নোয়াখালীতে দলিল লেখকের বরখাস্ত প্রত্যাহারের দাবিতে ৩ দিনের কর্মবিরতি পালিত
নোয়াখালী প্রতিনিধি, লূৎফুল হায়দার চৌধুরী, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : নোয়াখালীতে দলিল লেখকের বরখাস্ত প্রত্যাহারের দাবিতে ৩ দিনের কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। জানা গেছে, সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে খাজনা দাখিলা রসিদ জাল করে দলিল রেজিষ্ট্রি করার সময় কর্মকর্তার হাতে ধরা পড়ার পরে তাকে মোবাইল কোর্ট এডিসি রেভিনিউ আবু ইউছুফের কাছে নেয়া হয়। তাৎক্ষণিক অপরাধী দলিল লেখক নুরুল আমিন দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে নিজ কন্যার বিয়ের আয়োজনের অজুহাত দেখিয়ে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সাইফুদ্দিন বাবুলসহ দলিল লেখক সমিতির কর্মকর্তারা তাকে জামিনে নিয়ে নেন।
পরে তাকে সদর সাব রেজিষ্ট্রার হুমায়ুন বিন সিরাজ বরখাস্ত করে তার লাইসেন্স বাতিল করার জন্য জেলা রেজিষ্ট্রারকে সুপারিশ করা হয়। দলিল লেখক নুরুল আমিনের অফিস আদেশ বাতিলের দাবিতে গত ২২ থেকে ২৪ ডিসেম্বর টানা ৩ দিনের কর্ম বিরতি পালন কর হয়। ২৪ ডিসেম্বর বুধবার বিকেলে বিরতির শেষ দিবসে তারা নিজেরাই দলিল লেখক সমিতির পক্ষ থেকে খাজনা দাখিলা রশিদ ঝাল সৃজন না করার আশ্বাসের ভিত্তিতে রেজিষ্ট্রি শুরু হয়।
অফিস সুত্রে জানা যায়, দলিল লেখক নুরুল আমিন খাজনা দাখিলা জাল রসিদ করে তাড়া হুড়ো করে রেজিষ্ট্রি করার প্রাক্কালে সাবরেজিস্টারের নজরে পড়লে তাকে মোবাইল কোর্টে হাজির করা হয়। একাধিক দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, ৭টি জাল দলিল প্রমাণিত হয়েছে। ৩টি তদন্তে রয়েছে। দলিল লেখক বাহার উল্ল্যাহ দাগ খতিয়ান পরিবর্তন করে বিপুল পরিমাণ ভূমি রেজিষ্ট্রি করার পর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলে তদন্ত রিপোর্ট জেলা রেজিষ্ট্রার হয়ে আইজিআর অফিসে পাঠানো হয়েছে।
বরখাস্তকৃত দলিল লেখক নুরুল আমিন বলেন, সবাই করে আমি করলে দোষের কি? তাছাড়া খতিয়ানের নকল ফটোকপি দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ভূমি মালিকদের দায়মুক্ত সনদ (এনইসি) সাব রেজিষ্ট্রার দেয়ার বিধান থাকলেও দলিল লেখকরা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সনদ দিয়ে লক্ষা লক্ষ টাকা নেয়ায় সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দলিল লেখকদের ভূয়া (এনইসি) নিয়ে ভূমি মালিকরা বাড়ি নির্মাণের জন্যে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক লোন নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
সদর সাবরেজিস্টি অফিসের প্রধান সহকারী সিরাজুল ইসলামের কাছে মুচলেকা ফটোকপি চাওয়া হলে তিনি বলেন, এটি সংরক্ষিত রয়েছে, আপাতত দেয়া যাবেনা। সদর সাব-রেজিষ্ট্রার হুমায়ুন বিন সিরাজ বলেন, অনিয়ম ও দূর্নীতিবাজদের সাথে কোন প্রকার আপোষ করবো না। দলিলের সাথে ভূয়া কাগজপত্র আসলে তা আটকিয়ে দেয়া হবে। এই জালিয়াতির বিষয়ে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সাইফুদ্দিন বাবুল বলেন, (এনইসি) সনদ দলিল লেখকরা দিতে পারে, সার্কুলার দেখাতে বললে তিনি এই বিষয়ে এড়িয়ে যান।
নোয়াখালী জেলা রেজিষ্ট্রার মোঃ আব্দুল খালেক বলেন, আমাদের আইজিআর মহোদয় অত্যন্ত সৎ ও ন্যায়পরান, যার কারণে আমরা নির্বিঘ্নে ব্যবস্থ্যা নিতে পারছি। ইতোমধ্যে অফিস সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণকারী মোজাম্মেল ও আলমগীরকে উত্তরবঙ্গের নাটোর জেলা ও মৌলভী বাজার জেলায় স্টান্ড রিলেজ করা হয়েছে। এই সিন্ডিকেটের কারণে ইতোপূর্বে সাব-রেজিস্ট্রার কেরামত হাওলাদার নোয়াখালীতে জেল খেটেছেন। দফায় দফায় ২জন সাব-রেজিস্ট্রারকে নোয়াখালী সদরে বদলি হলেও এই সিন্ডিকেটের কারণে কর্মস্থলে যোগদান না করে অন্য কর্মস্থলে ফিরে যান।
সরকারের নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দীর্ঘদিন থেকে সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ড বীরদর্পে চালিয়ে যাওয়ায় সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভূমি জালিয়াত সিন্ডিকেট ও অফিসের অসাধু কেরানীদের যোগসাজসে দাতা গ্রহীতার দলিল সম্পাদনে ভবিষ্যত প্রজন্মের মাঝে কাটাকাটি হানাহানি বিদ্ধমান থাকবে বলে সিনিয়র আইনজীবি জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যম কর্মিদের জানান। এ নিয়ে জেলা জুড়ে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোসের সৃষ্টি হয়েছে।