শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর
ঢাকা, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ বেদীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শহীদ বেদীর সামনে কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বিউগলে করুন সুর বাজানো হয়। শহীদদের সম্মানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে একে একে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানায় কেন্দ্রীয় ১৪ দল, শহীদ পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী সমাধিসৌধে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের মানুষ শহীদদের স্মরণে নির্মিত বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। আজ শনিবার সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের পক্ষ্য থেকে রাজধানীর রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী সমাধিসৌধে এই শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এ সময়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম ও মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল কাদের মোল্লাকে শহীদ বলায় ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এখনও যেসব অপশক্তি সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে তাদের মূলোৎপাটন করা হবে।’ এছাড়াও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ. আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, লালমাটিয়া বালিকা বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়সহ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকরাও এসেছিলেন রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে।
এদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর। ‘স্মৃতিতে রায়েরবাজার বধ্যভূমি’ শীর্ষক এ অবস্থান কর্মসূচিতে খেলাঘরের সদস্যরা সাদা কাপড় পরে চোখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান নেন। এছাড়া একাত্তরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে বধ্যভূমিতে যেভাবে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল, অভিনয়ের মাধ্যমে সেই প্রতীকী দৃশ্য রচনা করেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন খেলাঘরের সদস্যরা। শিল্পকলা অ্যাকাডেমির উদ্যোগে ছিলো যন্ত্রসঙ্গীত, গান, কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি অনুষ্ঠানে। যাতে বক্তব্য রাখেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। আয়োজনে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বরলিপি ও মাইনুল আহসান।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের আগ মুহূর্তে ১৪ ডিসেম্বরের এ দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর আলবদর, আল শামস ও রাজাকাররা জাতিকে মেধাশূন্য করতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ নির্মম হত্যাকান্ডের মাত্র দু’দিন পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।