মিয়ানমার সামরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে সত্যের সঙ্গে আপোস করেননিঃ পোপ ফ্রান্সিস
ঢাকা, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিঙ অং হ্লাইং সহ সামরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি সত্যের সঙ্গে আপোস করেননি পোপ ফ্রান্সিস। পোপ তাঁর ঐতিহাসিক মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর সমাপ্ত করে ঢাকা ত্যাগ করার পরে পোপের প্লেনে সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের পোপ বলেন, ‘আমি সত্যের সঙ্গে আপোস করিনি… আমি বুঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, পুরাতন পদ্ধতি বর্তমানে কার্যকর নয় এবং তিনি এ বার্তা গ্রহণ করেছেন। প্লেনে পোপের সফরসঙ্গী রয়টারের এক সাংবাদিক বলেন, পোপ জোরালো আভাস দিয়েছেন যে, তিনি বার্মিজ জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠকে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যে শব্দটি ওই জেনারেলরা অপছন্দ করেন।
সামরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে পোপ বলেন, ‘বার্তাটি পৌঁছাতে আমি এই শব্দটি ব্যবহার করেছি এবং যখন বুঝলাম আমার বার্তা তাদের কাছে পৌঁছেছে তখন আমি যা বলতে চাই সাহসের সঙ্গে সবকিছুই বলেছি। এক ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি দিয়ে এক সাংবাদিককে ৮০ বছর বয়সী ফ্রান্সিস একটি ল্যাটিন ফ্রেজ ‘ইন্টেলিজেন্টি পাউকা’ বলে তার জবাব শেষ করেন। এই প্রবচনের অর্থ হলো- বুজদারের জন্য ইশারাই যথেষ্ট। তিনি দেশটির নেতাদের সঙ্গে সংলাপ ভেস্তে যাওয়ার ঝুঁকি নেননি এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে, তিনি সংলাপ প্রক্রিয়াকে ঝুঁকিতে না ফেলেই দেশটির বেসামরিক ও সামরিক উভয় নেতৃবৃন্দের কাছেই তার বার্তা পৌঁছে দিতে সমর্থ হয়েছেন।
পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ‘আমি যদি শব্দটি ব্যবহার করতাম, তাহলে আমার জন্য দরজা বন্ধ হয়ে যেতো… (কিন্তু) আমি এ ব্যাপারে যা ভেবেছি তা ইতোমধ্যে ভালো করেই জানা হয়ে গেছে। পোপ উল্লেখ করেন যে, তিনি বিভিন্ন সময় ভ্যাটিকান থেকে রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করেছেন। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বার্তাটি ঠিক মতো পৌঁছে দেয়া, একবারে একটি বিষয়ে কথা বলা এবং অপর পক্ষের জবাব শোনা। প্রকাশ্য বক্তৃতায় আমি পরিস্থিতি তুলে ধরেছি, অধিকারের বিষয়গুলো সামনে এনেছি; নাগরিকত্বের অধিকারের কথা বলেছি, কাউকেই বাদ দেওয়া উচিৎ নয়। এটা করতে হয়েছে, যাতে একান্ত বৈঠকে আমি আরও কিছু বলার সুযোগ পাই।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার প্রধানত মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে নিজস্ব পরিচয়ধারী জাতিগোষ্ঠি হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। বরং বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী বলে মনে করে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে ইঙ্গিত মেলে যে, মিয়ানমারের রোমান ক্যাথলিক চার্চ সফরের আগেভাগেই পোপকে তার বক্তৃতায় রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়েছিল। তাদের আশঙ্কা ছিল, পোপের মুখ থেকে ওই শব্দটি এলে মিয়ানমারের খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।