুল ইসলাম ও স্থপতি হ্যান হ্যান।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সহিংসতাকে বিশ্ব পুঁজিবাদের ফল হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ। বর্তমান মিয়ানমার সরকার এই সম্পদকে বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার জন্যই স্থানীয় রোহিঙ্গা ও রাখাইনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাইছে। যার ফলে রোহিঙ্গারা দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকটকে সম্পূর্ণ মানবসৃষ্ট দুর্যোগ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের দুর্যোগ আগে হয়নি। প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ নিপীড়িত লোক এসেছে। তাদের নথিভুক্ত করা জরুরি।

বর্তমানে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এই হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া সুন্দরবনের গুরুত্ব সরকারের কাছে নেই। সরকার নাকি নতুন সুন্দরবন তৈরি করবে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট দেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। কিন্তু বিভিন্ন জলাশয় ভরাট ও পরিবেশ নষ্ট করে যেসব উন্নয়নের কাজ হচ্ছে, এর ফলে ভবিষ্যতে অনেক মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে, যার ভয়াবহতা রোহিঙ্গা সংকটকেও ছড়িয়ে যাবে। এই মুহূর্তে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিবর্তন জরুরি।

বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যা একটি নির্দিষ্ট কারণে হচ্ছে না উল্লেখ করে সভাপতির বক্তৃতায় ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ভূরাজনৈতিক, উন্নয়ন চিন্তার ঘাটতি, সুশাসনের অভাব, মুখোশের আড়ালে ঔপনিবেশিক চিন্তা এ ধরনের দুর্যোগের প্রধান কারণ। এ অবস্থায় চিন্তার পরিবর্তন করতে হলে সামাজিক আন্দোলন করা দরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *