শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যার্জন শেষে কৃষিকাজে অনিহা প্রকাশ করবে না ও ফসল কাটার সময় মাঠে কাজ করার সুযোগ থাকবে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ঢাকা, ০৭ মে, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যার্জন শেষে নিজেদের কৃষিকাজে সম্পৃক্ত করতে অনিহা প্রকাশ করবে না ও ফসল কাটার মওসুমে মাঠে কাজ করার সুযোগ থাকবে। শিক্ষিত হয়ে গেলেইতো আবার অনেকে ক্ষেতে নামতে চায় না। এজন্য ধান কাটার মৌসুমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ করে কলেজের ছেলেদেরকে অন্তত ক্ষেতের সঙ্গে পরিচয় করাতে ক্ষেতে নামানো যায় কিনা সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ১৯টি জেলার ৬৩টি উপজেলায় পাঁচ লাখ পরিবারের মাঝে পাঁচ লাখ পারিবারিক সাইলো বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ঝালকাঠি জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতিটা কৃষিভিত্তিক এই অর্থনীতিটাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে এটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। কৃষি কাজটাকে যান্ত্রিকীকরণ করতে হবে, এ জন্য আমরা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। কেউ যেন কৃষিকাজে বিমূখ না হয়। আর শিক্ষিত হয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা আরো ভালোভাবে কৃষিকাজ করতে পারে, বাপ-মাকে সাহায্য করতে পারে। সেভাবে তাদের মানসিকতাটাকে গড়ে তুলতে হবে। সেটাও আমাদের শিক্ষার সাথে থাকা উচিত।
খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম,খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কসিটির সভাপতি কাজী আব্দুল ওয়াদুদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সাহাবুদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে পাবিারিক সাইলোর বিভিন্ন ব্যবহারিক দিক তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো.নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। ঝালকাঠির জেলা প্রশাকের কার্যালয়ে উপস্থিত প্রকল্পের অনেক উপকারভোগী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের অনুভূতি ব্যাক্ত করেন।
ফুড গ্রেড প্লাষ্টিকের তৈরি মটকা সদৃশ্য এই পারিবারিক সাইলোতে দুর্যোগ প্রবণ সময়ে বিশেষ করে সাইক্লোন, জলোচ্ছাস ও বন্যার সময়ে বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্য- ধান, চিড়া, মুড়ি, ফসলের বীজ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। সাইলোগুলোকে মাটির নিচে পুঁতে বা গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেও খাদ্যের গুনাগুন রক্ষা করে এখানে খাদ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। যেখানে ৫৬ কেজি পর্যন্ত চাল এবং ৪০ কেজি বীজ একসঙ্গে সংরক্ষণ করা যাবে। প্রতিটি সাইলো নির্মাণে এক হাজার ৩শ’ ৭৭ টাকা ব্যয় হলেও নাম মাত্র ৮০ টাকা মূল্যে এগুলো কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দেশের শিল্পোন্নয়নেও গুরুত্ব দিচ্ছে যাতে কোন সন্দেহ নাই। তবে, আমাদের লক্ষ্য থাকবে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের যেন খাদ্য মজুদটা নিশ্চিত থাকে। যাতে কোনমতেই কখনো আমরা খাদ্য ঘাটতিতে না পড়ি। এর মাধ্যমে প্রতিটি পরিবার খাদ্যের নিজস্ব আপদকালিন খাদ্য মজুদ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ একটি ষড়যন্ত্রের ফসল ছিল, এরপরই জাতির পিতা বিভিন্ন এলাকা ভিত্তিক খাদ্য মজুদের জন্য গুদাম গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। যাকে খাদ্যটা নিরাপদে থাকে এবং দুর্যোগকালিন এর ব্যবহার করা যায়।
তিনি বলেন, দুর্যোাগের সময় আমাদের সবকিছুই ভেসে যায়, নষ্ট হয়। এজন্য এখন চিলিং সিষ্টেমের সাইলো (খাদ্য গুদাম) করা হচ্ছে ২/৩ বছরেও যেটাতে খাদ্য রাখলে নষ্ট হবে না। দেশে বর্তমানে ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদের সক্ষমতা রয়েছে, এবারেও যখন বন্যা, হলো অতিবৃষ্টি হলো আমাদের হাওড় অঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকায় খাদ্য নষ্ট হলো। সাথে সাথে আমরা খাদ্যের ওপর ট্যাক্স কমিয়ে দিয়ে, খাদ্য কিনে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করেছি। সেখানে আমরা এতটুকুও কালক্ষেপণ করিনি। মানুষের খাদ্য চাহিদা হচ্ছে তার মৌলিক চাহিদা। সর্বপ্রথম তার খাদ্য চাহিদাটা পূরণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং ১০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনার উল্লেখ করেন এবং বিএনপি আমলে তাদের স্বল্প মেয়াদি অ্যাডহক ভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণের কঠোর সমালোচনা করেন। দেশকে ভিক্ষুক বানিয়ে রাখতে আর বিদেশ থেকে এই কঙ্কাল সার রুগ্ন জনগণকে দেখিয়ে টাকা নিয়ে এসে নিজেদের আখের গোছাতেই বিএনপি এমনটা করেছিল। এটা হচ্ছে নীতির প্রশ্ন, বিএনপি সরকারের নীতিটাই ছিল তারা ভিক্ষুকের সর্দার হয়ে থাকতে চায়।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দেশের মানুষের খাদ্য, পুষ্টি এবং স্বাস্থসেবা নিশ্চিত করা সহ সার্বিক জীবন-যাত্রার মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। আর সে কারণে সরকার একর পর এক বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।