ভালবাসা দিবসে থাকে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা
নিউজ ডেস্ক, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : ফুলের রঙে স্বপ্ন রাঙ্গাতে ব্যস্ত সময় পার করছে ফুলচাষীরা। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মার্চ মাস এলেই এ ফুলচাষি ও ফুলকর্মীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বিভিন্ন জাতীয় উৎসবে এ এলাকায় উৎপাদিত ফুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। চলতি মাসেই রয়েছে তরুণ তরুণীদের প্রাণের উৎসব বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এছাড়া রয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস। এসব দিবসের বাড়তি চাহিদা মিটাতে ব্যস্ত সময় পার করে ফুলচাষীরা। চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহ জেলায় ২০৪ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। গেল বছর এ জেলায় চাষ হয়েছিল ২৪৫ হেক্টর। সব থেকে বেশি ফুলের চাষ হয় জেলা সদরের গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে।
যে কারনে এ এলাকাটি অনেকের কাছে ফুলনগরী বলে পরিচিত। ১৯৯১ সালে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সৌখিন কৃষক ছব্দুল শেখ সর্বপ্রথম ফুল চাষ করেন। তিনি ওই বছর মাত্র ১৭ শতক জমিতে ফুল চাষ করে ৩৪ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেন। এরপর থেকে এলাকায় বিভিন্ন জাতের ফুল চাষের বিস্তার লাভ করতে থাকে। বর্তমানে জেলার হাজার হাজার কৃষক ফুলচাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় মাঠের পর মাঠে চাষ করা হয়েছে লিলিয়াম, গাঁদা, রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ ও গার্ডিয়াসসহ নানা জাতের ফুল। এসব ফুল ক্ষেত থেকে সংগ্রহ ও মালা গাথা থেকে শুরু করে বিক্রি করা পর্যন্ত এই এলাকার মেয়েরা কাজ করে থাকে।
ফলে পুরুষের পাশাপাশি মেয়েদেরও কর্মসংস্থান হচ্ছে। জেলার শত শত মেয়েরা সারা বছরই ফুল তোলার কাজ করে। প্রতি ঝোপা ফুল তুলে গেঁথে দিলে ১২ টাকা হয়। প্রতিদিন একজন ফুলকর্মী ১৫ থেকে ১৭ ঝোপা ফুল তুলতে পারে। ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ফুলচাষী জিল্লুর রহমান জানান, আমি প্রতি বছরই ফুল চাষ করি। এবছর আমি ১৬ কাঠা জমিতে ফুল চাষ করেছি। যা খরচ হয়েছে ১৭ হাজার টাকা। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ৫ হাজার টাকা ফুল বিক্রি করেছি। আসছে বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা ফুল বিক্রি করবো বলে আশা করছি। মার্চ মাসের শেষ পর্যন্ত এই ফুল বিক্রি করতে পারবে বলেও যোগ করেন এই ফুলচাষী।
একই গ্রামের বড় ফুলচাষী টিপু সুলতান জানান, ২০১৭ সালে ৫৫ লাখ টাকা খরচ করে ৫ বিঘা জমিতে জারবেরা ফুলের চাষ করেছিলাম। এছাড়া আমার লিলিয়াম ও গোলাপের চাষ রয়েছে। ২০১৯ সালেল ডিসেম্বর প্রায় কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছি। তার আশা আসছে বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবো। বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জের মেইন বাসষ্ট্যান্ডে দেখা যায়, দুপুর থেকে শত শত কৃষক তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত ফুল ভ্যান, স্কুটার ও ইঞ্জিন চালিত বিভিন্ন পরিবহন যোগে নিয়ে আসছেন। বেলা গড়ানোর সাথে সাথে বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জ মেইন বাস ষ্ট্যান্ড ভরে যায় লাল, সাদা আর হলুদ ফুলে ফুলে।
সারাদেশের আড়তগুলোতে ফুল পাঠাতে আসা একাধিক ফুলচাষীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, সারা বছরই তারা ফুল বিক্রি করে থাকেন। তবে প্রতিবছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষের দিন, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ভালবাসা দিবস প্রভৃতি দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এ সময় দামও থাকে ভালো। কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর এলাকার ফুলচাষী সরোয়ার জানান, আমাদের বাগানে তিন বিঘা জমিতে জারবেরা ফুল রয়েছে। এরমধ্যে কালার আছে প্রায় ১১ প্রকার। সামনে ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি তাই এখন গাছের বাড়তি পরিচর্যা করছি। ছোট ঘাস পরিষ্কার করে নিয়মিত পানি সেচ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবছর এ সময় একটি ফুল বিক্রি হয় গড়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা দ্বরে।
অন্যান্য ফুল চাষীরা জানান, এখন যেখানে গোলাপ প্রতি পিস বিক্রি হয় গড়ে ৪ থেকে ৫ টাকা, ভালোবাসা দিবসও একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে তা বিক্রি হবে গড়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে। গাদা ফুলের ঝোপা বিক্রি হবে গড়ে ২৫০ থেকে ৩শ’ টাকা দরে। অন্য সময় গাঁদা ফুল বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। সদর উপজেলার গান্না বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দাউদ হোসেন জানান, এক সপ্তাহ পর থেকেই ফুলের চাহিদা বাড়বে কয়েকগুন। আমরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। এসময় অন্তত কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে। এতে চাষী ব্যবসায়ী উভয়ই লাভবান হবে। কিন্তু ফেরী ঘাটে জ্যামের কারনে ঠিক সময় ফুল পাঠাতে না পারায় নষ্ট হয়ে যায়। প্রশাসন ফুলবাহী গাড়ীকে একটু আগে পারাপারের ব্যবস্থা করে দিলে অনেক সুবিধা হবে বলে যোগ করেন।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিপ্তরের উপ-পরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, ফেরীঘাটে ফুলবাহী গাড়ীকে আগে পারাপারের বিষয়ে জেলার প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে ইতিবাচক আশ্বাস মিলেছে। তিনি আরো জানান, ঝিনাইদহ মাটি ও আবহাওয়া ফুলচাষের জন্য দারুন উপযোগী। এ বছর জেলা প্রায় ২০৪ হেক্টর জমিতে লিলিয়াম, গ্লাডিয়াস, রজনীগন্ধ্যা গোলাপ, গাঁদাসহ নানা জাতের ফুল। তবে, দিনে দিনে ফুলচাষ দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখলেও দ্রুত পঁচনশীল এ সম্পদ সংরক্ষনের জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে যখন বাজারে যোগান বৃদ্ধির কারনে দাম কমে যায় তখন লোকসানে বিক্রি করা ছাড়া উপায় থাকেনা ফুলচাষীদের। ফলে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন।