হাড়ি-পাতিল বিক্রি করে সংসার চালান
**স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরেও ‘মুক্তিযোদ্ধা’র রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিলেনি মনোরঞ্জন পালের**
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, আবদুল মান্নান, ১২ ডিসেম্বর, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : নিজের জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন মনোরঞ্জন পাল। তিনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের পোটকরা গ্রামের মৃত বজেন্দ্র কুমার পালের পুত্র। যুদ্ধে অংশগ্রহণের পর্যাপ্ত কাগজপত্র থাকলেও স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিলেনি তাঁর।
ফলে মাটির তৈরি হাড়ি-পাতিল বিক্রি করে অনেক কষ্টে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। পর্যাপ্ত কাগজপত্র থাকা এবং এলাকার সকলে মনোরঞ্জন পালকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ডাকলেও ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী ও পুরুষরা।
কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জানা গেছে, ১৯৫০ সালের ৩ এপ্রিল মনোরঞ্জন পাল জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে তাঁর বয়স ছিল ২১ বছর। তিনি সে সময়ে ২নং সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রণ করেছেন। তৎকালিন বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর অধিনায়ক আতাউল গণি ওসমানী স্বাক্ষরিত ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র’ এর প্রমাণ রয়েছে।
এছাড়াও ১৯৭২ সালের ২৮ জানুয়ারী ও ১৩ ফেব্রুয়ারী প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য এবং থানা প্রশাসক এভাভোকেট মীর হোসেন চৌধুরী স্বাক্ষরিত পৃথক দুইটি পত্রে উল্লেখ করা হয় ‘মনোরঞ্জন পাল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মাঠ কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ভারতের ত্রিপুরা পালাটোনা প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষক ছিলেন ওস্তাদ সালাউদ্দিন ও অরবিন্দ মুখার্জী। মুক্তি আন্দোলনে তাঁর অবদান অপরিসীম’।
পর্যাপ্ত কাগজপত্রাদি এবং সহযোদ্ধারা জীবিত থাকলেও বিভিন্ন দপ্তরে ধর্না দিয়েও ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি মনোরঞ্জন পাল। অথচ দেশে ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধার অভাব নেই।
মনোরঞ্জন পাল জানান, ‘আমার সাথে আ’লীগ নেতা আলী হোসেন চেয়ারম্যান, ভাজনকরার পেয়ার আহম্মদ, ফেনীর গোবিন্দপুরের কান্তিসহ অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। কাগজপত্র থাকলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন স্বীকৃতি পাইনি। জীবনের শেষ বয়সে এসে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ও সুযোগ সুবিধা পেলে অনেক শান্তি পেতাম। বঙ্গবন্ধুর কণ্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আমার একটাই চাওয়া-মৃত্যুর আগে যেন ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাই’।
এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল হাশেম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নাই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব’।