মাদারীপুর নারী সাংবাদিক সহ তিন সাংবাদিকের উপর হামলাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ সভা
মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি, আরিফুর রহমান, ১৪ মার্চ ২০২০ ইং, (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : মাদারীপুর এলজিইডি অফিসের উচ্চমান সহকারীর (ইউডিএ) বিরুদ্ধে এক নারী সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এতে সাবরিন জেরিন (২৫) নামের ওই সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তিনি ‘আজকের বিজনেস বাংলাদেশ’ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার এবং আমাদের নতুন সময় পত্রিকার মাদারীপুর প্রতিনিধি।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাকে বাঁচাতে এসে তার স্বামী সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মামুনও (৩৬) আহত হন। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার মাদারীপুর প্রতিনিধি।মঙ্গলবার (১০ মার্চ) সন্ধ্যায় এই ঘটনার পর রাতেই মাদারীপুর সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আহত জেরিন মাদারীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তার স্ত্রী সাবরিন জেরিন মঙ্গলবার দুপুরে বিজ্ঞাপন সংগ্রহের জন্য এলজিইডি অফিসে গিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করেন। তখন একটি বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আখতার। সন্ধ্যা ৭টার পর ওই অফিসের উচ্চমান সহকারী (ইউডিএ) নাসির উদ্দিন বিজ্ঞাপন নেওয়ার জন্য সাবরিন জেরিনকে মোবাইল ফোনে কল দেন। ফোন পেয়ে তিনি এলজিইডি অফিসে যান।
কিন্তু, তাকে বসিয়ে রাখার পর বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না বলে জানান নাসির উদ্দিন। তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করেন। পরে জেরিন নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আখতারের কক্ষে গিয়ে বিষয়টি জানান। তিনি আরও জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী তাৎক্ষণিক নাসির উদ্দিনকে ডেকে বিজ্ঞাপন না দেওয়ার কারণ জানতে চান এবং বিষয়টি সমাধান করতে বলেন। এরপর জেরিন ইউডিএ’র কক্ষে অবস্থান করতে থাকেন।
নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেওয়ায় ইউডিএ নাসির উদ্দিন ক্ষিপ্ত হয়ে জেরিনের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। বিষয়টি তিনি মামুনকে জানালে তিনিও ওই অফিসে যান। মামুন উপস্থিত হলে জেরিন কাঁদতে থাকেন। এ সময় তিনি (মামুন) তার স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে ইউডিএ নাসির উদ্দিন ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ শুরু করেন ও মারধরের জন্য তেড়ে আসেন।
তখন ওই কক্ষে ও বাইরে থাকা একাধিক ঠিকাদার এগিয়ে এলে ইউডিএ সাংবাদিকদের মারতে নির্দেশ দেন। তার নির্দেশ পেয়েই ঠিকাদার ও তাদের সহযোগীরা ১২ থেকে ১৫ জন মিলে সাংবাদিক দম্পতিকে বেদম মারধর করে। একপর্যায়ে জেরিনের তলপেটে লাথি মারা হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। একপর্যায়ে তাদের বাঁচাতে এগিয়ে গেলে দৈনিক নবচেতনা পত্রিকার সাংবাদিক আরিফুর রহমানকে ও (২৮) মারধর করা হয়।
সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘তারা অফিসের দরজা ও কলাপসিবল গেট আটকে আমাদের মারধর করেছে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে রাতেই থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। আমাদের ওপর হামলার ভয়াবহতা অফিসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই বোঝা যাবে।
’মাদারীপুরের কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি আয়শা সিদ্দিকা আকাশী বলেন, ‘বাইরের কোনও জায়গায় নয়, একটি সরকারি অফিসে সরকারি কর্মচারীর দ্বারা এমন ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এর উপযুক্ত বিচার চাই। ’বুধবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় মাদারীপুরের মৈত্রী মিডিয়া সেন্টার নামে একটি সাংবাদিক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ সভা করা হয়েছে।
প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান বাদল, জহিরুল ইসলাম খান, এসএম আরাফাত, সঞ্জয় কর্মকার অভিজিৎ, ফরিদ উদ্দিন মুপ্তী ও মাসুদুর রহমানসহ অনেকে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাদারীপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি শাহজাহান খান, কার্যকরী সদস্য ইয়াকুব খান শিশির, সহ-সম্পাদক মনির হোসেন বিলাস, নারী বিষয়ক সম্পাদক আঞ্জুমান জুলিয়াসহ অন্য সদস্যরা। তারা ঘটনার পরপরই সদর থানায় গিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
মাদারীপুর সদর থানার ওসি কামরুল ইসলাম মিঞা জানান, এলজিইডি অফিসের ঘটনায় সদর থানায় পাল্টাপাল্টি দুটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে মাদারীপুর এলজিইডি অফিসের উচ্চমান সহকারী (ইউডিএ) নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সাংবাদিক মামুন আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে অফিসে উপস্থিত ঠিকাদাররা প্রতিবাদ করেন। এতে তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা, হাতাহাতি ও মারামারি হয়।
আমি কোনও সাংবাদিকদের গায়ে হাত দেইনি। এছাড়া আমি সরকারি কর্মচারী। তাই অফিসে যে ঘটনা ঘটেছে, সেই বিষয়টি নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ’মাদারীপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আখতার বলেন, ‘আমাদের অফিসে যে ঘটনা হয়েছে, এটা অপ্রত্যাশিত। এতে আমরা সবাই বিব্রত। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে, তা বিবেচনা করে বিষয়টি সমাধান হবে বলে আমরা আশা করছি।
’মাদারীপুর জেলা পুলিশের মুখপাত্র (গণমাধ্যম) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) বদরুল আলম মোল্লা বলেন, ‘খবর শুনে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দুই পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আমরা হাসপাতালে গিয়ে ওই নারী সাংবাদিককে দেখে এসেছি। দুই পক্ষই অভিযোগ দিয়েছে, আমরা এটা তদন্ত করছি। তদন্তসাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।