শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি
ঢাকা (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল), ১৭ অক্টোবর, ২০২৪ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন নির্মূলে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অস্থায়ী এজলাসে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে বিচারিক প্যানেল প্রসিকিউশনের দায়েরকৃত আবেদন আমলে নিয়ে আজ এই আদেশ দেন।
ট্র্যাইব্যুনালের (পুরাতন) মূল ভবনের সংষ্কার কাজ চলমান থাকায় ভবন সংলগ্ন (অস্থায়ী) এজলাসে আজ সকাল সাড়ে ১১টায় ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারসহ অপর দুই বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর এডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এরপর ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ দেন। সেই সাথে আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যনাল।
প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটরের সাথে ছিলেন, প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম ও প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের পর আজ আনুষ্ঠানিক বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে পরিচালিত হত্যা-গণহত্যার বিচার হবে এ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে বিচারকাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গত গত ১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পরদিন ১৫ অক্টোবর তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যোগ দেন। গতকাল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানসহ বিচারিক প্যানেলের অপর দুই সদস্যকে সংবর্ধনা দেন এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এই সময় অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেলগণ, ট্রাইব্যুনালের অন্যান্য প্রশিকিউটরগণ ও সুপ্রিম কোর্ট বারের আইনজীবীসহ বেশ ক’জন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
গত ৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এছাড়া প্রসিকিউশন টিমের অপর পাচ প্রসিকিউটররা হলেন মো. মিজানুল ইসলাম, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ, আবদুল্লাহ আল নোমান ও মো. সাইমুম রেজা তালুকদার।
অন্যদিকে, ১০ জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়েছে। যেখানে তদন্ত সংস্থার কোঅর্ডিনেটর পদে মো. মাজহারুল হককে (অ্যাডিশনাল ডিআইজি, অবসরপ্রাপ্ত) এবং কো-কো-অর্ডিনেটর পদে মুহাম্মদ শহিদুল্যাহ চৌধুরীকে (পুলিশ সুপার, অবসরপ্রাপ্ত) নিয়োগ দেয়া হয়। গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে অর্ধশতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে সংঘটিত অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে। বৈষম্য বিরোধী টানা ৩৬ দিনের আন্দোলন নির্মূলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় ক্যাডারদের হামলায় প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতা শহিদ হয়েছে। গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে ৫ শতাধিক। আহত হয়েছেন ২৩ হাজার ছাত্র জনতা। তাদের অনেকে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন।