অপরিকল্পিত ভাবে খাল খননের ফলে রাস্তায় ভাঙ্গন, এলাকাবাসীর বিক্ষোভ
কালকিনি (মাদারীপুর) প্রতিনিধি, রকিবুজ্জামান, ১৬ জুন, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় জাইকা প্রকল্পের মাধ্যমে অপরিকল্পিত ভাবে খাল খননের ফলে রাস্তায় ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া দুইপাড়ে ব্যাপক ভাঙ্গন সৃষ্টি হওয়ার ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে অনেক স্থাপনাসহ বাড়ীঘর।
এতে করে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে শতাধিক পরিবার। এতে প্রায় এক কিলোমিটার একটি পাকা সড়ক এখন বিলিনের পথে। তবে ঠিকাদারের প্রতিহিংসায় ও গাফলতির কারনে খাল খননে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার গুলো। বুধবার সকালে এ সমস্যার দ্রুত সমাধানের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
সরেজমিন ও এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার রমজানপুর এলাকার দক্ষিন রমজানপুর গ্রামের একমাত্র খালটি চলতি বছরের শুরুর দিকে জাইকা প্রকল্পের মাধ্যমে খনন করেন ঠিকাদার মোঃ দুলাল বেপারী। খালটি খনন করার সময় স্থানীয়রা তাদের বাড়িঘর রক্ষার্থে বাধা দিলেও ঠিকাদার জানান, কোদাল দিয়ে খালটি খনন করা হবে বাড়ি ঘরের কোন ক্ষতি হবে না।
কিন্তু ঠিকাদার দুলাল বেপারী কোদালের পরিবর্তে ভেকু দিয়ে খাল খনন করার ফলে পরিকল্পনা মাফিক খাল খনন না করার কারনে পাড় ভেঙ্গে পড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে ওই এলাকার শতাধিক বাড়ি ঘর, সরকারী একটি পাকা রাস্তাসহ বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপুর্ন স্থাপনা ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে। সরকারী পাকা রাস্তা ভেঙ্গে পড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যহত হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, ঠিকাদার স্থানীয় ইউপি আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন বেপারী প্রভাবশালী হওয়ায় কোন কিছু তোয়াক্কা না করে ভেকু দিয়ে অপরিকল্পিত ভাবে খাল খনন করেছে। দুলাল বেপারীর প্রতিপক্ষের লোকজনের বাড়ি-ঘর ঘেঁষে খাল খনন করে গেছে। বাধা দিতে গেলে সরকারী কাজ বলে প্রতিবাদকারীদের থামিয়ে দেন দুলাল বেপারী।
তারা আরও জানান ৫০০ ঘন্টা সময়কাল নিয়ে খাল খনন করার কথা থাকলেও ১০০ ঘন্টার মধ্যে তড়িঘড়ি করে খাল খননের কাজ শেষ করা হয়। বর্তমানে খালের পাড় ভাঙ্গতে শুরু করেছে। ঝুকিতে রয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি, বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা, ব্রিজসহ সরকারী কয়েকটি প্রকল্প। বেশ কয়েকটি কবরস্থান ভেঙ্গে খালে ভেতর চলে গেছে। তাছাড়া যাতায়াতের জন্য সম্প্রতি তৈরী করা পিচঢালা রাস্তার বেশ কিছু অংশ খালের মধ্যে ভেঙ্গে পড়েছে।
এছাড়া ঝুকিতে রয়েছে ইসলামী ফাউন্ডেশনের মক্তবখানা, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোফাজ্জল হোসেন, আবুল কালাম হাওলাদার ফজলু হাওলাদার, ফজলু হাওলাদা, নজরুল শিকদারের বাড়িসহ প্রায় শতাধিক বাড়িঘর। স্থানীয়রা ভাঙ্গন রোধে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাড়ি ঘরসহ সব ধরনের স্থাপনা রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে তাদের অপূরনীয় ক্ষতি হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোফাজ্জল হক জানান, যখন খাল খনন করার কথা শুনি তখন ঠিকাদার দুলাল বেপারীকে বাড়ি-ঘর ভাঙ্গনের ঝুঁকির কথা বলি। তখন দুলাল প্রতিশ্রতি দেন কোদাল দিয়ে মাটি কাটা হবে। খালের পাড় বাধা হবে মজবুত করে বাড়িঘর ভাঙ্গার কোন সম্ভাবনা নেই। কয়েকদিন পড়ে দেখি ভেকু দিয়ে খাল খনন করা শুরু করেছে। এলাকার লোক বাধা দেয়ায় দুলাল বেপারী বলে এটা সরকারী কাজ এখানে বাধা দেয়ার কোন সুযোগ নেই। আর এমনভাবে খাল খনন করা হবে যাতে ভাঙ্গনের সৃষ্টি না হয়।
স্থানীয় আবুল কালাম হাওলাদার বলেন, খাল খননের ফলে আমাদের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ভাঙ্গতে শুরু করেছে। আমরা এর প্রতিকার চাই। খাল খননে আমাদের যতটা না উপকারে হয়েছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। আমরা চাই ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার দুলাল হোসেন বেপারী বলেন, আমি নিয়ম মেনে খাল খনন করেছি। যতটুকু খালের জায়গা তার চেয়ে অনেক কম কাটা হয়েছে। খালের জায়গা এখনো অনেক আছে দুই পাড়ে। আমি কোন প্রকার অনিয়ম করেনি।
উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ রেজাউল করিম বলেন, যদি পরিকল্পনার বাইরে কিছু হয়ে থাকে তাহলে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, ঘটনাস্থল পরদির্রশন করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।