সার্জেন্ট মুমিন কথায় কথায় গায়ে হাত তোলে
বগুড়া প্রতিনিধি, এম নজরুল ইসলাম, ১৭ জুন, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : মোকামতলার সার্জেন্ট এম এ মুমিন সাহেব স্থানীয়দের তদবিরে গাড়ি ছাড়েন। স্থানীয় সাংবাদিকসহ রাজনৈতিক নেতাদের বন্ধুভাজন। আমরা সার্জেন্ট মুমিন সাহেবকে ব্যবহার করি। ভাই আপনি আমাদের পরিচিত, আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে দয়া করে মুমিন সাহেবকে নিয়ে আর লিখবেন না !
কথাগুলো মুঠোফোনে বললেন, বগুড়ার মোকামতলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক রবিউল হাসান মাসুদ। তিনি বলেন, আমরা সুবিধা পাই, তাই সার্জেন্ট সাহেবের পক্ষে বলতেছি। কি বলব ভাই, আমরা তদবির করলে উনি সব শুনেন এবং আমাদের উপকার করে। আমাদের এলাকায় জাপার সংসদ সদস্য, এজন্য তিনি আমাদের সব ধরণের তদবির-আবদার রাখেন। আপনি সাংবাদিক হলেও আমাদের দলের, তাই আপনাকে কথাগুলো বলছি। বিষয়টি দেখবেন ভাই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোকামতলার স্থানীয় কয়েকজন দোকানি বলেন, ভাই সার্জেন্ট মুমিনের সাথে স্থানীয় সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সখ্যতা বেশী। আমরা মুখ খুললে বিপদ আসতে পারে। মারপিটের ঘটনা নতুন কিছু নয়। গত মঙ্গলবার (১২ জুন) মোকাতলার বাজার এলাকায় স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট এমএ মুমিন ঢাকা-মেট্রো-চ- ১৫-০৩৯৮ মাইক্রোবাস থামিয়ে ড্রাইভার নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর এলাকার উমেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে ড্রাইভার লোকনাথ চন্দ্রকে বেধরক মারপিট করেন।
কাগজপত্র ঠিক থাকলেও সিগনাল অনুযায়ী গাড়ি থামাতে একটু দেরি হয়েছিল বলে দাবি ওই ড্রাইভারের। এ ঘটনায় ড্রাইভারের শরীরে আঘাতের দাগ ও মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে ১৪ জুন (বৃহস্পতিবার) বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে, তা ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
এনিয়ে তোলপাড়ের একপর্যায়ে ১৪ জুন রাত ১০টা ৩৬ মিনিটে একটি নাম্বার থেকে ফোন করে সাংবাদিককে ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে বলা হয়, আপনি মোকামতলার সার্জেন্ট মুমিনের নিউজ ফেসবুকে শেয়ার করেছেন কেন ? ভালো থাকতে চাইলে ডিলিট করুন। বাড়ি কই আপনার। আপনি কি জামাত করেন ? কাল টের পাবেন। খুঁজে বের করব। ক্রসফায়ার হবেন।
এরপর হুমকির বিষয়ে সার্জেন্ট এমএ মুমিন মুঠোফোনে বলেন, কে ফোন করেছে, তা আমি জানিনা। ভাই আমি সাংবাদিকদের তদবির শুনি, রাজনৈতিক নেতাদের তদবিরও শুনি। সবার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। তবে এক বড় কর্মকর্তার সাথে আমার ভালো যাচ্ছে না। ওই ড্রাইভারই আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছে। আমি মারি নাই।
এদিকে, নির্যাতনের শিকার ড্রাইভার লোকনাথ চন্দ্র মুঠোফোনে বলেন, যেভাবে কুকুর পেটায়, সেভাবেই ওই সার্জেন্ট আমাকে নির্দয়ভাবে মেরেছে। আমি অনেকবার পায়ে পড়েছি। আমি হিন্দুসম্প্রদায়ের মানুষ বলে কি, বিচার পাব না ?
এপ্রসঙ্গে মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পুলিশ পরিদর্শক) মিজানুর রহমান বলেন, পুলিশ হিসেবে আমরা কাউকে মারতে পারিনা। যত অন্যায়ই করুক, একজন পুলিশ এভাবে একজন ড্রাইভারকে পেটাতে পারেনা, এটা মুমিন ঠিক করেনি।
এছাড়া ফেসবুক কমেন্টে বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক মুক্তসকালের ভারপ্রাপ্ত বার্তা সম্পাদক আব্দুল বারীক লিখেছেন, ড্রাইভারদের মোবাইল কেড়ে নেন সার্জেন্ট। মনের দু:খে গাড়ী বিক্রি করেছি।
স্থানীয় সাংবাদিক গোলাম রব্বানী শিপন লিখেছেন, সার্জেন্ট এম এ মুমিন মহাস্থান করতোয়া ব্রীজ ফাটল যানজট মুহুর্তে ওই একই সংক্রান্ত কার্মকান্ড চালিয়ে ছিলেন। মহাস্থান মৎস্য বাজারের এক নিরীহ ড্রাইভারকে বেআইনীভাবে অসৌজন্য মূলক আচারন দেখে বিক্ষুব্ধ জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে সার্জেন্টকে ধাওয়া করেছিলেন। পরে অবস্থাার বেগতিক দেখে তিনি ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত সটকে গিয়েছিলেন। একজন আইনের মানুষের যদি এত অপরাধের অভিযোগ হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের আস্থা কোথায় ?
মাসুদ মজুমদার নামের একজন ফেসবুক কমেন্টে লিখেছেন, আমার চোখের সামনে এই সার্জেন্ট ৮/৯ মাস আগে এক বয়জেষ্ঠ্য ব্যক্তিকে বেধরক পিটিয়েছে। আমি বলেছিলাম, মারার অধিকার আপনারমত গোলামকে কে দিয়েছে ? স্থানীয় লোকজন এই মুমিনকে মারার জন্য চড়াও হয়েছিল। আমি সেদিন ঘটনাস্থলে না থাকলে জনগণ ওই সার্জেন্টকে পিটাইত। কথায় কথায় সে মানুষের গায়ে হাত তোলে। ফেসবুকে শেয়ার করা নিউজে শতশত কমেন্ট সার্জেন্ট মুমিনের মুখোশ উন্মাচন করেছে।