রাজারহাটে ঐতিহ্যবাহী সিন্দুরমতির মেলা ও পূণ্যস্মান হচ্ছে না

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি, ইব্রাহিম আলম সবুজ, ২৯ মার্চ ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা হিসেবে রাজারহাটের ঐতিহ্যবাহী সিন্দুর মতি পুকুরে সনাতন ধর্মাম্বলীদের পূণ্যস্মান এবারে স্থগিত করা হয়েছে। শুক্রবার (২৭মার্চ) রাতে মন্দির পরিচালনা কমিটি এই সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। জানা গেছে, প্রতি বছর চৈত্রের নবম তিথিতে ঐতিহ্যবাহী সিন্দুর মতি পুকুরে পূণ্যস্মান অনুষ্ঠিত হয় বলে একে নবমীর স্মান বলা হয়। হিন্দু ধর্ম্যালম্বিরা পুরাকীর্তির নিদর্শন স্বরূপ পুকুরটিকে স্রষ্টার স্বর্গীয় দান মনে করেন। এই পুকুরে পূণ্যস্মান করা, পাপ মুক্ত হয়ে জীবনে ব্যপ্ততা ও পরজনমে পূর্ণবান হওয়ার মাধ্যম বলে তারা বিশ্বাসী ।

তাদের মতে, এটি শুধু একটি সু-বিশাল পুকুর নয়। হাজার বছর ধরে হিন্দুদের তীর্থক্ষেত্র। তাই প্রতিবছর চৈত্রের নবম তিথিতে পূণ্য স্মানের পাশাপাশি পুকুরের চার ধারে বসে বিশাল বাহারি মেলা। দেশের বিভিন্ন জেলা, এমনকি পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশ থেকেও ভক্ত অনুরাগীদের আগমন ঘটে নবমির স্মানে। এলাকার প্রবীণ গুণীজন ও পুজঁকরা জানান, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কখনো এই নবমির স্মান বন্ধ ছিল না, তবে এবারেই প্রথম করোনা ভাইরাসের কারণে নবমীর স্মান ও মেলার কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হচ্ছে। কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও লালমনিরহাটের সদর উপজেলার সীমান্তে প্রায় ৫১বিঘা জমির উপর সিন্দুর মতির পুকুর স্থাপিত বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ২এপ্রিল এই মেলা হওয়ার কথা ছিল । তবে এবারে এর আগের দিন ১ এপ্রিল প্রহিত ও কমিটির ২/১ জনের উপস্থিতিতে পুঁজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে। অন্য কাউকে উপস্থিত থাকতে দেয়া হবে না। সিন্দুর মতি তীর্থধাম মন্দির কমিটির সভাপতি অতুল কৃষ্ণরায় জানান, শুক্রবার রাতে মন্দির পরিচালনা কমিটির সভায় ২০সদস্য বিশিষ্ঠ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোরঞ্জন রায় ও কোষাধ্যক্ষ দিনোবন্ধু বনিক সহ ৮ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এসময় মোবাইল ফোনে অন্যান্য সদস্যদের মতামত গ্রহণের পর সর্বসম্মতিক্রমে পূণ্যস্মান ও মেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এপ্রসঙ্গে রাজারহাট থানার অফিসার ইরচার্জ কৃষ্ণকুমার সরকার জানান, করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে মেলা, সামাজিক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় সমাবেশ সহ জন সমাগম/গণজমায়েত হয় এমন সকল কিছ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা সহ বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারী করেছেন জেলা প্রশাসক মোঃ রেজাউল করিম। এর পাশাপাশি সিন্দুর মতির তীর্থধাম মন্দির কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ও সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে এবার মেলা স্থগিত করা হয়েছে।

আরও খবরঃ-

রাজারহাটে অগ্নিকান্ডে ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল ভস্মিভূত

রাজারহাটে অগ্নিকান্ডে দুই পরিবারের ঘরবাড়ি এবং ঘরে থাকা আসবাবপত্রসহ প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল ভস্মিভূত হয়েছে। শনিবার ভোররাতে উপজেলার উমর মজিদ ইউনিয়নের ফুলখাঁ কুটিপাড়া গ্রামে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও এলাকাবাসীরা জানায়, উমর মজিদ ইউনিয়নের কুটিপাড়া গ্রামের ফরজ উদ্দিনের পুত্র আবু বক্কর (৪৮) এর গোয়াল ঘরের মশার কয়েল থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে মুহুর্তেই তার শোবার ঘর ও পার্শ্ববর্তী বড় ভাই ফরিদ উদ্দিনের ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

এসময় ঘরে ঘুমিয়ে থাকা বাড়ির লোকজন আগুনের লেলিহান শিখা দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে চিৎকার করতে থাকে। পরে এলাকাবাসী ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়ার পাশাপাশি আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে কুড়িগ্রাম থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, অগ্নিকান্ডে দুই পরিবারের ৭টি টিনের ঘর, ২টি গোয়াল ঘর, ১টি গরু, নগদ ২০হাজার টাকাসহ ঘরে থাকা প্রায় ১৫-২০ মন ধান ও চাল, আসবাবপত্রসহ প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল পুড়ে ভস্মিভূত হয়েছে। রাজারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ কৃষ্ণ কুমার সরকার ও উমর মজিদ ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরদার আগুনে পুড়ে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 

