মাদক-জুয়ার বিরুদ্ধে বগুড়ার তিন ওসি’র যুদ্ধ ঘোষনা
বগুড়া প্রতিনিধি, এম নজরুল ইসলাম, ২৫ এপ্রিল, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : মাদক, জুয়া, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজসহ অপরাধীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন বগুড়ার তিন থানার ওসি। জেলার নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুর ও কাহালু উপজেলার মাদক-জুয়া নির্মূলে পুলিশের কঠোরতা চোখে পড়ারমত। বন্ধ হয়ে গেছে ছোট-বড় জুয়ার আসর, মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সড়ক মহাসড়কে ডাকাতি বন্ধে পুলিশের টহলও জোরদার করা হয়েছে। টহল জোরদার করার পাশাপাশি ছিনতাইকারীদের খুঁজছে পুলিশ।
বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. আলী আশরাফ ভুঞা’র কঠোরতায় জেলায় কমেছে ছিনতাই প্রবনতা। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন তিনি। ছিনতাইকারীদের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন পুলিশ সুপার। এবার বগুড়ার মাটিতে ছিনতাইকারীদের ঠাঁই নেই। ছিনতাইকারীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে পুলিশ। বর্তমানে মাদক ও ছিনতাইকারীদের আতঙ্কের নাম পুলিশ সুপার আলী আশরাফ। সন্ত্রাস, মাদক, জুয়াসহ সকল ধরনের অপরাধ নিমূল করতে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও জনসাধারনের সাথে মতবিনিময় চলমান রয়েছে। পুলিশ সুপারের কঠোর নির্দেশেই জেলার প্রতিটি থানার ওসি কঠোর হয়ে উঠেছেন। অপরাধী যে দলেরই হোক, যতবড় ক্ষমতাধরই হোক, কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, জুয়া-মাদক বিরোধী অভিযানে সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছেন নন্দীগ্রাম থানার ওসি নাসির উদ্দিন। ছিনতাই ও ডাকাতি প্রবন এলাকায় থানা পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের কঠোরতায় বন্ধ হয়ে গেছে সকল জুয়ার আসর। এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। অপরাধীদের আতঙ্ক এখন ওসি নাসির।
সম্প্রতি কয়েকটি অভিযানে থানা পুলিশের জালে ধরা পড়েছে কুখ্যাত কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী। তারা হলো- উপজেলার রনবাঘার আব্দুর রউফ (৩৮), পৌর এলাকার হিন্দুপাড়ার সঞ্জয় কুমার মহন্ত (২৪), গিরেন চন্দ্র (৫০) ও পিয়াস কুমার (২৫), ডুবাতেঘর গ্রামের রেজাউল করিম (২০), খালিদ হাসান মিলু (২১), ভাটগ্রামের জাহিদুল ইসলাম (৩৫), রায়হান আলী (৩৫), ভরতেতুলিয়ার সোহাগ (২০), সিংজানী গ্রামের মতি সুন্দরী (৩৬) ও বাশবাড়িয়া দিঘীরপাড় গ্রামের আফতাব আলী (৫৫)। অপরাধী যেই হোক, কাউকেই ছাড় দিচ্ছেন না তিনি।
তবে নন্দীগ্রাম সদর ইউনিয়নের কদমা গ্রামের কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী মাফু’র ঘনিষ্ট হলেন স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক (কথিত) নাজমুল হুদা সরকার। একাধিকবার এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও সেদিকে নজর দেয়নি পুলিশ। নাজমুলের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যতা চোখে পড়ারমত। এছাড়া পৌর শহরের কচুগাড়ির ইয়াবা ব্যবসায়ী মান্নানের সাথেও এই নাজমুলের সখ্যতা রয়েছে। আলোচিত মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে কতিপয় কিছু সাংবাদিকের সখ্যতা থাকায় পুলিশের অভিযানে খবর আগেই পৌছে যায়। কথিত সাংবাদিকেরা থানা বা থানার আশপাশে বসে পুলিশের অভিযানের খবর নেয়ার চেষ্টা করে। যেকারণে পুলিশের অনেক অভিযানই ভেস্তে যায়।
অন্যদিকে, মাদক, ছিনতাই, ডাকাতি, সন্ত্রাসী দমনে কঠোর হয়ে উঠেছেন জেলার শাজাহানপুর থানার ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম। অপরাধীদের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। কাউকেই ছাড় নেই। মাদক বিরোধী অভিযানে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে সক্ষম হয়েছে থানা পুলিশ। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- তালিকাভুক্ত মাদক সম্রাট রবিউল ইসলাম ভোট (৫০) সহ উপজেলার সুজাবাদ মধ্যপাড়ার ইয়াবা নজরুল (৪৫), ডেমাজানী উত্তরপাড়ার বজলু (৪২), সাজাপুর আকন্দপাড়ার শরিফুল ইসলাম (৩০), তালিকাভুক্ত মাদক সম্রাট রবিউল ইসলাম ভোট(৫০) ও বড়পাথার গ্রামের তৌফিক (২৫)।
শাজাহানপুরকে মাদকমুক্ত করতে নিরলসভাবে কাজ করছে থানা পুলিশ। তবে মাঝেমধ্যে পুলিশের কাছ থেকে সুবিধা নেয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ঘনিষ্ট কিছু কথিত সাংবাদিক থানা পুলিশের বিরুদ্ধে কাল্পনিক এবং অসত্য তথ্যে বিভিন্ন অনলাইন ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করে থাকে।
এদিকে, কাহালু থানার ওসি শওকত কবিরের কঠোরতায় কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের জালে ধরা পড়েছে। উপজেলার বড়বড় মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করার পর থেকে এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের চোখে পড়েনা বললেই চলে। পুলিশের অভিযানে গ্রেফতারকৃত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা হলো- উপজেলার ভালতা এলাকার শাহজাহান (৫৩), কালাই ঘনপাড়ার মনোয়ারা (৩৮), বকুল সরদার (৪০), ফটো সরদার (২৫), জামগ্রাম মধ্যপাড়ার আব্দুল করিম (৩২), আব্দুল মজিদ (২৫), পানাই গ্রামের মজনু মিয়া (৪৫), পৌর এলাকার সাঘাতিয়ার আব্দুল বাকী (৪৫), আবেদা বেগম (৩৮) এবং অমেদা খাতুন (৪১)। কাহালু থানার পুলিশের প্রতি সাধারণ জনতার আস্থা ফিরেছে। পুলিশের অভিযানে কমেছে মাদক প্রবনতা।
এপ্রসঙ্গে বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বলেন, আমি যতদিন বগুড়ায় দায়িত্ব পালন করবো, ততোদিন মাদকের বিরুদ্ধে আমার সর্বচ্চো অবস্থান থাকবে। মাদকের বিষয়ে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না।