কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম গ্যাস ও বিদ্যুৎ আছে, নেই হাঁটার রাস্তা!
*সরু রাস্তা দিয়ে লাশের খাঁটিয়া নিতে পারেনি স্বজনরা*
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, মোঃ আবদুল মান্নান, ২১ জানুয়ারি, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : গ্যাস ও বিদ্যুৎ আছে। নেই হাঁটার জন্য পর্যাপ্ত রাস্তা। সরু রাস্তা নিয়ে কোন রকম একজন মানুষ যাতায়াত করতে পারলেও মারা গেলে খাঁটিয়া বা কোন অনুষ্ঠানের জন্য মালামাল অন্যের জমির উপর দিয়ে বহন করতে হয়। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিষয়টি দেখেও যেন না দেখার ভান করে। এনিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের গোলাইকরা গ্রামের উত্তর পাড়ায় মহাসড়ক থেকে দুইশ মিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত মনির সওদাগর বাড়িতে ১৪ পরিবার বাস করে। সেখানে ৮০ জনেরও বেশি ভোটার রয়েছে। প্রতিবারই নির্বাচনের সময় এমপি, চেয়ারম্যান, মেম্বার প্রার্থীরা রাস্তাটি নিয়ে সমস্যার সমাধান করে দিবে আশ্বাস দিয়ে ভোট আদায় করেন। কিন্তু ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর রাস্তা নিয়ে তাদের সহযোগিতা পাওয়া যায় না।
১৪ পরিবারের ছেলে-মেয়েরা পাশ্ববর্তী পদুয়া সুফিয়া রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, পদুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভাজনকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। আর শ্রমজীবিরা দেশ ও বিদেশের বিভিন্নস্থানে কর্মরত রয়েছে। কাজের জন্য সবাইকে বাড়ির বাইরে যেতে হয়। কিন্তু যাতায়াতের সমস্যাটি তাদের একমাত্র সমস্যা হিসেবে বিরাজ করছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মঙ্গলবার ওই বাড়ির বৃদ্ধা মৃত সামছুন নাহারের লাশ সরু রাস্তা দিয়ে বহন করতে না পেরে অন্যের জমির উপর দিয়ে নিতে হয়েছে। ওই বাড়ির অন্য মানুষ মারা গেলেও একই রকম ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী আবদুর রাজ্জাক, আবদুল মালেক, ফজলুল হক, জাহাঙ্গীর হোসেন, আলমগীর হোসেন, মফিজুর রহমানসহ পাশের বাড়ির লোকজন অভিযোগ করে বলেন, একটি জায়গা ক্রয় করাকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে মৃত বেছু মিয়ার পুত্র এবাদুল হক, সামছুল হক, একরামুল হক ও পাশ্ববর্তী ছালেহ আহমদ গং সরু জায়গা রেখে সাইড ওয়াল দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করে। ওই সরু জায়গা দিয়ে ছোট ছেলে-মেয়েরা হাঁটতে ভয় পায়। একটু মোটা মানুষ তো রাস্তায় উঠতে পাশ্ববর্তী জমির উপর দিয়ে যেতে হয়।
এদিকে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে মৃত ছেরু মিয়ার পুত্র এবাদুল হক অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করতে থাকেন।
ভুক্তভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাড়িতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ থাকলেও তারা হাঁটার রাস্তাটির সমস্যায় ভুগছেন। এনিয়ে সাবেক রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক, উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সোবহান ভুঁইয়া হাসান, ভাইস চেয়ারম্যান এবিএম এ বাহার, আলকরা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক হেলালসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
আলকরা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক হেলাল বলেন, ‘রাস্তাটি আরও চওড়া করা পিছনের বাড়ির লোকজনের জন্য অতীব জরুরী। তবে আমি উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করে যাচ্ছি’।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি সাইফুর রহমান বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা দেওয়ানী মামলা করলে আদালত রাস্তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবে’।