রাজারহাটে সরকারি এম আই কলেজ অধ্যক্ষ কর্তৃক আদায়কৃত অতিরিক্ত টাকা ফেরতের নির্দেশ

রাজারহাট সরকারি মীর ইসমাইল হোসেন কলেজ অধ্যক্ষকে ১৫দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে আদায়কৃত অতিরিক্ত অর্থ ফেরতের নির্দেশ দিয়েছেন দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড। এরআগে গত ফেব্রুয়ারী মাসে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের নির্দেশে কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগের তদন্ত করেন। জানা গেছে, উপজেলার সদ্য জাতীয়করনকৃত মীর ইসমাইল হোসেন কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান জহুরুল ইসলাম উক্ত কলেজের অধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম রানার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও অনিয়ময়ের ঘটনায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের নিকট অভিযোগ দাখিল করেন।

এর প্রেক্ষিতে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের নির্দেশে কুড়িগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম গত ১৬ ফেব্রুয়ারী সরেজমিনে অভিযোগের তদন্ত করেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলায় তিনি দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের নিকট তদন্ত প্রতিবেদনে দাখিল করেন। এরপ্রেক্ষিতে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড রাজারহাট সরকারি মীর ইসমাইল হোসেন ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম রানাকে অতিরিক্ত টাকা ফেরতের নির্দেশ দিয়ে চিঠি ইস্যু করেন।

২৩মার্চ দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের নির্দেশে কলেজ পরিদর্শকের ৪/কল/রং/৩৯/২৪৬৩ নং স্মারক স্বাক্ষরীত চিঠিতে, আগামি ১৫দিনের মধ্যে ২০২০সনে  অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরিক্ষার্থীরদের মধ্যে ৩৫০জন শিক্ষার্থীর নিকট কেন্দ্র ফি’র নামে ৫০টাকা হারে আদায়কৃত ১৭হাজার ৫০০টাকা, মসজিদ/পুজা ফি ১৭হাজার ৫০০টাকা, ১০০টাকা হারে ব্যবস্থাপনা ফি ৩৫হাজার টাকা এবং ৫০০টাকা হারে বিশেষ ফি বাবদ ১লক্ষ ৭৫হাজার টাকা সর্বমোট ২লক্ষ ৪৫হাজার টাকা অতিরিক্ত ফি সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের কলেজের রেজিষ্টারের মাধ্যমে ফেরত প্রদান নিশ্চিত করে প্রামাণ্য কাগজপত্র স্বাক্ষরকারীর দপ্তরে সরাসরি জমা দানের নির্দেশ প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য, সদ্য জাতীয়করনকৃত মীর ইসমাইল হোসেন কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান জহুরুল ইসলাম উক্ত কলেজের অধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম রানার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা সহ প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে গত বছরের নভেম্বর মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিকট আরো একটি অভিযোগ দাখিল করেন। ওই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, কলেজটি জাতীয়করণের পূর্বে জাতীয়করনের কথা বলে অধ্যক্ষ শিক্ষক/কর্মচারীগণের কাছ থেকে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে বিভিন্ন দপ্তরে দেয়ার কথা বলে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেন। তিনি জ্যেষ্ঠতা লংঘন করে বাংলা ও দর্শন বিভাগে কনিষ্ট শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব অর্পনেরও অভিযোগ করা হয়।

এছাড়াও অধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম রানা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে কলেজ জাতীয়করণ সংক্রান্ত ফাইল পাঠানোর নামে দু’দফায় ২ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা এবং মাউশির সহকারি পরিচালককে উৎকোচ দেয়ার কথা বলেও শিক্ষকদের নিকট থেকে আবারো ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা উত্তোলনের অভিযোগ করা হয়। এদিকে চতুর্থ বর্ষ অনার্স বিভাগের বাংলা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনাসহ ৬টি বিষয়ে প্রতি শিক্ষার্থীদের জন্য ২ হাজার ৭০০ টাকা সরকারি ভাবে নির্ধারণ করা হলেও অধ্যক্ষ নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে শিক্ষার্থী প্রতি ৫ হাজার ৮০০ টাকা করে আদায় সহ প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের কথা বলা হয়েছে অভিযোগে।

এরপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৩ডিসেম্বর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রংপুর অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক ড. একেএম সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ৩সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি অধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম রানার অনিয়মের তদন্ত শুরু করেন। যা এখনো তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানা যায়। এবিষয়ে সরকারি মীর ইসমাইল হোসেন কলেজ অধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম রানা দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অতিরিক্ত ফি’র টাকা ফেরত প্রদান সংক্রান্ত চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। এছাড়া আদায়কৃত ফি’র চেয়ে চিঠিতে বেশি উল্লেখ করা হয়েছে । তার বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগ সঠিক নয় বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *