সরকারি সম্পদ লুটপাটের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির ব্যবস্থা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ঢাকা, ২৬ জুলাই, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : সরকার সরকারি সম্পদ লুটপাটের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির ব্যবস্থা নিয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে মানুষের সম্পদ কোনভাবেই যেন লুটপাট করা না হয় সে ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি এবং দুর্নীতি দমন ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় ‘জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা) বিধিমালা, ২০১৭’ প্রণয়ন করেছি। সাধারণ মানুষের সেবা পেতে যে কোন সমস্যা নিরসনে গণশুনানি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের (বিএএসএ) বার্ষিক সম্মেলন ২০১৮ তে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করেছে, একটা বিশাল বাজেট দিতে আমরা সক্ষম হয়েছি। সেই বাজেটের প্রতিটি টাকা যাতে যথাযথভাবে ব্যবহার হয় সে বিষয়েও সচেতনতা দরকার। আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা যখন গ্রহণ করি তখনও আমি চাই এর সাথে যারা সম্পৃক্ত থাকেন তারা যেন কোনটা যথাযথভাবে মানুষের প্রয়োজন এবং কাজে লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখেন। জনসেবা যেন আরো বৃদ্ধি পায়। দেশের উন্নয়ন যাতে গতিশীলতা পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ অনেক কষ্ট করে আমরা টাকা-পয়সা জোগাড় করি।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের সার্বিক কৌশল হিসেবে ‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল’ প্রণয়ন এবং ৫৭টি চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধাচারের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ করা হচ্ছে। সরকারি কর্মকান্ডে দক্ষতা বৃদ্ধি ও গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে কেন্দ্রের তাৎক্ষণিক যোগাযোগের লক্ষ্যে নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হচ্ছে। নাগরিকদের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য চালু করা হয়েছে ওয়েবভিত্তিক অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা, যেখানে সকল নাগরিক তাঁদের অভাব-অভিযোগ জানাতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে দপ্তরসমূহের দুর্নীতি প্রবণ এলাকাসমূহ চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধ কর্মসূচির আওতাভুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া তথ্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তাঁর সরকারের কর্মসূচিসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়নের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, জাতির বিজয়ের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। আর বিকৃত ইতিহাস মানুষের বিকৃত চরিত্রই সৃষ্টি করে। এর হাত থেকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে। আমরা যে বিজয়ী জাতি, সেই বিজয়ের ইতিহাস তুলে ধরে পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে বিজয় নিয়ে গর্ব অনুভব করার মতো শক্তি সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে দেশপ্রেমে তাঁরা উদ্বুদ্ধ হবে। তবেই দেশ এগিয়ে যেতে পারবে। জনগণের নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করা এবং তাদের জীবনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে দেয়া সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
তিনি বলেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং ট্রাফিক রুল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার আহ্বান জানান। স্কুল পর্যায় থেকেই এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন। আমরা এদেশে কঠোর হস্তে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সক্ষম হয়েছি। এখন আমাদের দেশকে মাদকমুক্ত করতে হবে। তিনি এ জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে সামাজিক অন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ সৃষ্টির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় তাঁর দৃঢ়প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন। তাঁর সরকার দেশকে ক্ষুধামুক্ত এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। এখন দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা এবং জনগণের পুষ্টি নিশ্চিত করাই তাঁর সরকারের অন্যতম লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে প্রতিটি গ্রাম হবে শহর। গ্রামের জনগণ নগরের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে। জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে। আর তা বাস্তবায়নে সরকারী কর্মচারীদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। আগামী ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। সরকারি কর্মচারীদের স্মরণ করিয়ে দেন, তাঁর সরকার ৫ বছরের জন্যই নির্বাচিত এবং ৫ বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। সেই জবাবদিহি করার সময় এসে গেছে। জনগণ সন্তুষ্ট থাকলেই তাঁরা আবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। তাই তিনি সরকারে আসুন বা নাই আসুন, দেশের উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। একটানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় উন্নয়নের ধারাগুলো আজ দৃশ্যমান। উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে। সেটুকুই আমার দাবি আপনাদের কাছে। কারণ আপনাদের চাকরি কিন্তু একটা দীর্ঘ সময়ের জন্য রয়েছে। কেবল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, জাতির পিতার কন্যা হিসেবেও তিনি দেশসেবায় মনোনিবেশ করার জন্য সরকারি কর্মচারীদের অনুরোধ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ যেন ভাল থাকে, তাঁদের জীবন যেন উন্নত হয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ যেন উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, জাতির পিতা সে স্বপ্ন দেখেছিলেন। এদেশের সাধারণ মানুষ আপনাদের অতি আপনজন, যে কথা জাতির পিতাও বলেছিলেন। কাজেই জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার কাজ আপনারাই এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি ও তথ্য সচিব আব্দুল মালেক এসোসিয়েশনের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে ক্রেস্ট উপহার দেন। প্রধানমন্ত্রীও এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতির হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।