সিলেট শহরের মোড়ে মোড়ে এখন সিলেট সিক্সার্সের বিলবোর্ড আর ফেস্টুন, জনােমনে ক্ষোভ-হতাশা
সিলেট, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : সিলেট শহরের মোড়ে মোড়ে এখন সিলেট সিক্সার্সের বিলবোর্ড আর ফেস্টুন। সাব্বির রহমান এসবে নানা ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে মডেল হিসেবে প্রচারণার কাজটা করছেন। দলের স্লোগানটাও বেশ আকর্ষণীয়-“লাগলে বাড়ি বাউন্ডারি”! তবে এই বাড়ি লাগিয়ে বাউন্ডারি পার করার মতো খেলোয়াড় কই দলে? আইকন সাব্বির রহমানের সঙ্গে অভিজ্ঞ নাসির হোসেন আছেন। দেশি-বিদেশি মিলে সিলেট সিক্সার্সের বাকি যারা আছেন, তাতে খুব বেশি আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না।
দেশিদের মধ্যে উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নূরুল হাসান সোহান, ইমতিয়াজ হোসেন তান্না, শুভাগত হোম, কামরুল ইসলাম রাব্বি, মোহাম্মদ শরীফ, শরীফুল্লাহ, আবুল হাসান রাজু, তাইজুল ইসলাম, নাবিল সামাদরা আছেন।
বিদেশি খেলোয়াড়দের যে তালিকা, সেখানেও আশার আলো নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে ফ্লেচার, পাকিস্তানের বাবর আজম, শ্রীলংকার দাসুন সানুকা, চতুরঙ্গা ডি সিলভা ও ওয়ানিদু হাসারাঙ্গা। এছাড়া ক্রিসমার সান্তোকি, ডেভি জ্যাকবস, আন্দ্রে ম্যাকার্থি, রস হোয়াইটলি, লিয়াম প্লাঙ্কেট, উসমান খান শিনওয়ারি ও গোলাম মুদাসসের খানকে দলে নিয়েছে সিলেট সিক্সার্স।
অচেনা, অজানা এসব বিদেশির নাম ব্যঙ্গ করে ফেসবুকে অনেকে স্ট্যাটাসও দিচ্ছেন! ঢাকা ডায়নামাইটস, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস, রাজশাহী কিংস, রংপুর রাইডার্সের স্কোয়াডের তুলনায় অনেক পিছিয়ে বিপিএলের ৫ম আসরে থাকা সিলেটের নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি। অথচ তিনদিন আগেও সিলেট সিক্সার্সের ওয়েবসাইটে ঢুকে বিদেশি ক্রিকেটারদের যে তালিকা দেখা গেছে তাতে আশাবাদী হওয়ার মতো অনেক নাম ছিল। নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন, লুক রনকি, অস্ট্রেলিয়ার জেমস ফকনার ও এ্যাডাম জাম্পা, ইংল্যান্ডের ডেভিড মালান ও ক্রিস জর্ডান যে কোনো দলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো তালিকা। কিন্তু দুই দিনের ব্যবধানেই সব ওলট-পালট!
দেশি-বিদেশি তালিকা মিলিয়ে অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো সেরা দল গড়লেও সিলেট পেছনেই পড়ে থাকলো। সিলেটের অলক কাপালী বিপিএলের তৃতীয় আসরের হিরো। ফাইনালে তার দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়েই শিরোপার স্বাদ পায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। কুমিল্লা এবারো অলকের প্রতি আস্থা রাখলেও সিলেট পারেনি। অলকের মতো দেশি অনেক ক্রিকেটারকে দলে ভিড়িয়ে শক্তি বাড়িয়েছে অন্য দলগুলো।
বিদেশিদের মধ্যে পাকিস্তান আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনেক তারকা এবার বিপিএলে খেলছেন। তাদের মধ্যে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হককে নিয়েছে চিটাগং ভাইকিংস। শোয়েব মালিক আর হাসান আলীর পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারলন স্যামুয়েলস, ড্যারেন ব্রাভো, ইংল্যান্ডের জস বাটলার, আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবী, রশিদ খানদের দলে নিয়ে শিরোপার অন্যতম দাবিদার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। ঢাকা ডায়নামাইটস তো আরো এগিয়ে।
পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি, মোহাম্মদ আমের, শ্রীলংকার কুমার সাঙ্গাকারা, অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়াটসন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের এভিন লুইস, সুনীল নারাইন, কেভন কুপাররা খেলবেন ঢাকার হয়ে। রাজশাহী কিংস, রংপুর রাইডার্স, খুলনা টাইটান্সও যথেষ্ট ভালো দল গড়েছে।
নিলামের হিসাব মিলিয়ে তাই সিলেটে বিপিএল শুরুর আগেই হতাশার সুর। এবারো হয়তো অংশগ্রহণই বড় কথা হয়ে থাকবে সিলেটের জন্য। হতাশার উল্টো পিঠে ক্ষোভও আছে। সিলেট সিক্সার্সের মালিকানা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পরিবারের হাতেই। মন্ত্রীপুত্র সাহেদ মুহিত দলের চেয়ারম্যান। অর্থমন্ত্রী নিজে সিলেট দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। এসব ঠিকই আছে। টাকার জায়গা বলে খ্যাত সিলেটে যে কোনো কিছুতেই পৃষ্ঠপোষকতার বড় অভাব। খেলাধুলায়ও দীনহীন ভাব। সেই অর্থে অর্থমন্ত্রী আর তার পরিবার যে এগিয়ে এসেছেন সেটাই বড় কথা। তবে ক্ষোভটা হচ্ছে সিলেটের ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের মাঝে তেমন কেউই নেই সিলেট সিক্সার্সের সঙ্গে। সিলেট ক্রিকেটের পুরনো তিন সৈনিক বিরাজ মাধব চক্রবর্তী মানষ, সুপ্রিয় চক্রবর্তী রঞ্জু ও যায়েদ আহমদ চৌধুরী সিলেট সিক্সার্স সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। শুধু টিভিতে আর খবরের কাগজেই দেখেছেন বিপিএলে সিলেটের একটা দল হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রাজিন সালেহও নেই দলের সঙ্গে। সাবেক ক্রিকেটার আহমদ জুলকারনাইন, হানিফ আলম চৌধুরী, মন্জুর আহমদ চৌধুরী, ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী, ক্রীড়া সংগঠক ফেরদৌস চৌধুরী রুহেলসহ ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট আরো অনেককেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি কয়েকদিন আগে সিলেটে হয়ে যাওয়া দলের অনুষ্ঠানে।
ক্ষোভ আছে ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলেরও। যদিও তিনি দলের সঙ্গে আছেন, তবে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে দলের অনেক বিষয়েই তিনি নাখোশ। সিলেটে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন আর পরিচিতি অনুষ্ঠান নিয়েও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সিলেটের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে অতিথিদের সঙ্গে বসিয়ে আলাদা একটা চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। অনুষ্ঠানের আয়োজন আর উপস্থাপনাও ছিল অনেকটা এলোমেলো। টিভি সাংবাদিকদের জন্য নির্ধারিত টেবিলে সাদা কাগজে লেখা ছিল ইলেকট্রিক মিডিয়া!
এদিকে অর্থমন্ত্রীর ভাই, জাতিসংঘের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড.এ.কে আবদুল মোমেনকে সাবেক রাষ্ট্রদূত হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা বলে ফেলেন রাষ্ট্রপতি! এসব নিয়ে হাসির রোল পড়ে অনুষ্ঠানস্থলে।