রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি, ইব্রাহিম আলম সবুজ, ১৯ এপ্রিল, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : উপজেলার ছালেহা বেওয়ার জীবন সংসারের জীবন যাপন সম্পর্কে একটি ভিডিও দেখা গিয়েছে। সম্প্রতি উপজেেলা নাজিমখান ইউপির শামস উদ্দীন বসুনীয়া সুমন নামের এক যুবকের ধারণকৃত ছালেহা বেগমের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিও টি মানবিক হওয়ায় দৃষ্টিগোচর হয়েছে সকালের। গতশীতে ঐ ইউনিয়নের কৃতিসন্তান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ, বি, এম সরওয়ার সরকার জীবন এর উদ্দ্যোগে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম এর মধ্যে দিয়ে প্রথম বার ফেসবুকে ওঠে আসে ছালেহার দরিদ্রতার চিত্র।
রাজারহাট উপজেলার সাংবাদিক সহকর্মী প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছালেহা বেওয়ার ঘটনার ভিডিওর সত্যতা মেলে। বর্তমান সময়ে ছালেহার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমোলচনার যেন অন্ত নেই মানুষের মুখে মুখে। সেই খবরে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ লকডাউনে থাকা অবসরে সকলের দৃষ্টি বিভিন্ন মিডিয়ার দিকে।
ছালেহা বেওয়া (৫২) বাড়ী উপজেলার নাজিমখান ইউপির ৬নং ওয়ার্ড রাঘব ঝাড়িঝার গ্রামের মৃত বছিয়ত উদ্দিন এর স্ত্রী ছালেহা বেগম। ছালেহা বেওয়া ঐ গ্রামে স্বামীর বাড়ীতে দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করেন। ছালেয়া বেওয়ার বাড়ীতে গেলে চোখে পড়বে করুণ দৃশ্যপট! একটি ভেঙে পড়ার ঘড়ের ভীতরে মাঠিতে মিশে যাওয়া বিছানা! বর্তমানে ছালেয়া বেওয়ার রাজপ্রাসাদ টি মাঠিতে লুটে পড়েছে। পড়ে যাওয়া ঘড়ে ডুকতে হবে কষ্ট ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে যে কোন মুহুর্তে! অভাবের কারণে একমাত্র মাথা গোঁজার ঘড়টি মেরামত হয়নি যেন গত কয়েক বছর ধরে।
জিজ্ঞেস করেছিলাম চাচী আপনার ঘড় কয়টা জবাবে দুটি, কয়জন থাকো বাড়িতে উত্তর বলে দুই জন, অর্থাৎ মা ছালেহা আর মেয়ে শাহিদা। বছিয়ত উদ্দিন মারা যাওয়ার সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে পরিবারের আয়। অনেক কষ্টে অভাবী দুঃখীনীকে জগৎ পরিবারে জীবন বাঁচাতে গিয়ে মানুষের বাড়ীতে কাজ করতে হয়েছে, কখনও মা ও মেয়ে হাত পেতেছে মানুষের দাড়ে দাড়ে। ছালেহা বেওয়ার সংসারে নেই আর আবাদি জমি নেই, ঠিকমত তিন বেলা পেট ভরে খাবার জোটে না, রোজগার করার মত পরিবারে নেই কেউ। সঞ্চয় বিহীন জীবনযাপন করে মা ও মেয়ে।
ঘড়ে নেই খাবার মজুদ, হাতে নাই টাকা পয়শা-সহজেই বলা যায়, দিন এনে দিন খায়। ঐ রাজপ্রাসাদে মেয়ে শাহিদা থাকেন সেও স্বামী পরিত্যক্ত। বিগত দশ বছরেও সরকারের দেওয়া ত্রানের টিন, মেরামত টাকাও জোটেনি এই ছালেহার কপালে। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব রোধে, গত ২৪ মার্চ থেকে বাংলাদেশ জুড়ে অঘোষিত লকডাউনে উপার্জনের পথ বন্ধ হয়েছে ছালেহার, সরকারি ও সামাজিক সংগঠনের ত্রাণ দিয়ে অসহায়ত্ব মা ও মেয়ে জীবন কাটাচ্ছেন।
বাড়ীর করার জায়গা থাকলেও গত কয়েক বছরের সরকারি অর্থায়নে সরকার দেওয়া, জমি আছে বাড়ী নাই ভাগ্যেও জোটেনি ছালেহার।বর্তমান সংকট সময়ে অসহায়ত্বভাবে জীবন যাপন করতেছে। যেকোন মুহুর্তে এই বৃষ্টি বাতাসে লন্ডন ভন্ড হতে পারে ছালেহার স্বপ্নেরটি রাজপ্রাসাদ টি। এবিষয়ে নাজিমখান ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য, মুঠোফোনে নুরল হোসেন জানান, গ্রামে সবাই ছালে পাগলী বলে জানে, ছালেহার স্বামী মারা গিয়েছে প্রায় ১০ দশ বছর আগে।
বর্তমানে ছালের নামে কোন বসয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা নেই এমন কি তার জাতীয় পরিচয়পত্র নাই কার্ড দিবো কিভাবে কিন্তু বাড়ি করার জায়গা আছে ছালেহার। জীবন ভাই একচালা একটি ঘড় বানবার জন্য টিন ও কাঠের গাছ দিয়েছে ছমিল চালুর হবার সাথে ঘড় হবে। কিন্ত এবারও জমি আছে ঘড় নাই তালিকায় ইউনিয়ন পরিষদ এর পক্ষ থেকে ছালেহার নাম দিয়েছি ।
এ বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানান প্রতিক্রিয়ার জবাবে রাজারহাটের কৃতি সন্তান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এবিএম সরওয়ার সরকার জীবন আমার সংবাদের মাধ্যমে সকলের জ্ঞাতার্থে বলেন- “মিজ সালেহা বেগমকে আমরা শীতার্ত দুর্দশাগ্রস্থ হিসেবে পেয়েছিলাম। একটির যায়গায় আমি দু’টা কম্বল দিয়েছি। এই প্রাপ্তিতে তাঁর হাসিমাখা মুখখানি এখনও আমার চোখে ভাসে। তখনি বলেছি আমার সাধ্যমতো একটা টিনের ছাপড়া তৈরী করে দিবো। ভুলে গিয়েছি বিষয়টা, ক্ষমা করবেন।
তবে হিসেব করেন শীত চলে যাবার কয়মাস হলো- খুব বেশিদিন নয়। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে! আমরা যারা এধরনের মানবিক বিষয় নিয়ে ভাবি, তারা কিন্তু যার যার কর্ম করার পরে একটু সময় পেলেই মানবতার সেবায় কিছুটা সময় ব্যয় করি। এটা সমাজের প্রতি আমাদের অতিরিক্ত দায়ীত্ববোধ।
এবিষয়ে রাজারহাট উপজেলার উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন বলেন, আমি নিজের উপস্থিত থেকে তাকে সরকারের ত্রাণ দিয়েছি এবং সরকারের ‘জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্পের আওতায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় ঘর তৈরি করতে দেরি হচ্ছে। করোনা ভাইরাস শেষ হলে তার ঘড়টি হয়ে যাবে।