পিটা সালারে, কুত্তার বাচ্চারে গরম তেলে ডুবা
বগুড়া প্রতিনিধি, এম নজরুল ইসলাম, ০৪ জুন, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : সেমাই কারখানায় আটকে রেখে স্কুলছাত্র সজীবকে (১৩) অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছিল। তখন ম্যানেজার রবিউল বলছিল, ‘সালাকে পিটা কত টাকা লাগবে দেখব, মুখের উপর বলছে কাজ করবে না’ এর অবস্থা দেখে সবাই চুপচাপ কাজ করবে। পিটা সালারে, কুত্তার বাচ্চারে গরম তেলে ডুবা। নির্যাতনে মাথা থেতলিয়ে দেবার পর হাসপাতালে স্কুলছাত্র সজীব মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে, চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন অনেক টাকা। পরিবারটি খুবই গরীব।
শেষ সম্বল বিক্রি করে হলেও সজীবের চিকিৎসার খরচ উঠবে না। অসচ্ছল সংসারে বাবা একজন ভ্যান চালক। অসহায় পরিবারের সরলতার সুযোগ নিয়ে বারবার বিভিন্ন মাধ্যমে নির্যাতনের বিষয়টি দফারফার চেষ্টা চালাচ্ছে অভিযুক্তরা। ওরা বলছে, কত টাকা লাগে দিচ্ছি’ মামলা করবেন না। কথাগুলো বলছিলেন, স্কুলছাত্র সজীবের মা সাবিনা বেগম।
রবিবার (৩ জুন) দুপুরে বগুড়ার কাহালু উপজেলার শেখাহার বাজারে সাজ্জাদ হোসেনের ভাই ভাই লাচ্চা সেমাইয়ের কারখানায় স্কুলছাত্রকে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতনের পর লোহার রড দিয়ে সজোরে আঘাত করে মাথা থেতলিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার সজীব (১৩) স্থানীয় শেখাহার উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়াশুনা করে। সে কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের ডেপুইল গ্রামের ভ্যান চালক ফেরদৌস আলীর ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, সেমাই কারখানায় শ্রমিকের কাজ না করায় স্কুলছাত্রের মাথায় লোহার রড দিয়ে থেতলিয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীর লোকজন। অচেতন অবস্থায় সজীবকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এনিয়ে এলাকায় সাধারণ জনতার মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। একই মালিকের তিনটি সেমাই কারখানা দীর্ঘদিন ধরে শিশু শ্রমিক দিয়েই চলে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সজীবের পরিবার বলছে, আর মাত্র ক’দিন পরেই ঈদ। কিনতে হবে নতুন জামা-কাপড়। অসচ্ছল পরিবারে দু বেলা মুখে খাবার জোটে, নতুন কাপড় দিবাস্বপ্ন। এজন্য নিজের পরিশ্রমের টাকায় পোষাক কিনবে বলে সেমাই তৈরীর কারখানায় কাজ নিয়েছিল স্কুলছাত্র সজীব (১৩)। শরীর খারাপের কারণে মাত্র একদিন কাজ করবে না বলেছিল, এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মালিকের লোকজনের অমানবিক নির্যাতনে সজীব এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
সেমাই কারখানার কয়েকজন শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সংসারে অভাবের কারণে স্কুলছাত্র সজীব লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন হোটেল ও বৃত্তবানদের বাড়িতে শ্রমিকের কাজ করে। কিছুদিন ধরে সজীব কাজ নেয় শেখাহার বাজারে সাজ্জাদ হোসেনের ভাই ভাই লাচ্চা সেমাইয়ের কারখানায়। মালিকের ভাই রবিউল ইসলাম সেখানকার ম্যানেজার। সজীবের শরীর খারাপ ছিল, তাই কাজে আসেনি। কাজে আসতে পারবে না বলতে রবিবার দুপুরে কারখায় গিয়েছিল।
সজীব ম্যানেজারকে বলছিল, ‘আমার শরীর খারাপ। আজ কাজ করতে পারব না। গত দুইদিনের মজুরির টাকা দেন, নইলে না খেয়ে থাকতে হবে’ বলতেই রেগে গেলেন ম্যানেজার রবিউল। কারখানায় শ্রমিক সংকট, শরীর খারাপ হলেও কিছু করার নেই, আগে কাজ কর, পরে টাকা দেব। জোর করে সজীবকে দিয়ে কাজ করানোর চেষ্টা চলছিল। সজীব বারবার কাজ করতে পারবে না বলছিল।
এসময় ক্ষিপ্ত হয়ে ম্যানেজার রবিউলের নির্দেশে রুহানী রনি, মাসুদ ও ওয়ারিশ সহ কয়েকজন ব্যক্তি স্কুলছাত্র সজীবকে কারখানায় আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন শুরু করে। মাথায় লোহার রড দিয়ে সজোরে আঘাত করে স্কুলছাত্রের মাথা থেতলিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলেই সজীব অচেতন অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন সেমাই কারখানায় ছুটে এসে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে কাহালু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
সেখানে অবস্থা অবনতি ঘটলে চিকিৎসকরা বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সারাদিন ছুটাছুটির পর সজীবকে নেয়া হয় শহরের কানছগাড়ীর ময়েজ মিয়ার বাগানবাড়ী এলাকার তেসলা নিউরোসাইন্স হসপিটালে। সেখানকার চিকিৎসক নিউরো সার্জন ডা. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সজীবের অবস্থা আশংকাজনক। সে এখনো অচেতন। মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছে। এখুনি কিছু বলা যাচ্ছে না।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ম্যানেজার রবিউল উধাও রয়েছে। কারখানার মালিক সাজ্জাদ হোসেনকেও মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। থানায় এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ করেনি বলে জানিয়েছেন কাহালু থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো. শওকত কবির। স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ মন্ডল জানান, সজীবের চিকিৎসার জন্য কারখানার মালিক পক্ষ টাকা দিয়েছে শুনেছি।